হারিয়ে যাওয়া পম্পেইর দিনগুলো

পম্পেইর রাস্তায় খেলছে শিশুরা৷ অভিজাত কোনো নারী হয়তো বেরিয়েছেন ভ্রমণে৷ ৭৯ সালের কোনো এক বিকেল হয়তো এমনই ছিল পম্পেইতে৷ প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহরের খ্যাতি ছিল তার৷ ভিসুভিয়াসের পাদদেশে সেখানকার উর্বর মাটিতে আঙ্গুরের চাষ হতো৷ সমুদ্রের তীর ঘেঁষে মনোরম পরিবেশে থাকতেন শহরের অনেক বাসিন্দা৷

৬০ হেক্টরজুড়ে ছিল পম্পেইর বিস্তৃতি৷ নগরবাসীর নিরপত্তায় ছিল আটটি ফটক আর ১১ টি ওয়াচ টাওয়ার৷ অভিজাতদের জন্য ছিল উষ্ণ আর শীতল জলের সুইমিং পুলের ব্যবস্থা৷ ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য থিয়েটার, খেলাধুলার স্টেডিয়াম৷ শহরের কেন্দ্রে ছিল জুপিটারের মন্দির৷

২০০০ হাজার বছর আগের পম্পেইর প্রচলিত বাড়িগুলো দেখতে এমনই ছিল৷ ধনীরা অবশ্য আরো বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করতেন৷ কয়েকতলা ভবনের মেঝে আর দেয়াল সুসজ্জিত ছিল মোজাইক পাথরের ম্যুরালে৷

পম্পেইর অক্ষত স্থাপনাগুলোর একটি এটি৷ ওয়াইন ও আনন্দের দেবতা ডায়োনিসাসের পূজা হতো এখানে৷ তবে ১৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে ডায়োনিসাসের উৎসব বাতিল করে সেনেট৷ যদিও গোপনে ঠিকই উদযাপন চলত৷

পম্পেইর সব নাগরিক যে স্বচ্ছল ছিলেন তা নয়৷ কৃষক আর বেকারি কিংবা মিলের শ্রমিকরা দরিদ্রের জীবনই যাপন করতেন৷ ছবির এই ভাস্কর্যটি দেবী ডায়নার৷

৭৯ খ্রিষ্টপূর্বে পম্পেই পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার ১৭ বছর আগে আরো একবার জেগে উঠেছিল ঘুমন্ত ভিসুভিয়াস৷ তখনো অনেক ভবন ধসে পড়েছিল৷ পরবর্তীতে সেগুলো আরো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়৷ তখন কে ভেবেছিল তাদের এই নগরী কয়েক বছরের মাথায় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে!

২৪ আগস্ট ভিসুভিয়াসের লাভার উদগীরণ ঘটলো৷ কাদা আর পাথরের স্রোত নেমে এলো পম্পেইর উপরে৷ প্রস্তরখণ্ডে চাপা পড়ে কিংবা ছাইয়ে দম বন্ধ হয়ে মারা গেলেন অনেকে৷ যারা সেখান থেকে কোনোরকমে বাঁচতে পারলেন তাদের অনেকের সমাধি ঘটলো জ্বলন্ত লাভার নীচে৷ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল সেটি আজও টের পাওয়া যায় ভাস্কর্যে পরিণত মানুষগুলোকে দেখে৷

পম্পেইর ২০ হাজার বাসিন্দার দুই হাজার শেষ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন৷ তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন অন্য শহরগুলোতে৷ ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতায় বিস্মৃত হলো পম্পেই৷ ১৫৯৪ সালে খাল খনন করতে গিয়ে শ্রমিকরা প্রাচীন শিলালিপি আর মূর্তি খুঁজে পান৷ তারও ২০০ বছর পর স্পেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অধীনে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়৷

সাত মিটার বা ২৩ ফুট ছাইয়ের স্তর সরিয়ে পম্পেইকে তুলে আনার মূল কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৬০ সালে৷ এমনকি এখনো পম্পেইর অনেকটাই চাপা পড়ে আছে৷ তবে ভিসুভিয়াসের লাভায় পম্পেই বলতে গেলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার জন্য অক্ষত এক নগরী হিসেবেই টিকে আছে৷

লাভায় চাপা পড়া পম্পইকে নতুন করে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে দ্য গ্র্যান্ড প্যালেস মিউজিয়াম ইন প্যরিস৷ বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শনতো আছেই, সাথে ত্রিমাত্রিকে প্রাচীন শহরটি ঘুরে দেখতে পারছেন দর্শনার্থীরা৷ এক জুলাই থেকে শুরু হয়ে প্রদর্শনী চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷