1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হল্যাণ্ডে হাজারো শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার

২৫ ডিসেম্বর ২০১১

ধর্মীয় ব্যক্তিদের কাছে শিশুরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকবে, এটাই ধরে নেয়া হয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত কিছু ঘটনা প্রমাণ করছে এই ধারণা ঠিক নয়৷

https://p.dw.com/p/13Z26
জার্মানিতে প্রতিবাদছবি: picture alliance/dpa

ক্যাথলিক যাজকদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের নানা খবর ইদানিং মিডিয়ায় দেখা গেছে ব্যাপকভাবে৷ জার্মানিতেও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে৷ অথচ এমন ঘটনা আদৌ ঘটার কথা নয়৷ কেননা ধর্মীয় ব্যক্তিরা হবেন শিশুদের রক্ষাকর্তা, এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার শিশু এধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷

হল্যাণ্ডের একটি স্বাধীন কমিশন সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তারা বলছে ১৯৪৫ থেকে ২০১০ - এই ৬৫ বছরে দেশটির ক্যাথলিক গির্জাগুলোতে হাজার হাজার শিশু যৌন পীড়নের শিকার হয়েছে৷ নির্যাতনের মাত্রা কারও ক্ষেত্রে বেশি আর কারও ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বলে ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷ প্রতিবেদনে প্রায় আটশো জনের নাম দেয়া হয়েছে যারা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ এদের মধ্যে ১০৫ জন এখনো বেঁচে আছেন৷

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ভিম ডিটমান ছয় সদস্যের ঐ কমিশনের প্রধান ছিলেন৷ গত বছর গঠিত এই কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিল মোট ছয়জন৷ এর মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাবেক বিচারক এবং মনোবিজ্ঞানী৷ চল্লিশোর্ধ্ব প্রায় ৩৪ হাজার ডাচ নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷

প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডিটমান বলেন, আমরা যে সংখ্যাটা জানতে পেরেছি সেটা অনেক বড়৷ এটা এখন সরকারি কৌঁসুলিদের বিষয় যে তারা নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন কিনা৷ কমিশন প্রধান বলেন, সাধারণ শারীরিক ছোঁয়া থেকে শুরু যৌনকর্মের চরম পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছেন অপরাধীরা৷

তিনি বলেন, গির্জাতে এধরণের ঘটনা যে ঘটে সেটা জানা গিয়েছিল চল্লিশের দশকেই৷ সেসময় বিষয়টার কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল৷ কিন্তু কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করা যায়নি৷

ডিটমান বলেন, ষাটের দশক পর্যন্ত প্রকাশ্যে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করাকে ‘ট্যাবু’ হিসেবে ধরা হতো৷ এছাড়া গির্জাগুলোতে অন্যরকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকার কারণেও শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি৷

তবে কুমারব্রত গ্রহণ করে যাজক হওয়া ও যৌন নির্যাতনের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক আছে কি না সে ব্যাপারে কমিশন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি৷ তবে কমিশন মনে করে, কুমারব্রত গ্রহণের কারণে যাজকদের মধ্যে যৌন চাহিদা তৈরি হওয়ায় তাদের মধ্যে এই ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়৷

কমিশন প্রধান বলেন, ক্যাথলিকদের পরিচালিত বোর্ডিং স্কুলে পড়ুয়ারা নির্যাতিত হয় বেশি৷ তবে এ ধরণের সমস্যা নন-ক্যাথলিক আবাসিক স্কুলগুলোতেও বিদ্যমান বলে কমিশনের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে৷

এদিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হল্যান্ডের বিশপরা তাদের ‘লজ্জা ও দু:খ’ প্রকাশ করেছেন৷ তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং যাজকদের প্রশিক্ষণের সময় বিষয়টা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷

কিন্তু যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এ ব্যাপারে গঠিত একটি কমিটি গত জুনে নির্যাতনের মাত্রা বিবেচনা করে এক লাখ ইউরো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে৷

তবে শুধু হল্যাণ্ড নয়, ধর্মীয় যাজকদের হাতে শিশুদের যৌন নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে আরও অনেক দেশে৷ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া৷

২০০৪ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ থেকে ২০০২ - এই ৫২ বছরে অ্যামেরিকায় প্রায় ১১ হাজার শিশু যাজকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ প্রায় সাড়ে চার হাজার যাজক এসব অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷

এছাড়া ইউরোপের সবচেয়ে গোঁড়া ক্যাথলিক রাষ্ট্র আয়ারল্যাণ্ডেও এই ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ সেখানকার প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট৷ এজন্য তিনি বিশপদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

Missbrauch in der Kirche Flash-Galerie
গির্জার অনেক কাজের বিরুদ্ধেই মানুষের ক্ষোভ রয়েছেছবি: AP
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য