‘হামিদুর মাগো বলে চিৎকার করেন’
১৩ এপ্রিল ২০১১এই বীর যোদ্ধার ছোট ভাই ফজলুর রহমান এর কাছে জানতে চাই, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে যোগ দিয়েছিলেন হামিদুর? তিনি বলেন, সেনা প্রশিক্ষণ শেষে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি চলে যান সিলেট অঞ্চলে৷ এরপর একবার আমাদের সঙ্গে দেখা করেত আসেন৷ তখন আমারা বাবা-মা, ভাইয়েরা তাঁকে যুদ্ধে ফিরতে না করেন৷ কিন্তু হামিদুর তাদেরকে বোঝান যে, যুদ্ধে জিতে ফিরে আসলে তাঁর ভালো চাকরি হবে৷
হামিদুর মনে করেছিলেন, দেশ স্বাধীন হলে দারিদ্রতা থাকবে না, তাঁদের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা থাকবে৷ কিন্তু ফেরাতো আর হলো না৷
সম্মুখ যুদ্ধে হামিদুর
মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে হামিদুর সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেননি৷ ছিলেন রান্নার দায়িত্বে৷ কিন্তু তাঁর আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড৷ একাত্তরে অক্টোবরে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখলের সম্মুখ যুদ্ধে অংশে নেন তিনি৷ সেসময় ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন হামিদুর৷ সেদিনের যুদ্ধের কথা ফজলু জেনেছিলেন হামিদুরের সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে৷ তিনি বলেন, সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী মেশিনগান দিয়ে অনবরত গুলি ছুড়ছিল৷ তাদের এই মেশিনগান ধ্বংস করার সাহস কেউ পায়নি৷ কিন্তু হামিদুর মেশিনগান ধ্বংস করতে রাজি হন এবং সফলতার সঙ্গে গ্রেনেড ছোঁড়েন৷
হামিদুরের গ্রেনেডে শত্রুপক্ষের মেশিনগান থামলেও আক্রান্ত হন তিনি৷ একটা গুলি লাগে তাঁর কপালে৷ ফজলুর বলেন, গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে হামিদুর মাগো বলে চিৎকার করেন৷ তাঁর মাথার ঘিলু এবং রক্ত পাহাড়ি ঝরনা বেয়ে নালায় গিয়ে পড়ে৷
দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনা
এই বীর সেনার মরদেহ উদ্ধারের পর ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমারা ছড়া গ্রামে দাফণ করা হয়৷ কিন্তু নীচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় কবরটি একসময় পানিতে তলিয়ে যায়৷ এই বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার এক সময় দাবি তোলেন, হামিদুরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ সরকার মেনে নেয় এই দাবি৷ ২০০৭ সালে হামিদুরের দেহবশেষ দেশে ফিরে আসে৷
হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনার পর ঢাকার বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়৷ বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন হামিদুরের পরিবারও৷ কিন্তু তারপরও এখনও অনেক দাবি নাকি আছে এই পরিবারের, যা পূরণ হয়নি৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ