1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে হিন্দির আগ্রাসনের অভিযোগ

২৯ আগস্ট ২০১৯

হিন্দি আগ্রাসনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ হিন্দির আধিপত্য অস্বীকার করে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়৷ কোথাও মোছা হচ্ছে হিন্দি ভাষায় লেখা বোর্ড, কোথাও পড়ছে পোস্টার৷

https://p.dw.com/p/3Ogg6
ছবি: DW/P. Samanta

‘হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা', এমন একটা মিথ দেশের মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে৷ ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা আদৌ নেই, এই কথাটাই তুলে ধরতে চাইছে ‘বাংলা পক্ষ' সংগঠনটি৷ শুধু প্রচার নয়, হিন্দির বিরুদ্ধে তারা বেশ ক্ষুরধার আন্দোলনও গড়ে তুলছে৷ তবে সব কাজকর্ম সরাসরি এই সংগঠন করছে না৷ সম্প্রতি নানা ভাবে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে, যা বাংলা ভাষার মর্যাদার পক্ষে সোচ্চার দাবি তুলে ধরছে৷

সম্প্রতি একটি ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ কলকাতার কাছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রাম স্টেশনের ভিডিওটি তোলা হয়৷ এই স্টেশনের ওভারব্রিজে হিন্দিতে ‘মধ্যমগ্রাম' লেখা রেল কর্তৃপক্ষের একটি বোর্ড রয়েছে৷ সেই বোর্ডে কালি লেপে দেওয়া হয়েছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি কালি লেপে দিচ্ছেন হিন্দি বোর্ডে৷ প্রতিবাদীদের বক্তব্য, যে রাজ্যে ৮৬ শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী, সেখানে কেন শুধু হিন্দিতে লেখা বোর্ড লাগাবে রেল৷

বাংলা ভাষার পক্ষে লড়াই চালানো সংগঠনটি এর আগে পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় থাকা রেল স্টেশনে শুধু হিন্দি ও ইংরেজিতে বোর্ড লাগানোর প্রতিবাদ করেছে৷ তারা বলছে, কেন বোর্ডে বাংলায় স্থানের নাম বা অন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি লেখা থাকবে না৷ কেন বাংলাভাষীদের অন্য দুটি ভাষায় বোর্ড পড়তে হবে৷ ঝাড়খণ্ড লাগোয়া আসানসোল ডিভিশনে রেলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে৷ যুক্তি মেনে নিয়ে দ্রুত বোর্ড পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ৷

সাম্প্রতিককালে, পশ্চিমবঙ্গের ট্রেনে-বাসে নজরকাড়া পোস্টার চোখে পড়ছে৷ একাধিক পোস্টারের বক্তব্য, হিন্দি রাষ্ট্রভাষা নয়৷ বাংলায় থাকলে বাংলা জানতে হবে৷ এই ধরনের মন্তব্য কিছু দিন আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল৷ তাঁর মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জয় বাংলা' স্লোগানও৷ পাকিস্তানি দখলদার ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের এই তেজদীপ্ত স্লোগান তোলার পরিস্থিতি কি আজকের পশ্চিমবঙ্গে আছে? বাংলা পক্ষের শীর্ষ সংগঠক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি একটি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী দল৷ তাদের আমলে হিন্দির আগ্রাসন বেড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে রেল পরিষেবায় বাঙালিদের নিয়োগ করা হচ্ছে না৷ আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তোলা হচ্ছে৷’’

‘বাঙালি হিন্দু, মুসলমান উভয়েই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের শিকার’

পশ্চিমবঙ্গে বাংলা যে অবহেলিত, সেটা যে কেউ কলকাতায় পা রাখলে বুঝতে পারবেন৷ কলকাতার এমন অনেক রাস্তা রয়েছে, যেখান দিয়ে হাঁটলে বোঝা যাবে না, এটা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী৷ দোকানের বোর্ডে চোখ রাখলে এটা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়৷ কান পাতলে মানুষের আলাপচারিতায় হিন্দির প্রাধান্য নজর এড়াবে না৷ অনেক সময়ই মনে হতে পারে, হিন্দিই এখানকার প্রধান ভাষা৷ আপনি বাংলা বললেও অসুবিধা নেই! প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, দোকানের সাইনবোর্ডে কেন বাংলা থাকবে না? পুরসভা বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা বাধ্যতামূলক করেছে বহু বছর আগেই৷ তার পরেও কলকাতা আছে সেই কলকাতাতেই৷

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন একটি বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে৷ ধর্মীয় মেরুকরণ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে৷ গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তার ইঙ্গিত মিলেছে৷ এই রাজ্যের একটা বড় অংশের হিন্দিভাষী বিজেপির বিরুদ্ধে, হিন্দির আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই এদের কাছে কি ভুল বার্তা দেবে না? এ বিষয়ে গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের আন্দোলনের মধ্যে ধর্ম কোথায়? বাঙালি হিন্দু, মুসলমান উভয়েই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের শিকার৷ যে হিন্দিভাষীরা বাঙালিবিরোধী নন, এই আগ্রাসনকে সমর্থন করেন না, তাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন৷ নইলে পরোক্ষে আক্রমণকারীদেরই মদত জোগাবেন৷’’

শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার এই প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রেলের মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে হিন্দি, ইংরেজি থাকবে৷ তার সঙ্গে বাংলাও থাকতে হবে আমাদের রাজ্যে৷ না থাকলে যদি কেউ হিন্দি মুছে দেন, সেটা একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ৷ তবে বাংলা থাকলেও হিন্দি মুছে দেওয়া হবে চরমপন্থি পদক্ষেপ৷ এখানে যে অবাঙালিরা থাকেন, তাঁরা বাংলা শিখবেন, আমার ভাষাকে মর্যাদা দেবেন, এটা আমরা আশা করতেই পারি৷’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য