‘১৬ জনকে আলোর পথে এনেছি’
২৭ এপ্রিল ২০১৬ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সিলেটের কুশিঘাট এলাকার বাসিন্দা ইনু জানান, তিনি লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন৷ ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ২০০০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অভিযোগ আনা হয়৷ সেই হতাশা কাটাতে এক বন্ধুর পরামর্শে প্রথমে সিগারেট, তারপর মাদকের সংস্পর্শে আসেন তিনি৷ বেশ কয়েক বছর কেটে যায় ঐ অবস্থায়৷ পরে একদিন সিলেটের পুরনো রেলস্টেশন এলাকায় মাদক সেবন করে পড়ে থাকা ইনুকে উদ্ধার করেন মেরিস্টোপস সংস্থার দুই কর্মী৷ এরপর তাদের উদ্যোগেই রাজশাহীতে এক পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাঁর চিকিৎসা হয়৷
চিকিৎসায় ভালো হয়ে সিলেটে ফেরার পর ইনুকে এড়িয়ে চলতো তাঁর আশেপাশের মানুষজন৷ তবে ইনু এবার আর হতাশ না হয়ে মাদকাসক্তদের মাদকের ভয়াল থাবা সম্পর্কে সচেতন করার কাজ শুরু করেন৷ শহরের মাদকাসক্তদের আখড়ায় গিয়ে তাদের নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে থাকেন৷ এভাবে এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে সাক্ষাৎকারে জানান ইনু৷ এর মধ্যে ১০ জন এখনও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করছে বলে জানান তিনি৷
ইনু বলেন, ‘‘মাদকাসক্ত কেউ সুস্থ হয়ে ফিরে এলে তাকে সঠিক পথে রাখতে তার পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ এছাড়া তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও জরুরি৷ না হলে আবারও একই অবস্থা হবার আশঙ্কা থাকে৷''
নিজের ক্ষেত্রে তাঁর মা তাঁকে ভালো থাকতে সহায়তা করেছে জানিয়ে ইনু বলেন, ‘‘যে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ছোট্ট শিশুর মতো আচরণ করতে হবে৷ ছোট্ট শিশুদের যেমন নতুন করে সবকিছু শেখানো হয় (ফিরে আসা) মাদকাসক্তদের সঙ্গেও সেরকম আচরণ করতে হবে৷''
‘বোনাস জীবন'
মাদকাসক্ত জীবন থেকে সুস্থ হয়ে ওঠায় এখনকার জীবনকে ‘বোনাস' হিসাবে দেখছেন ইনু৷ এই জীবনে মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না থেকে তিনি এখন নিজেকে সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছেন৷ মাদকাসক্তদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি স্কুল চালু করেছেন৷ ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিজের টাকা খরচ করে এলাকার শিশুদের শিক্ষা দিয়েছেন৷ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এক টুকরো জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘ইনুর ইশকুল'৷ ২০১৪ সাল থেকে সিলেটের একটি অনলাইন পোর্টালের সহায়তায় স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে৷
এছাড়া এলাকার দরিদ্র নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে তাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন ইনু৷ বাল্যবিবাহ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মেয়েদের সচেতন করতে মানববন্ধন সহ অন্যান্য উদ্যোগও নিয়ে থাকেন বর্তমানে সেভ দ্য চিলড্রেন এর মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা ইনু৷
প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান
সাক্ষাৎকারে ইনু মাদকাসক্তদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ মাদকের কুফলগুলো আরও বেশি করে প্রচারের মাধ্যমে সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি৷
বন্ধুরা, ইমতিয়াজ রহমান ইনু জীবনের কথা, তাঁর কাজ আপনার কেমন লাগলো? আপনার মতামত আমাদের জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷