হরতালে আক্রান্ত দেশ
৩০ অক্টোবর ২০১৩বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের তিন দিনের হরতাল শুরু হয় রবিবার৷ যা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷ হরতালে রবিবার পাঁচজন, সোমবার পাঁচজন এবং মঙ্গলবার একজন নিহত হয়েছেন৷ এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, বাস-ট্রেনে আগুন, ভাঙচুর, বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, বিচারক, মন্ত্রী, প্রসিকিউটর, পুলিশ কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ শেষ দিনে রাজধানীতে এক বোমা হামলায় একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ও নয় বছরের একটি শিশু গুরুতরভাবে আহত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, এই হরতালে আক্রান্ত হয়েছেন গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরাও৷ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ১০ জন সংবাদকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে৷ বোমা ছোড়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম ভবনে৷ আর সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়ি ‘টার্গেট' করে করা হয়েছে আক্রমণ৷
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের ওপর এই হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত৷ তিনি বলেন, টার্গেট করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, হচ্ছে৷ তাই সরকারের কাছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে৷ তাঁদের নিরাপত্তা না দেয়া হলে তাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন৷
একই সঙ্গে বিরোধী দলের কাছেও একই আবেদন জানান ওমর ফারুক৷ বলেন, বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির খবর সংগ্রহেরে সময় সাংবাদিকরা যেন আক্রান্ত না হন৷ তাঁর মতে, সাংবাদিকরা আক্রান্ত হয় – এমন কোনো কথিত আন্দোলন কর্মসূচির খবর সংগ্রহ প্রয়োজনে বয়কট করা হবে৷ ওমর ফারুক বলেন, আগামীতে এই হামলা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন সাংবাদিকরা৷
ওদিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির এই সহিংস রূপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জীবন যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ৷ টার্গেট করা হচ্ছে সাংবাদিকদের৷ এটা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না৷ এর দায়-দায়িত্ব রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রীদের নিতেই হবে৷
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মনে রাখা উচিত যে হিংসাত্মক পথে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না৷ গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেয়া আর রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি এক নয়৷ ক্ষমতার লড়াইকে গণতন্ত্রের নামে চালিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তাই তাঁর কথায়, এই সহিংসতায় গণতন্ত্র কখনোই লাভবান হবে না৷ লাভবান হবে অগণতান্ত্রিক শক্তি৷ লাভবান হবে গণতন্ত্রের শত্রুরা৷ তাই এই পথ পরিহার করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক আচরণের অনুরোধ জানান৷ তাঁর মতে, কোনো রাজনৈতিক অধিকারই মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার অধিকার দেয় না৷