হোলি আর রাজনীতির রং
১৮ মার্চ ২০১৪ভারতের আকাশ বাতাস মুখরিত ‘‘হোলি হ্যায়''-এর মিলিত কণ্ঠস্বরে৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারি, গুজরাট থেকে অরুণাচল প্রদেশ – সর্বত্রই একই আবহ৷ তবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বারাণসী, বৃন্দাবন, উজ্জয়িনী, আহমেদাবাদ এবং মুম্বই-এ তো কথাই নেই৷ রং, রং আর রং৷ আবির, গুলালে মাখামাখি৷
ওদিকে সপ্তাহ তিনেক পরেই ভারতে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ গোটা দেশ যেন ডুবে গেছে নির্বাচনি রংয়ে৷ তাই ভোটের মুখে হিন্দুদের এই রংয়ের উৎসবকে জনসংযোগের এক বড় মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাবার সুযোগকে হাতছাড়া করতে রাজি নয় কোনো রাজনৈতিক দলই৷ হোলির মিলন উৎসবের সঙ্গে ভোটারদের সম্পৃক্ত করতে ভোট প্রার্থীরা নিজ নিজ কেন্দ্রে গত দু'দিন ধরে ব্যস্ত৷ মথুরা-বৃন্দাবনে স্বেচ্ছাসেবি সংস্থাগুলি, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমি বৃন্দাবনে মিলন উৎসবের আয়োজন করে এ বছর বেশি ধুমধাম করে৷ ভোট প্রার্থীরা ভোটভিক্ষার আবেদন জানিয়ে স্থানীয় মিডিয়াগুলিতে নিজ নিজ দলের বিজ্ঞাপন দেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান তামাম ভোটারদের৷ শুধু তাই নয়৷ আগ্রা পুরসভা-আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দলের স্টল দেবার ব্যবস্থা করা হয়৷ এর মাধ্যমে সব দলের রাজনীতিকরা সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা এবং নিজেদের বক্তব্য রাখার সুযোগ নেন৷
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী মোবাইল ফোনে দেশবাসীকে হোলির শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন৷ তাতে আবেদন রেখেছেন হোলির আনন্দ অক্ষয় রাখতে ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভাগ্য পরিবর্তনে বিজেপিকে জয়যুক্ত করার৷ রংয়ের উৎসব হোলি যেন হয়ে ওঠে ভারতের সৌভাগ্যের সূচক৷ উল্লেখ্য, বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মোদী এবার দাঁড়াচ্ছেন বারাণসী থেকে৷ বারাণসী শহর তাই মোদী পিচকারি, মোদী আবিরে মাতোয়ারা৷ গৈরিক রংয়ের ছয়লাপ৷ দিল্লির বিজেপি সদর কার্যালয়ে বসে হোলি মিলন মঙ্গল উৎসব৷ বিজেপি নেতারা সেখানে একে অপরকে আলিঙ্গন করে রং মাখান৷ মুখে লেগে থাকে যেন আগামী নির্বাচনের জয়ের হাসি৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ড. মনমোহন সিং তাঁর শেষ হোলি উৎসবে অফিসের সহকর্মী, তথা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন৷ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হোলির রংয়ে মেতে ওঠেন৷ দলের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতিবাচক সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রাক-নির্বাচনি জনমত সমীক্ষায় যেসব পূর্বাভাষ দেয়া হচ্ছে, তা নস্যাৎ করে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের নিরুৎসাহ না হবার পরামর্শ দেন৷
বিহারে হোলি এক বড় উৎসব৷ এবারে রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক মুখ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু যাদবের মুখে খুশির আমেজ নেই৷ লালু যাদব এবার হোলি উৎসবে যোগ দেননি৷ কারণ দল ছেড়েছেন অনেক নেতা৷ শত্রুপক্ষ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন লালুর একান্ত বিশ্বস্ত এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাম কৃপাল যাদব৷ ভোটের মুখে লালুর দল তাই এখন খাদের কিনারায়৷
হোলি উৎসবের প্রাণকেন্দ্র বৃন্দাবন, পৌরাণিক মতে যা কিনা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র ব্রজভূমির এক অঙ্গ৷ এখনে একদিন নয়, বেশ কয়েকদিন ধরে চলে হোলি উৎসব৷ তবে এবারের অভিনবত্ব হলো, একটি স্বয়ংসেবী সংস্থা বৃন্দাবনের হিন্দু বিধবাদেরও এই রংয়ের উৎসবে সামিল করেছেন৷ স্বামীহীনা হিন্দু বিধবাদের রং মাখা পাপ – এই কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করেছেন তাঁদের৷ এদিন তাই স্বজনহীনা বিধবাদের সাদা শাড়ি হয়ে উঠেছে দোলের রংয়ে রঙিন৷