২০১০ পরিবেশের জন্য কঠিন এক বছর
৩১ ডিসেম্বর ২০১০যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমন্ডলীয় প্রশাসনের মতে ২০১০ সালটি ছিল প্রচণ্ড গরম এক বছর৷ ১৮৮০ সালের শুরুতে যে গরম রেকর্ড সৃষ্টি করে ২০১০ সালটিও সেইরকম একটি গরম বছর ছিল৷ সাথে ছিল চরম আবহাওয়া, একের পরে এক দাবানলের ঘটনা, হিমবাহ গলে যাওয়া, অগ্নুৎপাত ঘটনা এবং সূর্যের তপ্ত রশ্মিতে প্রবাল বিবর্ণ হয়ে যাওয়া৷
রাশিয়ার উত্তর ককেশাসের দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রে সিবারি বসতি পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে. এখানকার শতকরা ৮০ ভাগ ভবন আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে৷ দাবানল এবং চরম আবহাওয়ার কারণে রাশিয়াতে ফসলের উৎপাদন শতকরা ৪০ ভাগ নীচে নেমে যায়৷
এশিয়াতে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে৷ ভারতীয় অববাহিকা এবং পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উঠে উত্তপ্ত৷ এই মধ্যে গত জুলাইয়ে পাকিস্তানে দেখা দেয় ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা৷ কয়েক সপ্তাহব্যাপী এই বন্যা দু'হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ বন্যা কবলিত হয় পাকিস্তানের ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ৷ জাতিসংঘের হিসাবে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভেঙেগেছে প্রায় বিশ লাখ ঘর-বাড়ি৷ দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা দুর্গত লাখ লাখ মানুষের চরম কষ্ট ও দুর্দশার এখনও লাঘব হয়নি৷ ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে৷
ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট মেরাপি আগ্নেয়গিরিতে ১শ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম অগ্নুৎপাতের কথা মনে আছে তো? যাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৭৮ জন৷ ১৯৩০ সালের পরে প্রথম ২০১০সালের নভেম্বরে ঐ আগ্নেয়গিরিটি থেকে এই রকম ভয়াবহ অগ্নুৎপাত হয়৷ আর ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি থেকে অব্যাহতভাবে নির্গত ছাই আকাশে ছড়িয়ে পড়ার কথা মনে আছে তো আপনাদের? যে কারণে ইউরোপের বিমান চলাচল ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ অন্তত ২০টি দেশ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল৷ ইউরোপের আকাশ ঢাকা পড়েছিল ছাই মেঘে৷
আর মেক্সিকো উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা তো বিশ্বে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তা সবারই জানা৷ ২০১০-এর এপ্রিলে উপসাগরে একটি তেলের রিগে বিস্ফোরণে ১১ জন প্রাণ হারান৷ মধ্য জুলাইয়ে তেলের পাইপে ক্যাপ না পরানো পর্যন্ত তেল নিঃসরণ হতেই থাকে৷ ৫০ লাখ ব্যারেল তেল পড়ে সাগরের পানিতে৷ ঐ অঞ্চলের বেশিরভাগ মৎস সম্পদই ধ্বংস হয়৷ পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়নি৷ মার্শল্যান্ডস এবং সৈকত পরিষ্কারে বছরের শেষে ডিসেম্বরেও কাজ করে চলেছেন ৯ হাজার কর্মী৷
ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট জোনাথন ল্যাশ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ২০১০ সালেও জলবায়ু আইন পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ বছরের শেষে আরেকটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য আয়োজন ছিল, মেক্সিকোর কানকুনে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন৷ নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন৷ দুই সপ্তাহব্যপী জলবায়ু সম্মেলন শেশ হয়েছে জলবায়ু তহবিল গঠনের মধ্যে দিয়ে৷ ১৯০টি দেশের পরিবেশমন্ত্রীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছতে সমর্থ হন৷ সমঝোতা হয়, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড' নামে একটি সংস্থা গঠনের ব্যাপারে৷ সংস্থাটির কাজ হবে ধনী দেশের কাছ থেকে টাকা এনে গরিব দেশগুলোকে দেয়া৷ ২৪ সদস্যের একটি দল এই তহবিল পরিচালনা করবে৷ এজন্য ধনী ও গরিব দেশ থেকে সমান সংখ্যক লোক নির্বাচন করা হবে৷ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে আরো যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে, কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে ধনী দেশগুলো৷ এতদিন তারা বলে আসছিল এটা আর বাড়ানো হবেনা৷ আর তৃতীয় সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ ‘উল্লেখযোগ্য হারে' কমানো প্রয়োজন বলে সবাই একমত হয়েছেন৷ কিন্তু সেটা কীভাবে করা হবে সে বিষয়ের কিছু উল্লেখ করা হয়নি সমঝোতা চুক্তিতে৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক