হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
২৬ ডিসেম্বর ২০১১হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নাম রুপরেশ্ট কার্ল্স ইউনিভার্সিটি, হাইডেলব্যার্গ৷ মাত্র তিনটি অনুষদ নিয়ে শুরু হয়েছিল তার পথ চলা - আইন, ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শন৷ এখন প্রায় ১০০টিরও বেশি বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিচ্ছে হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়৷ পড়াশোনা করছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী৷ বহু বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে এখানে৷
সন্ধ্যা ছ'টা৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ‘মেনজা' একেবারে ভরা৷ কারণ অনেকের কাছে ‘মেনজা' হল মিটিং পয়েন্ট৷ সব অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদেরই এখানে দেখা যাবে৷ এখানে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার পর সবই আবার একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ে৷ সন্ধ্যায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া৷ অনেকগুলো বড় টেবিল রয়েছে মেনজায়৷ সেখানে একটি টেবিলে বসে আছে চীনের ছাত্রী লু ইয়ান৷ এক বছরের জন্য এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে লু এসেছেন জার্মানিতে৷ লু ইয়ান জানান, ‘‘জার্মানির সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় হল হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়৷ বিশ্বব্যাপী পরিচিত৷ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এক বছরের জন্য হাইডেলব্যার্গে এসেছি – চীনে এটা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়৷ সেখানে সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পরিচিত৷''
এলিট ইউনিভার্সিটি হিসেবে স্বীকৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়
হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি পাঁচটি ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে একজন বিদেশি৷ হাইডেলব্যার্গ হচ্ছে একেবারে স্টুডেন্ট সিটি৷ পাহাড়ের ওপর প্রাচীন প্রাসাদ তার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান৷ আর এই প্রাসাদের কোল ঘেঁষে শহরের প্রাচীন অংশ৷ সেখানে অসংখ্য ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, বার এবং ডিস্কো৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যা বিভাগ এবং সাধারণ বিজ্ঞান বিভাগের সুনাম উল্লেখ করবার মত৷ জার্মানির অন্যতম এলিট ইউনিভার্সিটি হিসেবে স্বীকৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়৷ নানা সময়ে বহু নামি পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, দার্শনিকের উপস্থিতি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি৷
তবে শুধু এশিয়া নয় অ্যামেরিকাতেও হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয় বেশ পরিচিত৷ জার্মান ছাত্র ডানিয়েল ইয়ুটে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের একটি অংশ কাটিয়েছে অ্যামেরিকার হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ডানিয়েল জানাল, অ্যামেরিকায় হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয় কারো অপরিচিত নয়৷ ডানিয়েল বললেন, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি – হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সবাই শুনেছে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঐতিহ্যের কথাও সবাই শুনেছে৷''
ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট
হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এই ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন ভাষা শেখানো হয়৷ যেমন বাংলা, হিন্দি, উর্দু, তামিল, সংস্কৃত, দারি, ফার্সি সহ আরো বেশ কিছু ভাষা৷ প্রফেসর হান্স হারডার দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়াচ্ছেন দীর্ঘদিন৷ তবে এর পাশাপাশি তিনি হিন্দি, উর্দু এবং মারাঠিও পড়ান৷ ইন্সটিটিউট প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ৫০ বছর আগে অর্থাৎ আগামী বছর আমরা এই ইন্সটিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি পালন করবো৷ সেই উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে৷ ৫০ বছর আগে বাডেন ভূর্টেমব্যার্গ রাজ্যের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পর্কের শুরু৷ বিশেষ করে ভারতবর্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত তখন থেকেই৷ সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলোও ছিল৷ তখন ঠিক করা হয়েছিল যে এখানেও ‘এশিয়া স্টাডিজ'-এর মডেলে একটি সংস্থান থাকা উচিত৷ বিশেষ করে যারা দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে ভাল করে জানতে চায় তারা সেখানে যেতে পারবে৷''
কারা আসছে বা কোন কোন দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে এই ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন ধরণের ভাষা শিখতে? প্রফেসর হারডার আরো জানালেন, ‘‘বি.এ. লেভেলে অর্থাৎ গ্রাজুয়েশন কোর্সে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী জার্মানি থেকেই আসে – এরা জার্মান৷ মাস্টার্স এবং পিএইচডির জন্য যারা আগ্রহ দেখায় তারা বেশির ভাগই বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী৷ এমনকি বাংলাদেশ এবং ভারত থেকেও ছাত্র-ছাত্রী এখানে এই ইন্সটিটিউটে আসে পিএইচডি করার জন্য৷ তবে পিএইচডি যে জার্মান ভাষাতেই করতে হবে এমন কোন কথা নেই৷ ইংরেজি ভাষাতেও এই ইন্সটিটিউটের অধীনে ডক্টরেট করা সম্ভব৷ তাই অনেক বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীই আগ্রহ দেখায় এখানে আসতে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক