1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিরো আলম: রাতের ভোটে ‘পারেন’, সিনেমা হলেও পারেন

১৯ অক্টোবর ২০২০

বেগমগঞ্জে থাকলে তিনি হয়ত থানার ওসির মতো ৩২দিন ‘ঘুমাতেন’ না, ধর্ষিতার সব প্রতিবেশী বা সব রাজনীতিবিদের মতো চুপ বা স্থানীয় সাংবাদিকদের মতো নিষ্ক্রিয় থাকতেন না৷

https://p.dw.com/p/3k865
ছবি: bdnews24

আকারে ছোট, চেহারায় অতি সাধারণ হলেও স্বঘোষিত হিরো আশরাফুল ইসলাম আলম কাজে কিন্তু সত্যিই হিরো৷

কাজে হিরো বলেই ঝুঁকি নিয়েও প্রতিবাদ করতে পারেন৷ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করে দেখুন! সেখানে কেমন ভোট হয়েছে তা তো সবাই জানেন৷ বড়-ছোট সব বিরোধী দল এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে, বলছে৷ কিন্তু ভোটের দিনে তাদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে একেবারেই রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়নি৷

হ্যাঁ, সেসব দলের বড় বড় নেতারা হয়ত ভেবেছেন সরকারি দল এবং পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হবে, জেলে যেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এমন ভাবার কারণ নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্তু হিরো আলম সিংহ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে অমুকে মারবে তমুকে ধরবে ইত্যাদি ভেবে ভোটের দিনে ঘরে বসে থেকে পরে নিরাপদ সময়ে নিরাপদ স্থান থেকে বিবৃতি দেননি৷

জালভোট রুখতে, কারচুপির প্রতিবাদ জানাতে নিজে ছুটে গিয়েছিলেন ভোট কেন্দ্রে৷ জাল ভোট দিতে আসা সন্ত্রাসীরা তাতে ক্ষেপে গিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে৷ হিরো আলম তবু লেজ গুটিয়ে পালাননি, ছোটখাটো অতি সাধারণ মানুষটি সেদিন সিংহ মার্কার মর্যাদা রেখেছিলেন প্রতিবাদে সিংহ-হৃদয়ের প্রমাণ রেখে৷

তাতে হিরো আলমের কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়নি৷

তাহলে ‘লাভ' হয়েছিল কার?

বিএনপির৷

হ্যাঁ, হিরো আলম প্রতিবাদ করায় লাভ বিএনপিরই হয়েছিল, কারণ, বগুড়া-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হিরো আলম পেয়েছিলেন মাত্র ৬৩৮ ভোট আর এক লাখ ২৬ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী মোশারফ হোসেন৷

Bangladesch | Film "Shahoshi Hero Alom" mit Ashraful Alom Saeed
ঢাকার একটি সিনেমা হলছবি: bdnews24

সেই হিরো আলম আবারও খবরের শিরোনামে৷ খবরে অবশ্য তিনি সবসময়ই থাকেন৷ সব সময় যে খুব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকার জন্য খবরে আসেন, তা নয়৷ তবে করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হল, শুটিং বন্ধ থাকার ফলে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত চলচ্চিত্র শিল্প যখন আরো বড় বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কায়, ঠিক তখন ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবি নিয়ে তার এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে অকুন্ঠ প্রশংসার দাবি রাখে৷

করোনার আগেও যেখানে হলগুলো ফাঁকা যাচ্ছিলো, এতদিন পর খুলে দিলেও হলগুলোতে ক'জনই বা যেতে চাইবেন, গেলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার এ সময়ে তো লগ্নির টাকাও উঠে আসবে না- এসব ভেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খান থেকে মাঝারি, ছোট কোনো তারকাই নিজেদের ছবি মুক্তি দেয়ার সাহস দেখাননি৷ বৃহত্তর স্বার্থে লাভের আশা জলাঞ্জলি দেয়ার উদারতা দেখাতে তারা ভয় পেয়েছেন৷ হিরো আলম ভয় পাননি৷ এবারও দুঃসময়ে ঘরে বসে চলচ্চিত্রের দুরবস্থা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি৷ সে ‘যোগ্যতাও’ হয়ত তার নেই৷ তবু তার ছবি চল্লিশটা হলে চলেছে৷

‘সাহসী হিরো আলম’ কি খুব ভালো মানের ছবি?

মোটেই না৷ হিরো আলমের প্রতিটি কাজের মতো এটাতেও অসংখ্য ত্রুটি আর হাসির খোরাক নিশ্চয়ই খুঁজে পাবেন সকলে৷

ছবিটি কি ব্যবসাসফল হবে?

সে আশা বগুড়ায় চানাচুর ব্যবসায়ী থেকে ক্যাবল ব্যবসায়ী, ক্যাবল ব্যবসায়ী থেকে মিউজিক ভিডিয়োর স্বঘোষিত নায়ক, মিউজিক ভিডিয়োর নায়ক থেকে চলচ্চিত্রেরও নায়ক হয়ে যাওয়া আশরাফুল ইসলাম আলম নিজেও করেননি৷

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

‘সাহসী হিরো আলম’ মুক্তি পাওয়ার দিনে প্রাডো গাড়িতে ঢাকার এক হল থেকে অন্য হলে ঘুরেছেন তিনি৷ শত শত মানুষ তাকে ঘিরে ধরে উল্লাস করেছে৷ সানন্দে হাত মিলিয়েছে, সেলফি তুলেছে৷ এত কিছুর পরও সংবাদ মাধ্যমকে হিরো আলম শুধু বলেছেন, ‘‘আমি বলবো না আমার ছবি সুপার ডুপার হিট৷ কিন্তু আমার ছবি বিভিন্ন হলে চলছে, মানুষজন দেখতে আসছে৷ এসব দেখেই আমি সন্তুষ্ট৷’’

সংবাদমাধ্যমে সুপারডুপার হিটের তকমা পাওয়া ছবিও কিন্তু ব্যবসাসফল হয় না৷ আয়নাবাজি মুক্তির পর সেই ছবি বক্স অফিস ফাটিয়ে দিয়েছে- এমন খবর আমরা অনেক পড়েছি৷ কিন্তু ‘বক্সঅফিসে আয়নাবাজির রাজত্ব’ শিরোনাম পড়ার দু' বছর পর ছবির পরিচালক অমিতাভ রেজাকে বলতে হয়েছে, ‘আয়নাবাজি করে আমি ধ্বংসের মুখে পড়েছি’৷

হিরো আলম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেননি৷ তবে মাত্র ৬৩৮ ভোট পেলেও অন্যায়ের প্রতিবাদটা তিনি তার জায়গা থেকে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই করেছিলেন৷

তার ‘সাহসী হিরো আলম’ কোনো চলচ্চিত্র সমালোচকেরই হয়ত একটু প্রশংসাও পাবে না, হয়ত আয়নাবাজির চেয়ে অনেক কম মানুষ দেখবে, হয়ত একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে বক্সঅফিসে৷

তাতে কী?

সেলফিযুগের অনেক সেলফিশের ভিড়ে তার মতো মানুষ সব অঙ্গনেই থাকা খুব দরকার৷

২ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...