প্রেমকাতর ব্যাঙের নৃত্য
১২ মে ২০১৪বর্ষার শুরুতে পাহাড়ে ঢল নামলেই শুরু হয় ব্যাঙের প্রজনন মৌসুম৷ কিন্তু পুরুষ ব্যাঙের প্রেমের ডাক জলের কলধ্বনিতে চাপা পড়ে যায় বলে এসব প্রজাতির সদস্যরা সঙ্গিনীদের নজর কাড়তে বিশেষ ভঙ্গিতে লম্ফঝম্প করে৷ এ কারণেই বিজ্ঞানীরা আদর করে এদের নাম দিয়েছেন নাচুনে ব্যাঙ বা ড্যান্সিং ফ্রগ৷
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সত্যভামা দাশ বিজু জানান, এসব নাচুনে ব্যাঙের আবাসস্থল গত ১২ বছরে অনেকটাই শুকিয়ে গেছে৷ ফলে তাদের সংখ্যাও দ্রুত কমে আসছে৷
‘‘বিশ্বকে নতুন এসব প্রজাতির খবর জানাতে পেরে আমাদের যেমন আনন্দ হচ্ছে, তেমনি খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ এসব ব্যাঙকে রক্ষা করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই৷''
বিজু ও তাঁর সহকর্মীরা যেসব নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন, সম্প্রতি সেগুলোর বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সিলন'এ৷ সব মিলিয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন ২৪ প্রজাতির নাচুনে ব্যাঙ পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা৷
ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জানান, এসব ব্যাঙ প্রজাতির পুরুষ সদস্যরাই কেবল নাচে৷ ক্ষুদে শরীরের দুই পাশে পা ছড়িয়ে দিয়ে তারা জোরে জোরে চাপড় দিতে থাকে৷ দেহের আকার যতো বড় হয়, নাচও হয় ততো দর্শনীয়৷
এসব প্রজাতিতে ছেলে ও মেয়ে ব্যাঙের সংখ্যার অনুপাত ১০০:১৷ ফলে প্রজনন ঋতুতে সঙ্গী জোগাড় করতে পুরুষ ব্যাঙকে যথেষ্ট কায়দা কসরত করতে হয়৷ প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূরে রাখতে লম্বা লম্বা পাগুলো তারা ব্যবহার করে৷
বিজু জানান, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু এলাকাতেও নাচুনে ব্যাঙ দেখা যায়৷ তবে মিক্রিজালিদাই পরিবারভুক্ত ভারতীয় ব্যাঙগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আলাদা হয়েছে আনুমানিক সাড়ে ৮ কোটি বছর আগে৷
‘‘ক্ষুদে এই ব্যাঙ প্রজাতির অবস্থা এতোটাই নাজুক যে পরিবেশের সামান্য পরিবর্তন ঘটলেই এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে,'' বলেন তিনি৷
ভারতে যত ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেখা মেলে, তার অর্ধেকই পশ্চিম ঘাটের এই পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়৷ কিন্তু লোহা ও বক্সাইটের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, দূষণ, অপরিকল্পিত চাষাবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহু প্রাণী প্রজাতি তাদের আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্ত হতে বসেছে৷
বিজুর ধারণা, পশ্চিম ঘাটের আদিম প্রকৃতিতে হয়ত আরো অনেক অজানা প্রজাতির ব্যাঙ আছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে বিজ্ঞানীরা খোঁজ পাওয়ার আগেই এর মধ্যে অনেক প্রজাতি হয়ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে৷
জেকে/জেডএইচ (এপি)