হামবুর্গের আকাশে আলোকিত ড্রোনের ঝাঁক
৩০ জুন ২০২২হামবুর্গ শহরের এল্ব ফিলহারমোনি ভবনের পঞ্চম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে উড়ন্ত এক শিল্পকীর্তি নজর কেড়েছে৷ রাতের অন্ধকারে আকাশে ৩০০ ড্রোন অসাধারণ দৃশ্য রচনা করেছিল৷ তবে ‘আগন্তুক' ড্রোনের উপদ্রবে প্রায় আট লাখ ইউরো মূল্যের সেই আলোকসজ্জা যে পরের তিন রাত বাতিল করতে হবে, প্রথম রাতে দর্শকরা তা ভাবতেই পারেননি৷ এল্ব ফিলহারমোনির মহাপরিচালক ক্রিস্টফ লিবেন-সয়টার বলেন, ‘‘বাস্তব সংঘাত বা সংঘাতের আশঙ্কা দেখিয়ে দিচ্ছে, যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আবার নতুন করে ঢেলে সাজানো উচিত ছিল৷ কিন্তু তার জন্য আর সময় ছিল না৷ ফলে কর্তৃপক্ষের হাতে অনুষ্ঠান বাতিল করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না৷''
‘ব্রেকিং ওয়েভস' নামের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের স্রষ্টা নেদারল্যান্ডসের ‘ড্রিফট' নামের ডিজাইনার৷ কনসার্ট ভবনটির অবস্থান ও স্থাপত্যের ভিত্তিতে লোনেকে খরডাইন ও রাল্ফ নাউটা তাঁদের শিল্পকর্ম গড়ে তুলেছেন৷ রাল্ফ বলেন, ‘‘আমার কাছে ব্রেকিং ওয়েভসের প্রেরণা ভবনের ছাদের মতো৷ সেই জায়গার সঙ্গে আশেপাশের পানির সম্পর্কের মতো৷ আমাদের কাজের মধ্যে প্রকৃতি ও প্রযুক্তির সম্পর্কও দেখতে পাবেন৷''
স্টুডিও ড্রিফটের আরেক সৃষ্টা লোনেকে খরডাইন নিজেদেক সৃষ্টিকর্ম ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘ব্রেকিং ওয়েভসের আরেকটি অর্থ সাহস করে এমন কিছু করা, যা আগে কেউ কখনো করে দেখায় নি৷ একদিকে ভবন এবং অন্যদিকে পানি, সংগীত, আলোর তরঙ্গের মধ্যে সংযোগের একটা মুহূর্ত সৃষ্টি করাই লক্ষ্য৷ সেইসঙ্গে সব মানুষকেও সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চাই৷''
এই দুই স্রষ্টা উজ্জ্বল ড্রোনের মাধ্যমে পাখির ঝাঁকের নকল করে শিল্পসৃষ্টির অন্যতম পথিকৃৎ৷ যেমন ২০১৮ সালে অ্যামেরিকার নেভাদা রাজ্যের ব্ল্যাক রক মরুভূমিতে বার্নিং ম্যান উৎসবে তাঁরা এমন সৃষ্টি তুলে ধরেছিলেন৷ ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরও এমন সৃষ্টির সাক্ষী হয়েছিল৷ এমন কর্মযজ্ঞের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে লোনেকে খরডাইন বলেন, ‘‘একদিকে ইঞ্জিনিয়ার, অন্যদিকে প্রযুক্তিকে প্রকৃতির রূপ হিসেবে চালনা করা সব সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু ড্রিফটে আমাদের মিশনই হলো প্রযুক্তির সঙ্গে কাজ করে প্রকৃতিকে বোঝা৷ প্রকল্প ও কাজ অনুভব করা এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক৷ এমনকি না বুঝলেও আমাদের স্বাভাবিক ছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা প্রয়োজন৷''
হামবুর্গ শহরের আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস মিউজিয়ামে বর্তমানে স্টুডিও ড্রিফটের নিজস্ব এক প্রদর্শনী চলছে৷ সেখানে প্রদর্শিত ‘কাইনেটিক ভাস্কর্য'-গুলিতেও দুই স্রষ্টার মৌলিক বিষয় ফুটে উঠছে – অর্থাৎ মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ৷ ‘ইন টোয়েন্টি স্টেপস' নামের শিল্পকর্ম পাখির ওড়ার ভঙ্গির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ ‘ফ্র্যাজাইল ফিউচার থ্রি' খাঁটি ড্যান্ডেলিয়ন বীজ আলোকিত করে তোলে৷
এল্ব ফিলহার্মোনি ভবনটি দেখতে দেখতে হামবুর্গের প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ সুইজারল্যান্ডের তারকা স্থপতি সংস্থা হ্যারৎসোগ অ্যান্ড ডে মুরন সেটি ডিজাইন করেছে৷ সেখানে ড্রোনের সাহায্যে শিল্পসৃষ্টি সত্যি এক চ্যালেঞ্জ বটে৷ রাল্ফ নাউটা বলেন, ‘‘অপ্রত্যাশিত রেডিও সংকেত সব ভণ্ডুল করে দিতে পারে৷ কয়েকটি ড্রোন আকাশ থেকে পানিতে পড়ে যেতে পারে৷ এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এমন গোলমাল হতেই পারে৷''
সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো৷ প্রিমিয়ার শো-র আগে সংবেদনশীল ড্রোনগুলিকে ভালোভাবে পরীক্ষা ও যথাস্থানে আনা সত্ত্বেও অঘটন এড়ানো গেলো না৷
বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ হোক বা প্রযুক্তিগত সমস্যা, ড্রোন ভেঙে পড়ার ঘটনা এড়ানো যায় না৷ ড্রেস রিহার্সালের সময় ১৫টি ড্রোন পানিতে পড়েছে৷ প্রিমিয়ারের দিন অবশ্য সংখ্যাটি পাঁচে সীমিত ছিল৷ নিরাপত্তার খাতিরে ‘ব্রেকিং ওয়েভস'-এর বাকি শো বাতিল করতে হয়েছে৷ এল্ব ফিলহারমোনির মহাপরিচালক লিবেন-সয়টার বলেন, ‘‘হতাশার মাত্রা অবশ্যই খুব বেশি ছিল৷ তবে সৌভাগ্যবশত শো খুব ভালো হয়েছে৷ কিন্তু পরের দিনগুলিতেও আমরা হাজার হাজার দর্শক আশা করেছিলাম৷ নিজস্ব চার্টার করা জাহাজও দর্শকদের জন্য প্রস্তুত ছিল৷ কোনো জায়গা খালি ছিল না৷ এই শিল্পকীর্তি দেখতে গোটা ইউরোপ থেকে মানুষ আসার কথা ছিল৷''
‘ব্রেকিং ওয়েভস' মাত্র এক বার দেখা গেলেও সেটি সত্যি মনে ছাপ রেখে গেছে৷
ক্রিস্টিনে লেবার্ট/এসবি