হাঙ্গরের মতো ক্ষুধার্ত পৃথিবী, ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ভূমি
৮ আগস্ট ২০১৯তাঁরা বলছেন, খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনাটা গোটা বিশ্বের মানুষের জীবন-জীবিকা এবং স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে৷ বিশ্বের জনবসতি বাড়ছে৷ বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা৷ সময়ের সঙ্গে এই চাহিদা আরো বাড়বে৷ কিন্তু পৃথিবীর সম্পদের পরিমাণ সীমিত, ভূমিও ব্যতিক্রম নয়৷ তাই সম্পদের অপব্যবহার রোধ এবং বনভূমি উজাড় করা বন্ধের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি৷ ৫২টি দেশের ১০৩জন বিশেষজ্ঞ গত দুই বছর ধরে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন৷
এই প্রতিবেদনে সুন্দর আগামীর ছবি আঁকেননি বিশেষজ্ঞরা৷ বরং তাঁরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন যদি প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা ছাড়ায় আবাদি জমি মরুভূমিতে পরিণত হবে৷ ভেঙে পড়বে অবকাঠামো৷ খরা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঝুঁকিতে ফেলবে খাদ্য ব্যবস্থাকে৷
তবে, এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছে না আইপিসিসি৷ বলা হচ্ছে, প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো মেনে চললে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও ভূমির ওপর অতিরিক্ত চাপ মোকাবিলা করেও সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব৷
প্রতিবেদনটির মূল অনুসন্ধান:
১. বিশ্বে ২৩ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গত হয় ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে৷ বাড়ার কারণ আবাদি জমির নামে বনভূমি উজাড় করে ফেলা৷ গবাদি পশু আর ধান খেতের কারণে বাড়ছে মিথেন৷
২. এভাবে ক্ষতিকর উপাদানগুলো নির্গত হতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে৷ বৈরি আবহাওয়ায় ভেঙে পড়তে পারে খাদ্য শৃঙ্খল৷ পুষ্টির অভাবে কমে যাবে কৃষিজ পণ্যের ফলন৷
৩. ১.৫ শতাংশ উষ্ণতার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ পানি বঞ্চিত হবে এবং শুরু হবে মরুকরুন৷ আর তা যদি ২ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়, তবে একই সময়ের মধ্যে এই পরিণতি বরণ করবে ২২কোটি মানুষ৷
৪. বিশ্বের সকলে সম্মিলিতভাবে ভূমির স্থিতিশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে মাটির উর্বরতা আর বনায়ন প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরায় ভূমিকা রাখতে পারবে৷
ভয়ঙ্কর পরিণতি
আইপিসিসি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসলের উৎপাদন যেমন কমবে৷ ঠিক তেমনি বাড়বে খাদ্যের দাম৷ ২০৫০ সাল নাগাদ খাদ্যশস্যের দাম ২৩ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে৷ কার্বন নিঃসরণ এভাবে চলতে থাকলে, পরবর্তী ৬০ বছরে অ্যামেরিকার ভূট্টা ও সয়াবিনের উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমে যেতে পারে৷
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তাঁদের এক প্রতিবেদনেও ‘প্রধান খাদ্য' উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে ইঙ্গিত করেছে৷ ভারতের দক্ষিণে ২০৩০ সালের মধ্যে চাল উৎপাদন ৫ শতাংশ কমে যাবে৷ পরবর্তী তিন দশকে সেটা ১৪ শতাংশে গিয়ে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
এছাড়াও আবহাওয়াতে আসছে পরবর্তন৷ বৈরি আবহাওয়ার খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও করছে৷ হিসেব বলছে এখনই উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময়
আইপিসিসি বলছে, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি৷ ঘুরে দাঁড়াতে এখনই৷ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বনভূমি উজাড় করা থামাতে হবে৷ নতুন এবং অনাবাদী ভূমিগুলোকে ফসল উপযোগী করতে হবে৷ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা যাবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে৷
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
আমরা কী খাই, কিভাবে খাই-সে বিষয়ে সচেতনতা থাকাটাও প্রয়োজন৷ ১২ প্রজাতির উদ্ভিদ আর পাঁচ প্রজাতির পশু থেকে বিশ্ব খাদ্য চাহিদার ৭৫ শতাংশ আসে৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, থালায় নিয়ে যখন কেউ খায়, তাঁর মনে রাখা উচিত এটি আকাশ থেকে আসেনি৷ এটি তৈরিরে শ্রম যেমন আছে তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদও আছে৷ সচেতনতাকে এই সংকট মোকাবিলা বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
ইরেন বানোস রুইৎজ/টিএম