হাসিনা-মোদী ভার্চুয়াল বৈঠক কি শুধু আনুষ্ঠানিকতা?
১৬ ডিসেম্বর ২০২০দুই প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে প্রথমে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা থাকলেও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নয়টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে৷ আর আলোচনা হবে পানি বন্টন, কোভিড সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের বহু কাঙ্খিত তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি বাংলাদেশ এখন ভারতের ‘প্রতিশ্রুতির সম্মানের' ওপর ছেড়ে দিয়েছে৷
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাই ঠিক৷ তিস্তার পানি এখন ভারতের সদিচ্ছার ওপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ আর এখন পর্যন্ত তারা কোনো সদিচ্ছা দেখায়নি৷ ভবিষ্যতেও দেখাবে বলে মনে হয় না৷ তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই মোদী সরকার এখন বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেবে না৷ অন্য কোনো ছোট নদী নিয়ে হয়তো অগ্রগতি হতে পারে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘তিস্তা আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই৷'' রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত আন্তর্জাতিক ফোরামে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়নি৷ আর বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেবে বলেও মনে করেন না এই বিশ্লেষক৷ তবে করোনা ভ্যাকসিন এবং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে ইতিবাচক ফল আসতে পারে৷
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত প্রথম থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না, এখনো নেই৷ তাই এই বৈঠকে নতুন কিছু হবে সেটা আশা করা যায় না, বললেন তৌহিদ হোসেন৷
চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়া ভারতের শীতলতার কারণ কিনা? বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পদ্মা সেতু নতুন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন কিনা? বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভারত তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে৷ কিন্তু তাতে সফল হয়নি৷ আর সফল হওয়ার কোনো কারণও আছে বলে মনে করেন না তারা৷ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ভারতের হাপিত্যেস করে তো লাভ নাই৷ কারণ তাদের তো অর্থ নাই৷ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ৷ তারা তো এখানো বিনিয়োগ করতে পারবে না৷ অর্থ দিতে পারবে না৷''
আর ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটেছে৷ মোদী সরকার মনে করছে তাই তিস্তার পানি না দেয়াই ভালো৷ দেশটি এখন এত বেশি সমস্যায় আছে যে এখন আলোচনা ছাড়া তার আর তেমন কিছু দিতে পারবে না৷ তারপরও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে একটা কিছু হচ্ছে এটাই বলা যায়৷''
দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু হবে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায়৷ তার আগে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হবে৷ সেগুলো হলো: হাতির সুরক্ষার জন্য অভয়ারণ্য, হাইড্রোকার্বন সহোগিতা, বরিশাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও কমিউিনিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প৷
আলোচনার শুরুতেই তারা বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ একটি স্মারক ডাকটিকেট উদ্বোধন করবেন৷ তারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের পুরনো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগটিও উদ্বোধন করবেন৷ ৫৫ বছর আগে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷
যৌথভাবে ‘স্বাধীনতা সড়ক'-এর ঘোষণা দেবেন দুই প্রধানমন্ত্রী৷ সড়কটি বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে মেহেরপুরের মুজিবনগরে জিরো লাইনে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ৷ সড়কটি যে স্থানে অবস্থিত সেখানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়৷ সড়কটি দু'দেশের জনগণের জন্য খুলে দেয়া হবে৷
তৌহিদ হোসেন বলেন, এখন করোনা সবচেয়ে বড় সংকট৷ এই সময়ে যদি দুই দেশ সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে তা সবার জন্যই ভালো৷ টিকার জন্য একটি চুক্তি হয়েছে৷ যদিও তা হয়েছে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে৷ সরকারের মাধ্যমে হলে ভালো হতো৷ আরো ভালো হয় যদি বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের সুবিধা দেয়া হয়৷
তিনি মনে করেন, আর নতুন কোনো আশা না করাই ভালো৷ কারণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে নতুন কিছু হয়না৷ আগেই সিদ্ধান্ত হয়৷ এটাই নিয়ম৷
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, দীর্ঘদিন পর এই করোনার মধ্যেই দুই প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছেন সেটাই অনেক৷ আলোচনা না হওয়ার চেয়ে আলোচনা হওয়া ভালো৷