হলোকস্ট ‘স্মরণ দিবস’
২৭ জানুয়ারি ২০১৪শুধু ইতিহাসের পাতাতেই নয়, ফুটবলের জগতেও এই দিনটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে ফুটবল ফ্যান ও সমিতিগুলিও স্মরণ করছে দিনটিকে৷
মিউনিখ শহরের ‘ডাখাউ'-তে এক শীতের সকাল: আন্ড্রেয়াস সাইলার প্রাক্তন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তাঁর সামনে রাইনল্যান্ডের একদল তরুণ ফুটবল ফ্যান৷ শিক্ষাবিজ্ঞানী সাইলার মিউনিখের এই ফ্যান প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন৷
একটি যুব প্রকল্প
একটি সামাজিক যুব প্রকল্প এটি৷ গত কয়েক বছর ধরে আন্ড্রেয়া সাইলার ফুটবল ফ্যানদের নিয়ে ডাখাউ-এর স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করছেন৷ তিনি তাঁদের সেই সময়কার দলিল-পত্র, ছবি ইত্যাদি দেখান, বুঝিয়ে বলেন৷ জানান সামনের আপেল প্লাৎস-এ কারাবন্দিদের বিরুদ্ধে এস এস কারারক্ষীরা ফুটবল খেলতেন৷ তরুণরা বিস্ময় প্রকাশ করে৷ এখনও প্রাপ্তবয়স্ক নয় তারা৷ ফুটবলের আঘাত মুখে এসে পড়লে কারাবন্দিদের আচরণ কী রকম হতো ভেবেই পায় না এইসব কিশোর ফুটবল ফ্যান ৷
আন্ড্রেয়া সাইলার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি শুধু বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই না৷ যে কোনো ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধেই কাজ করতে চাই৷ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে এই ধরনের অনেক কিছু তুলে ধরা যায়৷ যেমন সমকামীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হতো এখানে ইত্যাদি বিষয়গুলিও আলোচনায় আনা যায়৷''
মিউনিখের কাছে ডাখাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে দুই লক্ষ মানুষকে আটক রাখা হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪১০০০ জন মারা যান৷
সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তোলে
আন্ড্রেয়া সাইলার মনে করেন, ফুটবলের হবি তরুণদের মনে সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তোলে৷ ফুটবল ফ্যানদের কনসেনট্রেসন ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখানোর আইডিয়াটা মাথায় আসে ডাখাউ-এর একটি গির্জার অ্যাকটিভিস্টদের ১৩ বছর আগে৷ ইতিমধ্যে এই ধরনের ৫০টি ‘ফ্যানপ্রকল্প' গড়ে উঠেছে৷ সমাজকর্মীরা ফুটবল ফ্যানদের নিয়ে বিভিন্ন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখান৷
আন্ড্রেয়া সাইলার জানান, ‘‘শিক্ষাদানের মনোভাব নিয়ে তরুণদের এখানে আনা চলবে না৷ বরং বিষয়টি তারা যাতে উপলব্ধি করতে পারে, সে চেষ্টা করতে হবে৷ গতবার আমরা আখেনের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এখানে এসেছিলাম৷ খুব শিগগিরই আমরা ‘মবিং' নিয়ে আলোচনায় জড়িয়ে পড়ি৷ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বিষয়টি নিজেদের জগতের সঙ্গে মিলাতে পারলে তরুণরা উৎসাহিত হয়৷''
‘ফুটবলে স্মরণ দিবস' এই প্রেরণাটি আসে ইটালির রিকার্ডো পাসিফিসির কাছ থেকে৷ রোমের ইহুদি কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট তিনি৷ ডাখাউ-এর সেই গির্জার অ্যাকটিভিস্টরা ২০০৫ সালে এই ধারণাটি ‘জার্মান স্টেডিয়ামে' নিয়ে আসেন৷ স্মরণ দিবসটি উপলক্ষ্যে ফ্রাংকফুর্টের একটি কংগ্রেসে যোগ দেন ২৭০ জন ফ্যান, বিজ্ঞানী ও ম্যানেজার৷ বক্তৃতা, ওয়ার্কশপ ও কনসার্টের আয়োজন করা হয় সেখানে৷
কিছুটা হলেও চিন্তা জাগায়
বার্লিনের বর্ণ বৈষম্য বিষয়ক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ইতিহাসবিদ ভল্ফগাং বেনৎস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্তি ক্ষণিকের জন্য চিন্তা জাগাতে পারলেও জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের কাঠামো বুঝতে সাহায্য করে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই আমি৷''
উল্লেখ্য ২০১০ সালে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ডি সাইট'-এর একটি জরিপে জানা গেছে, ১৪ ঊর্ধ্ব তরুণদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের ব্যাপারে আগ্রহী৷ তবে মাত্র ৪০ শতাংশ হলোকস্ট প্রসঙ্গে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে৷