‘শুধু বিবৃতিতেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকি'
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০গেল বুধবার রাত দশটার দিকে হানাও শহরের একটি শিশাবার ও পার্শ্ববর্তী ক্যাফেতে প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ করে ৪৩ বছর বয়সি বন্ধুকধারী৷ সেখানে বেশ কয়েকজন হতাহত হন৷ এরপর হামলাকারী সেই ঘটনাস্থল থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে একটি গাড়ি এবং স্পোর্টস বারেও হামলা চালায়৷ সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ সব মিলিয়ে দশ জন মারা যান৷ পরবর্তীতে হামলাকারী ও তার মা-কেও মৃত অবস্থায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ এই ঘটনার দু'দিন আগে জার্মান পুলিশ দেশটির ছয় রাজ্যে ১৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে৷ অভিযোগ রয়েছে, তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলিমদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন৷ তারা চেয়েছিলেন, জার্মানিতে একটি গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে৷ এসব প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে আবদাসসামাদ এল ইয়াজিদির সঙ্গে৷
ডয়চে ভেলে: হানাওয়ের ঘটনার পর জার্মানির মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আরো বেশি সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়েছে৷ দেশজুড়ে নিজেদের, পরিবারের, প্রার্থনালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে বলেছে৷ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে? জার্মানির মুসলিমরা কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন?
আবদাসসামাদ এল ইয়াজিদি: আমরা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে বারবার বলছি, আমাদের মসজিদগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরীক্ষা করুন এবং নিরাপত্তা দিন৷ জার্মানির মসজিদগুলোতে অনেক হামলা হয়েছে৷ দু'সপ্তাহ আগে চারটি হুমকির কথা জেনেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং এরপর সেই চারটি জায়গা খালি করা হয়েছে৷ তাই আমরা চাই, যেটি আমরা আগেও করেছি, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা - যেখানে অভিজ্ঞ বা পারদর্শীরা ভবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের কৌশলগুলো শেখাবেন৷ আমরা আমাদের আঞ্চলিক সম্মেলনগুলোতে মসজিদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় রাখবো এবং দেখবো কতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া যায়৷
বার্লিনে টেম্পোড্রোম কনসার্ট হলে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যা করার চার দিনের মাথায় এই ঘটনা৷ সম্প্রতি কি ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে? বেড়ে থাকলে কেন বেড়েছে?
ব্যক্তিগত বা শারীরিক হামলার আগে আক্রমণগুলো ছিল মৌখিক, যা হয়তো কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সংসদগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তা বিভিন্ন মিডিয়া যাচাই-বাছাই না করেই প্রকাশ করেছে৷ জার্মানিতে মুসলিম ও শরণার্থীদের বিষয়ে একটা বড় আকারের অসন্তোষ আছে এবং আমরা তখন এই মৌখিক আক্রমণগুলোকে গুরুত্ব দেইনি, যার পরিণতি আজ দশ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু৷ আমরা সবসময় বলেছি, যে ক্রাইস্টচার্চের মতো ঘটনা জার্মানিতেও ঘটতে পারে, বলেছি, মুসলিমরা আগের মতো নিরাপদ নন৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সতর্কবাণীতে কেউ কান দেননি৷ দুঃখজনকভাবে হানাও দেখিয়ে দিয়েছে জার্মানির বাস্তবতা৷
ঘটনার পর বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পেয়েছি৷ আপনি কি মনে করেন সরকার, কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিকদের যে প্রতিক্রিয়া, তা যথেষ্ট?
প্রেসিডেন্ট, চ্যান্সেলর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, হেসে রাজ্য সরকার ও চার্চ কিংবা ইহুদিদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত, সঠিক ও পরিষ্কার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ কিন্তু শুধু বিবৃতিতেই যেন আমরা সীমাবদ্ধ না থাকি৷ জার্মানিতে একটা পরিবর্তন দরকার৷ সংখ্যালঘু ও মুসলিমদের প্রতি যে নিষ্ঠুর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা অলস বসে থাকতে পারি না৷ সহনশীল ব্যক্তিরাই যে জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ, তা তুলে ধরতে হবে৷ আর যারা অতীতে জার্মানিকে বিশৃঙ্খল করে তুলেছিলেন, আবারো সময়ের অপেক্ষায় আছেন কবে বিশৃঙ্খল করে তোলা যায়, সেসব নাৎসিদের ঠেকাতে সুশীল সমাজ, রাজনীতিক ও মিডিয়াকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷
এনএসইউ (একটি দক্ষিণপন্থি সন্ত্রাসী দল)-র ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়৷ সে পরিস্থিতি কি বদলেছে? এসব হামলা কি আদৌ ঠেকানো যেতো?
আমাদের দেশের জন্য এনএসইউ-র বিষয়টি একটি কালো অধ্যায়৷ সে হিসেবে আলোর গতি এখনো খুব ধীর৷ এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেই লক্ষ্যে একটি পরিষ্কার সমাধান বের করতে হবে৷ সেই পরিস্থিতি এখনো প্রতিফলিত হয়নি, বিশেষ করে সংবিধানের আলোকে৷
বিশ্লেষকরা সবসময় বলে থাকেন যে, একটি ঘটনার পর অন্য উগ্র দক্ষিণপন্থি ধারণার মানুষও উৎসাহিত হন এবং অনুকরণ করতে চান৷ এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভুমিকা কী বলে মনে করেন?
এসব ফ্যাসিস্ট বা উগ্র দক্ষিণপন্থিরা ইন্টারনেট থেকে তথ্য ও সমর্থন আদায় করেন৷ এখন প্রচুর বিদ্বেষমূলক অপরাধ হচ্ছে, মানুষের ওপর আক্রমণ হচ্ছে৷ এমনকি জার্মানিতেও৷ এখানে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে৷ নজরদারি বাড়াতে হবে৷ সংসদে এরই মধ্যে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছি, যা আমরা সমর্থন করি৷ আর এটা সত্য যে, নিজেদের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া এবং নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য ইন্টারনেট খুবই উপযোগী মাধ্যম৷
আয়ু পূর্বানিংসিহ/জেডএ