৭৮' বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি?
৯ জুলাই ২০১৪এ যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক ছবি৷ কারণ বুধবার, সাও পাওলোতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪-র দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আবারো মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা এবং নেদারল্যান্ডস৷ ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম সেমি ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা৷ তাই ভক্তদের আশা আর্জেন্টিনা এবার শিরোপা খরা কাটিয়ে উঠবে৷
এটা খুবই স্বাভাবিক যে গত ম্যাচে ডি মারিয়ার থাই মাসল ইনজুরির কারণে আর্জেন্টিনা পুরোটাই নির্ভর করবে মেসির উপর৷ ফলে আগের চেয়েও বার্সা তারকার উপর চাপ বাড়বে বই কমবে না৷ ডাচদের মতো এবারের বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচেই জিতেছে আর্জেন্টিনা৷
ডি মারিয়া দলের না থাকায় ব্যথিত কোচ আলেহান্দ্রো সাবেলা৷ তিনি বলেন, ‘‘মেসি যেন মরুভূমিতে এক মরুদ্যান৷ কেন না মেসির পায়ে যখন বল থাকে, তখন প্রত্যেকেই আশায় উজ্জ্বীবিত হন৷ আর বিপক্ষ দলের জন্য এটাই তখন ভয়ের একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷''
স্প্যানিশ স্পোর্টস ডেইলি মার্কাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছেন, ‘‘আর্জেন্টিনা আমার দেশ, আমার পরিবার, আমার আবেগ প্রকাশের পথ৷ আমার দেশের মানুষকে খুশি করতে আমি সব রেকর্ড ভাঙতে পারি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এবারের বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচে আমরা জিতেছি৷ আশা করি, এ ধারা যেন ফাইনাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে৷''
এছাড়াও আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য আশার খবর হলো, ইনজুরি কাটিয়ে এবার দলে ফিরতে পারেন স্যার্খিও আগুয়েরো-ও৷ তবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ডাচদের রেকর্ড কিন্তু ভালো৷ বিশ্বকাপে চার বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল৷ হল্যান্ড জিতেছে দুটিতে, আর্জেন্টিনা একটিতে৷ একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে৷ ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে হল্যান্ডের বিপক্ষে চার গোলে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা৷ ১৯৯৮ সালে কোয়ার্টচার ফাইনালে ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারায় হল্যান্ড৷ আর ২০০৬ সালে প্রথম রাউন্ডে দু'পক্ষের মধ্যে ড্র হয়৷
১৯৭৮-এর ফাইনালের উল্লেখ করে ডাচ গোলরক্ষক টিম ক্রুল বলেন, ‘‘আমরা যদি শিরোপা জিতি তখনই বলতে পারব যে, আমরা আর্জেন্টিনার উপর উপযুক্ত প্রতিশোধ নিয়েছি৷ তার আগে নয়৷''
ডাচ কোচ লুইস ফান খালের মতে, আর্জেন্টিনা একটি চমৎকার দল৷ কেন না প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের নিজস্ব স্টাইল আছে, যেমন মেসি৷ কিন্তু প্রথমার্ধে খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য তারা পুরোটা ব্যবহার করে না৷'' অর্থাৎ লুইস ফান খালের চেষ্টা থাকবে দলকে এমন করে প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে তারা প্রথমার্ধেই এগিয়ে থাকে৷
ডি মারিয়া ইনজুরি আক্রান্ত হলেও মেসি থাকায় সাবেলা আপাতত চিন্তিত নন৷ তবে আরিয়েন রবেন আর ফান প্যার্সিকে আর্জেন্টিনার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন তিনি৷ এদিকে, চোটের কারণে সেমিফাইনালে হল্যান্ডের বিপক্ষে থাকছেন না আনহেল ডি মারিয়া৷ আর্জেন্টিনার এই মিডফিল্ডারের বিকল্প কে হতে পারেন – এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার সীমা নেই৷
এনজো পেরেজ
ডি মারিয়ার মতো গতি না থাকলেও ব্যক্তিগত কৌশলে ভীষণ পারদর্শী পেরেজ৷ সর্বশেষ মৌসুমে বেনফিকার হয়ে খেলা পেরেজ নির্বাচিত হয়েছেন পর্তুগিজ লিগের বর্ষসেরা খেলোয়াড়৷
মাক্সি রদ্রিগেজ
রক্ষণভাগের শক্তি বাড়াতে সাবেলা বেছে নিতে পারেন রদ্রিগেজকে৷ কেননা সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ কাঁপাতে তিনি সিদ্ধহস্ত৷ এছাড়া টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলায় অভিজ্ঞতাও বেশি৷
রিকার্ডো আলভারেজ
ধারণা করা হচ্ছে, ডি মারিয়ার জায়গাই আলভারেজই সাবেলার কাছে প্রথম পছন্দ৷ কেননা মধ্যমাঠে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখতে আলভারেজের জুড়ি মেলা ভার৷
ফার্নান্দো গাগো
গাগোকেও ডি মারিয়ার স্থলাভিষিক্ত করা হতে পারে৷ আর্জেন্টিনা যদি আক্রমণ কমিয়ে রক্ষণে বেশি মনোযোগ দেয়, তবে শুরু থেকেই খাভিয়ের মাসকেরানো ও লুকাস বিগলিয়ার সঙ্গে বোকা জুনিয়র্স মিডফিল্ডার গাগোর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হতে পারে৷
অগুস্তো ফার্নান্দেজ
অন্যদের তুলনায় সুযোগটা একটু কমই৷ এ বিশ্বকাপে এখনো মাঠেই নামা হয়নি৷ তবে সাবেলা যদি হল্যান্ডের ভয়ংকর লেফট-উইং-ব্যাক ডেলি ব্লাইন্ডকে নিষ্ক্রিয় করতে চান, সে ক্ষেত্রে ফার্নান্দেজের মাঠে নামার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)