টুইট করছে রোবট!
১৯ অক্টোবর ২০১৬গবেষকরা দেখেছেন, হিলারি ক্লিনটন যখন একটি টুইট করেন, ট্রাম্প করেন চারটিরও বেশি৷ অর্থাৎ ট্রাম্পের টুইট হিলারির চার গুণ৷ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের প্রথম পর্ব থেকেই ট্রাম্প ও হিলারি টুইটারে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন৷ কিন্তু দু'জনেই এক্ষেত্রে সাহায্য নিয়েছেন রোবটের৷ অটোম্যাটিক অ্যাকাউন্ট থেকে অনেক টুইট করা হয়েছে দু'জনের সমর্থনে৷
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপ হাওয়ার্ড এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন৷ তার গবেষণার বিষয় ‘কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা' অর্থাৎ কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রচারণা৷ গবেষণায় বলা হয়েছে, এই বোট টুইট রিপাবলিকানদের সমর্থন বাড়াতে সহযোগিতা করছে৷
গবেষণা প্রতিবেদকরা বলছেন, এই সফটওয়্যারের জনমতে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা আছে, কেননা অটোম্যাটিক হলেও জনমতের ভিত্তিতে, রাজনৈতিক মতামত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই টুইটগুলো করা হয়৷ তবে এক সমালোচক বলেছেন, এটা বলা খুবই মুশকিল যে কোন টুইটার অ্যাকাউন্টটটি আসল আর কোনটি ওয়েব রোবট৷
দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রথম বির্তক হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন থেকে টানা চার দিনের টুইট সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা৷ আর এসব টুইটে কী কী হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা তৈরি করেছেন৷
ট্রাম্পের সমর্থনে টুইটে যেসব হ্যাশট্যাগ যুক্ত হয়েছে সেগুলো হলো, হ্যাশঅ্যামেরিকাফার্স্ট (#AmericaFirst), হ্যাশডেপ্লোরেবল (#deplorable), হ্যাশনেভারহিলারি (#NeverHillary), হ্যাশপেপে (#pepe), হ্যাশটিমট্রাম্প (#TeamTrump) এবং হ্যাশট্রাম্পপেন্স২০১৬ (#TrumpPence2016)৷
হিলারির সমর্থনে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ৷ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো হ্যাশডেমস (#dems), হ্যাশডার্টিডোনাল্ড (#DirtyDonald), হ্যাশআঅ্যামউইদহিলারি (#ImWithHer), হ্যাশট্রাম্পহেইট (#LoveTrumpsHate), হ্যাশস্ট্রংগারটুগেদার (#StrongerTogether) ও হ্যাশহোয়াইওয়ান্টহিলারি (#WhyIWantHillary)৷
প্রথমে গবেষকরা অ্যাকাউন্টগুলো কাদের সেটা চিহ্নিত করেছেন৷ তারা এমন টুইটগুলো নিয়েছেন, যেগুলো প্রার্থীদের মধ্যে কেবল একজনকে সমর্থন করেছে৷ তারা দেখেছেন চারদিনে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রাম্পের সমর্থনে ১৮ লাখ এবং হিলারির সমর্থনে ৬ লাখ ১৩ হাজার টুইট করা হয়েছে৷ এরপর গবেষকরা এই টুইটগুলোর কতগুলো রোবটের মাধ্যমে করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন৷ তারা এমন একটি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছেন যেটি থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ টি করে টুইট করা হয়েছে৷ তারা বলছেন, ট্রাম্পের টুইটের ৩২ ভাগ রোবট নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে৷ আর ক্লিনটনের ২২ ভাগ৷ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে রিপাবলিকান প্রার্থীর জন্য রোবটের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার টুইট৷ আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে ১ লাখ ৩৬ হাজার টুইট৷
সাবেক আইবিএম গবেষক ক্যারোলিন সিন্ডার্স বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষ লেখার সময় নির্দিষ্ট একটা অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে, আর নির্দিষ্ট কারণে তারা টুইট করে৷ কিন্তু রোবটরা যখন টুইট করে তখন নির্দিষ্ট কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রায় একই ধরনের কথাবার্তা টুইট করে৷''
অধ্যাপক হাওয়ার্ড বলছেন, ‘‘এই টুইটগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ টুইট সারা রাত ধরে করা হয়েছে, আর ব্যবহার করা হয়েছে একই ধরনের হ্যাশট্যাগ ও তথ্য৷ এ থেকেই বোঝা যায় এটা কোনো মানুষের আচরণ নয়, যন্ত্রের আচরণ৷ আর এমনটা দেখা গিয়েছিল ব্রেক্সিট ভোট এবং ভেনেজুয়েলা নির্বাচনের সময়৷''
কীভাবে বোট অ্যাকাউন্ট চিনবেন?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট প্রোফাইল ছবি থাকে না৷ তারা টুইট করার সাথে সাথে একই রকম দেখতে অ্যাকাউন্ট থেকে তা শেয়ার করা শুরু করে৷ মেইন টপিক নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য লেখে৷ আরও একটা ব্যপার হলো, একজন মানুষের একটির পর আর একটি টুইট করতে যতটা সময় লাগার কথা এই অ্যাকাউন্টগুলোর তা লাগে না৷
তবে অধ্যাপক হাওয়ার্ড এ-ও জানালেন যে, তিনি তাঁর গবেষণায় দেখেছেন ট্রাম্পের টুইটগুলো রোবট কর্তৃক করা হোক বা না হোক, এগুলো ভোটারদের ভালোই প্রভাবিত করছে এবং তা ইতিবাচকভাবেই৷
এপিবি/এসিবি (বিবিসি)