হেফাজতের বিরুদ্ধে এখন মামলা, পরে অ্যাকশন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১ এপ্রিল ২০২১ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনদিনের ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ১১টি। হাটহাজারীতে ছয়টি। নারায়ণগঞ্জে ছয়টি এবং মুন্সিগঞ্জে একটি মামলা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন দিনের ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। হাটহাজারীতে আসামি দুই হাজার । আর নারায়ণগঞ্জে আসামি করা হয়েছে দেড় হাজারের মত। মামলায় বিএনপি, হেফাজত ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের কিছু নাম থাকলেও অধিকাংশ আসামি অজ্ঞাত। এই সব মামলায় এখন পর্যন্ত ৫০-৬০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ জনকে।
কিন্তু হেফাজতের ব্যাপারে সরকার এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মনে করেন শুধু এই মামলা দিয়েই হবে না। হেফাজতকে রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলা করতে হবে। করোনার কারণে এখন মাঠে নামা যাচ্ছে না বলে কিছু করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরও ঢাকাসহ সারাদেশে ৮৩টি মামলা হয়। মামলায় কয়েক হাজার হেফাজত নেতা-কর্মীকে আসামি করা হলেও মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সাম্প্রতিক ঘটনায় বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তদন্তে যারা যারা জড়িত তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। আর শাপলা চত্বরের ঘটনায় কোনো তদন্ত হচ্ছে না এটা ঠিক না। তদন্ত হচ্ছে।”
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেন, ‘‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা পুলিশের গুলি করার প্রতিক্রিয়ায় হয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে বলে তার প্রতিক্রিয়ায় হামলা ভাঙচুর হয়েছে। ক্ষুব্ধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসবে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিছু জ্বালাও পোড়াও হয়েছে।” আর হাটহাজারী থানায় আগে হামলা করার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। তার প্রশ্ন, ‘‘ইটপাটকেল ছোড়ার জবাব কি গুলি করা? জানলার কাঁচ ভাঙলে কি গুলি করতে হবে? গুলিতে আমাদের ১৭ জন নিহত হয়েছে।” তিনি দাবি করেন তাদের শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
শাপলা চত্বরের ঘটনার পর সরকার হেফাজকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কাছে টেনে নিয়েছিলো। তখন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেপ্তার করা হলেও মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে সরকারই নিজ উদ্যোগে নিরাপদে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়। বাবুনগরী পরে জামিনে মুক্তি পান। তিনি বরাবরই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। গত বছর মাওলানা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বাবুনগরী এখন হেফাজতের আমীর। শফীপন্থীরা এখন হেফাজতে কোনঠাসা। অনেককে বের করেও দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার সাথে তাদের (হেফাজতের নেতাদের) প্রায়শই কথা হয়৷ কিন্ত তারা আসলে দ্বিধাবিভক্ত৷ তাদের নেতৃত্ব একপথে চলে না৷ এখন মামলা হচ্ছে৷ তারপর আমরা অ্যাকশনে যাব৷’’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুর সময় হেফাজত নেতাদের সাথে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মনে করেন, মামলাই যথেষ্ট নয় রাজনৈতিকভাবেও হেফাজতের ব্যাপারে মুভ করা দরকার। এখন করোনার কারণে বাইরে বের হওয়া যাচ্ছেনা। করোনা কমে গেলে সেটা করা হবে। নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা এবার বামপন্থীরাও করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই মৌলবাদীদের এক ধরনের উত্থান দেখা যায়। সাধারণ মানুষকে এটা বোঝাতে হবে তারা মাদ্রাসা মসজিদে যে টাকা দেয় তা দিয়ে এসব করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৭৪টি মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে।”
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘‘আমাদের সাথে সরকারের এখন কোনো যোগাযোগ নাই। অতীতেও ছিল না। সরকার আন্তরিক হলে কি এতগুলো প্রাণ যেত? সরকারের সাথে যোগাযোগের কোনো চিন্তাও আমাদের নাই।’’
এদিকে হেফাজত শুক্রবার সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। ঢাকায় মূল কর্মসূচি পালন হবে বায়তুল মেকাররম মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর।