হাইড্রোজেন বোমা বনাম আণবিক বোমা
বিধ্বংসী হাইড্রোজেন বোমা বানানোয় অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া৷ কিন্তু আণবিক বোমার সাথে এই বোমার পার্থক্য আসলে কী? ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই দুই অস্ত্রের পার্থক্য দেখে নিন এক নজরে৷
ফিশন আর ফিউশন
আণবিক বোমা কাজ করে ফিশনের মাধ্যমে৷ এই বোমা বিস্ফোরিত হলে, তেজস্ক্রিয় অণুগুলো ভাঙতে থাকে৷ অণু যত ভাঙতে থাকে, তত বেশি বিধ্বংসী হয় বোমা৷ পারমাণবিক বিদ্যুৎচুল্লিতে এ ধরনের বিক্রিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ হাইড্রোজেন বোমা এর চেয়েও মারাত্মক৷ এতে ব্যবহার করা হয় ফিউশন প্রক্রিয়া৷ এর মাধ্যমে একাধিক অণুকে জোড়া লেগে একটি অণু তৈরি করে৷ এই প্রক্রিয়াতেই সূর্য আলো ও তাপ বিকিরণ করে৷
বিস্ফোরণ প্রক্রিয়া
দুই বোমার বিস্ফোরণ প্রক্রিয়াতেও আছে পার্থক্য৷ প্লুটোনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থের ওপরই নির্ভর করে এর সম্পূর্ণ শক্তি৷ তবে হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণে আছে কয়েকটি ধাপ৷ প্রথম বিস্ফোরণে আণবিক বোমার মতো মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তাপ তৈরি করা হয়৷ এই শক্তি আবার ব্যবহার করা হয় অণুগুলোর ফিউশনে৷ ফলে আণবিক বোমার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তি উৎপাদন হয়৷
আকার
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাভাবিকের তুলনায় উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ বোমাটি একটু আলাদা৷ সাধারণত আণবিক বোমাগুলো কোণ আকৃতির হলেও উত্তর কোরিয়ার এই হাইড্রোজেন বোমা আকারে বড় এবং বালিঘড়ির আকৃতির৷ ফলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই বোমাটিতে ফিশন ও ফিউশন – দু’ধরনের বিক্রিয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়তে থাকতে পারে৷
কোনটা কত শক্তিশালী?
আণবিক বোমার চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা৷ আণবিক বোমার ক্ষমতা তুলনা করা হয় কিলোটন বা এক হাজার টন টিএনটির ধ্বংসক্ষমতার সাথে৷ অন্যদিকে, হাইড্রোজেন বোমার তুলনা করা হয় মেগাটন, অর্থাৎ ১০ লাখ টন টিএনটির ক্ষমতার সাথে৷
যুদ্ধে ব্যবহার
বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও যুদ্ধে ব্যবহারের উদাহরণ খুবই কম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে দুই শহর মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখের মতো মানুষ নিহত হয়৷ তবে এখনও পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে ব্যবহার হয়নি তার চেয়েও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা৷