হল্যাণ্ডে যাজকদের হাতে হাজার হাজার শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার
২৫ ডিসেম্বর ২০১১ক্যাথলিক যাজকদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের নানা খবর ইদানিং মিডিয়ায় দেখা গেছে ব্যাপকভাবে৷ জার্মানিতেও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে৷ অথচ এমন ঘটনা আদৌ ঘটার কথা নয়৷ কেননা ধর্মীয় ব্যক্তিরা হবেন শিশুদের রক্ষাকর্তা, এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার শিশু এধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷
হল্যাণ্ডের একটি স্বাধীন কমিশন সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তারা বলছে ১৯৪৫ থেকে ২০১০ - এই ৬৫ বছরে দেশটির ক্যাথলিক গির্জাগুলোতে হাজার হাজার শিশু যৌন পীড়নের শিকার হয়েছে৷ নির্যাতনের মাত্রা কারও ক্ষেত্রে বেশি আর কারও ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বলে ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷ প্রতিবেদনে প্রায় আটশো জনের নাম দেয়া হয়েছে যারা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ এদের মধ্যে ১০৫ জন এখনো বেঁচে আছেন৷
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ভিম ডিটমান ছয় সদস্যের ঐ কমিশনের প্রধান ছিলেন৷ গত বছর গঠিত এই কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিল মোট ছয়জন৷ এর মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাবেক বিচারক এবং মনোবিজ্ঞানী৷ চল্লিশোর্ধ্ব প্রায় ৩৪ হাজার ডাচ নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডিটমান বলেন, আমরা যে সংখ্যাটা জানতে পেরেছি সেটা অনেক বড়৷ এটা এখন সরকারি কৌঁসুলিদের বিষয় যে তারা নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন কিনা৷ কমিশন প্রধান বলেন, সাধারণ শারীরিক ছোঁয়া থেকে শুরু যৌনকর্মের চরম পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছেন অপরাধীরা৷
তিনি বলেন, গির্জাতে এধরণের ঘটনা যে ঘটে সেটা জানা গিয়েছিল চল্লিশের দশকেই৷ সেসময় বিষয়টার কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল৷ কিন্তু কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করা যায়নি৷
ডিটমান বলেন, ষাটের দশক পর্যন্ত প্রকাশ্যে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করাকে ‘ট্যাবু' হিসেবে ধরা হতো৷ এছাড়া গির্জাগুলোতে অন্যরকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকার কারণেও শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি৷
তবে কুমারব্রত গ্রহণ করে যাজক হওয়া ও যৌন নির্যাতনের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক আছে কি না সে ব্যাপারে কমিশন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি৷ তবে কমিশন মনে করে, কুমারব্রত গ্রহণের কারণে যাজকদের মধ্যে যৌন চাহিদা তৈরি হওয়ায় তাদের মধ্যে এই ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়৷
কমিশন প্রধান বলেন, ক্যাথলিকদের পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে পড়ুয়ারা নির্যাতিত হয় বেশি৷ তবে এ ধরণের সমস্যা নন-ক্যাথলিক আবাসিক স্কুলগুলোতেও বিদ্যমান বলে কমিশনের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে৷
এদিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হল্যান্ডের বিশপরা তাদের ‘লজ্জা ও দু:খ' প্রকাশ করেছেন৷ তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং যাজকদের প্রশিক্ষণের সময় বিষয়টা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷
কিন্তু যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এ ব্যাপারে গঠিত একটি কমিটি গত জুনে নির্যাতনের মাত্রা বিবেচনা করে এক লাখ ইউরো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে৷
তবে শুধু হল্যাণ্ড নয়, ধর্মীয় যাজকদের হাতে শিশুদের যৌন নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে আরও অনেক দেশে৷ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া৷
২০০৪ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ থেকে ২০০২ - এই ৫২ বছরে অ্যামেরিকায় প্রায় ১১ হাজার শিশু যাজকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ প্রায় সাড়ে চার হাজার যাজক এসব অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷
এছাড়া ইউরোপের সবচেয়ে গোঁড়া ক্যাথলিক রাষ্ট্র আয়ারল্যাণ্ডেও এই ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ সেখানকার প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট৷ এজন্য তিনি বিশপদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক