২৫ মার্চে স্বচক্ষে দেখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা
২৪ মার্চ ২০২৩১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহূর্ত৷ রাতেই পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় স্বাধীনতাকামী বাঙালি৷ ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া বহর নিয়ে রাজপথে নামে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী৷
রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ও পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়৷
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিনে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছিল ১ লাখ বাঙালিকে৷
২৫ শে মার্চ রাত নিয়ে কথা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তখন অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মো. আবু শামার সঙ্গে৷ তার মুখে ভয়াবহ সেই রাতের বর্ণনা উঠে এসেছে এভাবে, ‘‘রাজারবাগে আক্রমণটা হবে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সে সম্পর্কে ২৩ ও ২৪ মার্চেই ক্লিয়ার হয়ে যাই৷ পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা রাজারবাগকে সিরিয়াসভাবে টার্গেট করে রেখেছিল৷ কারণ, ইস্ট পাকিস্তানের বৃহত্তম পুলিশ লাইনস ছিল রাজারবাগ৷ সেখানে বাঙালি সদস্য ছিল সবচেয়ে বেশি৷’’
‘‘রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা৷ একটা ওয়্যারলেস মেসেজ আসে তেজগাঁও এলাকায় পেট্রোলে থাকা ওয়্যারলেস অপারেটর আমিরুলের কাছ থেকে৷ মেসেজে বলা হয়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩৭ ট্রাক সশস্ত্র সেনা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে৷ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ সেন্ট্রিও তখন পাগলা ঘন্টি পিটায়৷’’
‘‘অস্ত্রাগারে গিয়ে দেখলাম তালা মারা৷ সেন্ট্রি বলে, ‘হাশেম স্যার (সুবেদার আবুল হাশেম) তালা মাইরা চাবি নিয়া গেছে মফিজ স্যারের বাসায়৷’ দৌড়ায়া গেলাম সেখানে৷ তার কাছে অস্ত্রাগারের চাবি চাই৷ প্রথম দিতে চায়নি৷ চাপের মুখে তিনি একটা অস্ত্রাগারের চাবি দেন৷’’
‘‘ওই চাবি নিয়া একটা অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দিই৷ এরপর শাবল দিয়া আরেকটির তালা ভেঙে ফেললে ভেতরের অস্ত্রগুলো যে যার মতো নিয়ে যায়৷ অবাঙালি সদস্যরা আগেই পালিয়ে যায় পুলিশ লাইনস থেকে৷ শুধু সুবেদার বদরুদ্দিন খান অবাঙালি হয়েও আমাদের পক্ষে ছিলেন৷’’
‘‘শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপরে আর মালিবাগ এসবি ব্যারাকের ছাদে আমাদের দুইটা গ্রুপ চলে যায়৷ প্যারেড গ্রাউন্ডে একটা গ্রুপ, এক নম্বর ও দুই নম্বর গেইট, মূল ভবনের ছাদ ও বিভিন্ন স্থানে পজিশন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি আমরা৷’’
‘‘রাত আনুমানিক ১১টা৷ পাকিস্তানি কনভয়ের ওপর শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপর থেকে পুলিশ প্রথম গুলি চালায়৷ আমরাও শব্দ পাই৷ পাকিস্তানি আর্মিদের ওপর ওটাই ছিল প্রথম আক্রমণ৷’’
‘‘শাহজাহান, আব্দুল হালিম, ওয়্যারলেস অপারেটর মনির, গিয়াসউদ্দিনসহ পজিশনে থাকি মূল ভবনের ছাদে৷ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজারবাগের দিকে ওরা আক্রমণ করে৷ আমাদের ১০টা গুলির বিপরীতে ওরা জবাব দিয়েছে প্রায় কয়েক হাজার গুলির মাধ্যমে৷ ওরা ট্যাংক, মর্টার ও হেভি মেশিনগান ব্যবহার করে৷ অল্প সময়ের ভেতর টিনশেডের ব্যারাকগুলোতে আগুন লেগে যায়৷ জীবন বাঁচাতে ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে৷ পাকিস্তানি সেনারা তখন ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে৷’’
‘‘ফজরের আজানের পর আর্মিরা রাজারবাগের এক ও দুই নম্বর গেট দুটি ট্যাংকের সাহায্যে ভেঙে ভেতরে ঢোকে৷ আসে ১০টি খালি ট্রাকও৷ এক থেকে দেড়শ পুলিশের লাশ পড়ে ছিল৷ ওগুলো ট্রাকে করে ওরা সরিয়ে ফেলে৷’’
‘‘ভেতরে ঢুকে ছাদে উঠে টেনেহিঁচড়ে নামায় আমাদের৷ বেয়োনেট দিয়েও খুঁচিয়েছে, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হাত ওপর দিকে তুলে মারতে মারতে নীচে নামিয়েছে৷ তারপর রাস্তায় ফেলে ক্রলিং করায় আর নির্দয়ভাবে পেটায়৷’’
‘‘দেখলাম একটা ময়লার ড্রেনে পড়ে আছে আমাদের ক্যান্টিন বয়৷ বয়স চৌদ্দ বছরের মতো৷ আর্মিরা তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে পিচঢালা রাস্তায় এনে আছড়ায়৷ তার মুখ ফেটে রক্ত বের হতে থাকে৷ ছেলেটা কাঁপতে কাঁপতে বলছিল ‘‘পানি, পানি৷’’ এক পাকিস্তানি আর্মি পাশে নিয়ে প্যান্টের জিপার খুলে তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়৷ ওই মুহূর্তটা খুবই খারাপ লাগছিল৷ মানবতা প্রতি মুহূর্তে পদদলিত হয়েছে রাজারবাগে!’’
‘‘তিনদিন আটকে রেখে আমাদের ওপর নির্মমভাবে টর্চার করে ওরা৷ রাইফেলের বাঁটের আঘাত, বুটের নীচে ছিল লোহার পাত, সেটা দিয়ে দেয় লাথি, শরীরের প্রতিটি জায়গা ছিলে যায়, রক্তাক্ত হই৷ মুখেও আঘাত করেছে৷ সবগুলো দাঁতের গোড়া ভেঙে যায়৷ ফলে সব দাঁতই পড়ে গেছে৷ এক ফোঁটা পানিও খেতে দেয়নি৷ শরীরের রক্ত মুখে চলে এলে লবণ-কাঁটা লাগতো৷ ভাবিওনি বেঁচে থাকবো৷ বেঁচে আছি এটাই আল্লাহর রহমত৷’’
পুলিশ লাইনসের প্রতিরোধযোদ্ধারা কেউ-ই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বীরউত্তম বা বীরপ্রতীক খেতাব পাননি৷ স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরও রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়া কোনো পুলিশ সদস্যকেই স্বাধীনতা পুরস্কার বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়নি৷ পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের ইতিহাসটিও যুক্ত হয়নি কোনো পাঠ্যপুস্তকে৷ এমন নানা কষ্ট বুকে পুষেই বেঁচে আছেন রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়া পুলিশ যোদ্ধারা৷
ওই রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল ও রোকেয়া হলেও গণহত্যা চালায়৷ বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ ১৯৫ জন শহিদের তালিকা করলেও বিভিন্ন তথ্য বলছে ওই রাতে সেখানে আড়াই শ থেকে তিন শ জনকে হত্যা করা হয়েছে ৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওয়্যারলেসের সংলাপেও হত্যার এমন সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়৷ জগন্নাথ হলে হত্যার শিকার হন ৪ শিক্ষক, ৩৬ ছাত্র এবং ২১ কর্মচারী ও অতিথি৷ ছয় ছাত্রকে পাকিস্তানি সেনারা কবর খোঁড়ার কাজে লাগায়৷ এরপরও তারা বাঁচতে পারেনি৷ ইকবাল হলে ওরা ১১ ছাত্রকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে৷ এরপর রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দিলে ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হয়েআসে৷ তাদের তখন মেশিনগান দিয়ে অবিরাম গুলি করা হয়৷ অনেককে হত্যা করা হয় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে৷ রশীদ হায়দার সম্পাদিত ১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, অধ্যাপক রতনলাল চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা: ১৯৭১ জগন্নাথ হল, রঙ্গলাল সেন সম্পাদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান নামের গ্রন্থ এবং মেজর সিদ্দিক সালিক (ঢাকার সে সময়ের মার্কিন কনসাল জেনারেল) কর্তৃক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো ‘উইটনেস টু স্যারেন্ডার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্যের উল্লেখ রয়েছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছিলেন মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন৷ ২৫ মার্চে রাতে কী কী দেখেছিলেন তিনি?
তাঁর ভাষায়, ‘‘২৫ মার্চ সকাল থেকেই হল ছাড়তে থাকে ছাত্ররা৷ শেষে ছিলাম মাত্র একচল্লিশ জনের মতো৷ ডাইনিং বন্ধ৷ রাতের খাবারের জন্য চলে যাই সচিবালয়ের পেছনে, চিটাগাং রেস্টুরেন্টে৷ হঠাৎ সাঁজোয়া যানের শব্দ৷ দেখলাম আর্মির কনভয় যাচ্ছে৷ ওদের চোখেমুখে হিংস্রতার ছাপ৷ দ্রুত হলের উত্তর গেটে আসতেই শুরু হয় কামানের গর্জন৷ গোলাগুলিরও শব্দ পাই অবিরত৷’’
‘‘আমরা চার বন্ধু হলের ছাদে অবস্থান নিই৷ নানা শঙ্কায় কাটে গোটা রাত৷ ওরা আগে আলোর মতো একটা গুলি ছোঁড়ে৷ এরপরই ফায়ার করতে থাকে৷ রাত দুইটার পর দেখি পুরান ঢাকার দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে৷ চারপাশে শুধু গুলি, চিৎকার আর মানুষের কান্নার শব্দ৷ ফজরের আজান পড়েছে তখন৷ কিন্তু আজানের সময়ও পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল৷ কেন জানি ওরা ফজলুল হক হলে আসেনি৷ ফলে দৈবক্রমে বেঁচে যাই আমরা৷’’
‘‘২৬ মার্চ ভোরবেলায়, শহিদুল হক হলে অ্যাটাক হয়৷ ছয় জনের লাশও পড়েছিল৷ আর্মিরা আমাদের হলে আসে৷ আমরা যে যার মতো লুকিয়ে থাকি৷ আমি চলে যাই তিনতলায়, ৩৫২ নম্বর রুমের বারান্দায়৷’’
‘‘ওরা এলে দারোয়ান বলে, ‘এই হলে ভাল ছাত্ররা থাকে৷ ছুটির কারণে সবাই বাড়ি চলে গেছে৷ এখন কেউ নাই, স্যার৷' কিন্তু বাংলাদেশের একটি পতাকা তখনও হলের সামনে পতপত করে উড়ছিল৷ তা দেখে আর্মিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, অশ্লীল একটা গালি দিয়ে দারোয়ানের ওপরই চড়াও হয়৷ এরপর পতাকাটি নামিয়ে বুটের তলায় কিছুক্ষণ মাড়িয়ে তাতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়৷ রাগে চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে৷ একটি গুলি এসে পড়ে আমার ঠিক সামনেই৷ কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে আর্মিরা তখন অন্যত্র চলে যায়৷ ফলে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকেই ফিরে আসি৷’’
একাত্তরে তৌফিকুর রহমানরা থাকতেন সরকারি কোয়ার্টারে, চাঙ্খারপুলের রশিদ বিল্ডিংয়ে৷ ২৫ মার্চের রাতের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সারারাত গোলাগুলির শব্দ৷ ওরা যে গণহত্যা চালিয়েছে এটা ক্লিয়ার হই ভোরের দিকে৷ গেটের বাইরে গিয়েই থ বনে যাই৷ রাস্তা সুনসান৷ হঠাৎ কার্জন হলের দিক থেকে একটা আর্মিদের জিপ আসে৷ জিপে এলএমজি ফিট করা৷ ওরা ফায়ার করতে করতে আসছে৷ স্যান্ডেল ফেলে দৌড়ে দেয়াল টপকে কোনোরকমে বাসায় চলে আসি৷ বাসার সামনে টং দোকানে একটা ছেলে সিগারেট বিক্রি করতো, বরিশাল বাড়ি তার৷ দোকানের ভেতর থেকে সে বের হতে গেলে তাকেও গুলি করে হত্যা করে ওরা৷’’
‘‘পরে ভয়ে ভয়ে জগন্নাথ হলের দিকে যাই আমি৷ রাতে ওদিকেই গুলির শব্দ হচ্ছিল৷ দূর থেকে দেখলাম অনেক মানুষের গুলিবিদ্ধ ডেডবডি পড়ে আছে৷ কারো মাথায়, কারো বুকে, কারো পেটে গুলি লেগেছে৷ কয়েকজনকে বেওনেট দিয়ে খুচিয়েও মারা হয়েছে৷ রক্তের গন্ধ তখনো ছড়াচ্ছিল৷ এক রাতে ওরা ফুলবাড়িয়া রেললাইনের দুই পাশের বস্তিগুলোও পুড়িয়ে দেয়৷ মানুষের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে ঢাকার বাতাস৷’’
বজলুল মাহমুদ বাবলুর বাড়ি ঢাকার সেন্ট্রালরোডে৷ তিনি বলেন, ‘‘সারারাত শুনেছি মানুষের আর্তচিৎকার ও গুলির শব্দ৷ পরেরদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ ওঠে৷ মানুষ তখন ঢাকা থেকে পালাতে থাকে৷ মোড়ে মোড়ে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি আর্মি৷ নিউ মার্কেটের দিকে এগোতেই দেখি লাশের স্তূপ৷পলাশী হয়ে ইকবাল হলের দিকে যেতেই চোখে পড়ে শত শত লাশ৷ ওইদিন ঢাকার রাজপথে ছিল পঁচা লাশের গন্ধ৷’’
কামরুল আমানরা থাকতেন নারায়ণগঞ্জে৷ ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার কথা তিনি তুলে ধরেন এভাবে, ‘‘কারফিউ চলছিল৷ তা শিথিল হতেই রওনা হই ঢাকার দিকে৷ মাতুয়াইলে এসে দেখি রাস্তার ঢালে পড়ে আছে ৭-৮জনের গলাকাটা লাশ৷ তাদের কখন মারা হয়েছে কেউ জানেন না৷ দেহ তখনও কই মাছের মতো নড়ছিল৷ এ যেন জিন্দা লাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় গিয়ে দেখি একজনের হাতের কব্জি বেরিয়ে এসেছে মাটির ওপরে৷ তারপরে ছুটে যাই শাঁখারি পট্টিতে৷ কী নির্মমভাবে ওরা মানুষ পুড়িয়েছে! কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাশেই শাঁখারি পট্টির প্রবেশমুখ৷ সেটি বন্ধ করে আগুন দিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা৷ সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ কয়েকটি বাড়িতে তখনও আগুন জ্বলছিল৷ একটি বাড়িতে পা রাখতেই গা শিউরে ওঠে৷ মানুষ পুড়ে তার চর্বি গলে মেঝেতে পড়ে আছে৷ তাতে পড়েছে আমার পা৷ এর চেয়ে ভয়াবহ আর মর্মান্তিক দৃশ্য আর কী হতে পারে!’’
২৫ মার্চে ঢাকার গণহত্যায় শহিদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি, সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার স্থানগুলোও৷ বরং নিশ্চিহ্ন ও দখল হয়ে গেছে একাত্তরের অনেক স্মৃতিস্থান৷ সবই রক্ষার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের৷
এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি সেনারা এদেশে যে সীমাহীন গণহত্যা চালিয়েছে, তার জন্য এত বছরেও ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশও করেনি পাকিস্তানের কোনো সরকার, বিচার করেনি তৎকালীন একজন জেনারেলেরও৷ ওইসময়ে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’৷ গত অক্টোবর মাসে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক ৮ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবও তোলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে৷ তা বাংলাদেশের পক্ষে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সহায়ক হবে বলে মনে করেন অনেকেই৷ কিন্তু এ বিষয়ে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় বিশেষ উদ্যোগ৷একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার অপরাধ প্রমাণের তথ্য-উপাত্ত ও প্রামাণ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্বজনমত গড়ার কার্যকরী কর্মসূচি নিতে হবে সরকারকেই৷ কিন্তু সে উদ্যোগ কবে প্রকাশ্য হবে?