নদী ও জলাশয় দখলেই রাখতে চান আসলামুল হক
৩ ডিসেম্বর ২০২০কমিশন বলছে, সংসদ সদস্য আসলামুলকে নদী ও জলাশয় ছেড়ে দিতে হবে৷ তিনি সংসদ সদস্য এটা তাদের কাছে বিবেচ্য নয়৷ এরইমধ্যে বিআইডাব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আসলামুলের দখলে থাকা নদী ও জলাশয় উদ্ধার করতে বলা হয়েছে৷
২০১৩ সালে গঠিত নদী কমিশনকে নদী ও জলাশয় রক্ষায় সব ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার৷
নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকা-১৪ আসনের (মিরপুর) আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক ঢাকার তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগ স্থলের প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন৷ মোহাম্মদপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু যা বছিলা সেতু নামে পরিচিত তার ডান পাশে আসলামুলের দখল করা নদী ও জলাশয়ের অবস্থান৷ সেখানে তিনি ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন’ এবং ‘মায়িশা গ্রুপের’ পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তুলেছেন৷ এই এলাকায় তার নদী ও জলাশয় দখলের পরিমান ৫৪ একরেরও কিছু বেশি৷
এসব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে বলা হলেও তিনি তা সরিয়ে নেননি৷ গত মার্চে বিআইডাব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে সাংসদ আসলামুল তাতে বাধা দেন৷ ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হন৷ এরপর তিনি আদালতে যান এবং একইসঙ্গে তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে আবেদন করেন যে তিনি নদী ও জলাশয় দখল করেছেন কিনা তা দেখার জন্য৷ আর এখন নদী রক্ষা কমিশন দখলের সত্যতা পেলেও তিনি এখন তা মানতে চাইছেন না৷
সংসদ সদস্য আসলামুল হকের দাবি, ‘‘নদী রক্ষা কমিশনের ভূমি জরিপের কোনো বৈধতা নাই৷ আমার নামে এই জমি এবং জমির নাম জারি ও রেকর্ড পত্র আমার কাছে আছে৷ আমি কোনো নদী ও জলাশয় দখল করিনি৷ কমিশনকে প্রমাণ করতে হবে যে ওই জমি নদী ছিলো৷ তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি৷ আমি দখল করিনি৷ ওই জমি কিনে নিয়েছি৷’’ তার কথা, ‘‘ওই এলাকায় শত শত একর জমি আছে৷ আমি দখল করলে এত অল্প জায়গা দখল করব কেন?’’
তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমার মানহানি করা হয়েছে৷ আমি এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবো৷ আমি আসলামুল হক এমপি এত সহজে সবকিছু ছেড়ে দেব না৷’’
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার জানান, কমিশন কোনো জরিপ করেনি৷ নদীর ওই জায়গা সংক্রান্ত যত গ্রহণযোগ্য তথ্য উপাত্ত আছে তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ আর কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে কাজ করেছে৷ তাদের সঙ্গে ছিলো ঢাকা জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো), বিআইডাব্লিউটিএ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর৷ সবার মতামত আছে প্রতিবেদনে৷ তিনি জানান, ‘‘এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ৷ কোনো কিছু গোপন করা যায় না৷ নদীর জায়গা চিহ্নিত করতে জিপিআরএস এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে৷’’
‘‘আসলামুল হক সংসদ সদস্য হয়েও যদি আইন না জানেন তাহলে আমাদের আর কী বলার থাকতে পারে৷ আইন মেনেই নদী রক্ষা করা হবে,’’ বলেন কমিশন চেয়ারম্যান৷
আসলামুল হকের বিরুদ্ধে নদী ও জলাশয়ের যে ৫৪ একর জমি দখলের প্রমাণ পেয়েছে নদী রক্ষা কমিশন তার মধ্যে সরাসরি বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদী ১৩ একর, নদী বন্দরের (ল্যান্ডিং স্টেশন) সীমার জমি আট একর এবং বাকি জমি ড্যাপের আওতাভুক্ত ফ্লাড ফ্লো জোন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখলের কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে৷
তবে আসলামুলের দাবি, ‘‘ফ্লাড ফ্লো জোন বলতে কিছু নাই৷ ওই এলাকার বেড়িবাঁধ তুলে দিলে ঢাকা শহরও ফ্লাড ফ্লো জোনে পরিণত হবে৷ আর ড্যাপের কাজ তো ড্যাপ করবে ৷ নদী রক্ষা কমিশনের সেটা কাজ নয়৷’’
নদী রক্ষায় যেকোনো ধরনের কাজ করার আইনগত ক্ষমতা আছে নদী কমিশনের৷ এমনকি সরকারও নদী উন্নয়নের কোনো কাজ করতে গেলে কমিশনের অনুমতি লাগবে বলে জানান কমিশন চেয়ারম্যান৷ তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টে আসলামুল হকের আগের আবেদন নিয়ে শুনানি চলছে৷ তাতেও উচ্ছেদে বাধা নাই৷ আমরা বিআইডাব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে বলেছি৷’’
এই নদী কমিশনে সংসদ সদস্য আসলামুল হক নিজেই আবেদন করেছিলেন বিআইডাব্লিউটিএর অভিযানের সময়৷ তখন তিনি কমিশনে হাজির হয়ে দখল ছেড়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বলে জানান কমিশন চেয়ারম্যান৷
কমিশন তাদের এই প্রতিবেদন হাইকোর্টেও দাখিল করেছে৷
২৯ সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...