হামাসের হামলায় ইসরায়েল-আরব সম্পর্ক আগের অবস্থায়?
১১ অক্টোবর ২০২৩মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের মোহামেদ বিন সালমান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছিলেন যে, তাদের দুই দেশ ‘প্রতিদিনই একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ' হচ্ছে৷
সেপ্টেম্বরের শেষদিকে মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সালমান দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা উল্লেখও করেননি৷ তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন চুক্তি ‘ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজন মেটাবে ও তাদের একটি ভালো জীবনের নিশ্চয়তা দিবে'৷
তবে শনিবার ইসরায়েলে হামলার পর সৌদি আরব এখন প্রকাশ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলছে এবং তাদেরকে ফিলিস্তিনি জনগণের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছে৷
ফলে ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে আসা যে, হামাসের একটি বড় সাফল্য- সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অনেক দেশ ইরানসমর্থিত হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেব্যারন সংস্থার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, হামাসের হামলা সৌদিদের একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে৷ সেটি হচ্ছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের ইস্যুটি শুধুই একটি ‘সাবটপিক' অর্থাৎ উপ-বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না৷ ‘‘এই হামলা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়ে পরিবর্তন আনবে,'' বলে মনে করেন তিনি৷
আটলান্টিক কাউন্সিলের ‘স্কোক্রফট মিডলইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের' পরিচালক জনাথন পানিকফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অদূর ভবিষ্যতে অগ্রগতি হবে, এমনটা আশা করা যাচ্ছে না৷ ইসরায়েলের অভিযানে গাজায় অনেকের মৃত্যু হলে এবং সেখানে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চললে সেটি সম্ভব হবে না, বলে মনে করেন তিনি৷
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের গবেষণা ফেলো হিউ লোভাট ডয়চে ভেলেকে বলেন, তার বিশ্বাস ‘‘আরব বিশ্বের জনগণের মতামত - যার বেশিরভাগই ইসরায়েলের প্রতিকূল- সেটি ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার কারণে আরও বাড়বে৷''
এদিকে, ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে৷ তবে সরাসরি হামাসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেনি বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ৷
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
শুধু আরব বিশ্বের চাপ নয়, সৌদি আরব ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগোবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার দিকেও নজর রাখবে৷
এ বছর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা দেখা গেলেও মিত্রদের প্রশ্নে এখনও দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়৷
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সৌদি আরব আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ২০১৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে৷ ঐ বছর সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং মার্কিনিদের তত্ত্বাবধানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণেরও অনুমতি আশা করছে সৌদি আরব৷
আটলান্টিক কাউন্সিলের পানিকফের ধারণা, সৌদি আরবের বিশ্লেষকদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের কাছাকাছিও নয়৷ ফলে ইসরায়েলের মতো দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হলে সৌদি আরবে কত প্রাণহানি ও ধ্বংস হতে পারে, তা ভাবতে পারেন সৌদি বিশ্লেষকেরা৷ সে কারণে হয়ত সৌদি আরব আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে, বলে মনে করছেন তিনি৷
জেনিফার হোলাইস/জেডএইচ