৬১ বছর পর তিন প্রধান ম্লান
৫ অক্টোবর ২০১৯কলকাতার প্রাচীন সংস্থা পিয়ারলেসের অধীনে চলে পিয়ারলেস স্পোর্টস ক্লাব৷ ১৯৯৩ সালে তৈরি হওয়া এই ক্লাব ময়দানে সবচেয়ে বড় সাফল্য পেলো৷ এই বছর কলকাতা লিগের চ্যাম্পিয়ন তারা৷ তাদের সঙ্গে লিগের দৌড়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল৷ গত রবিবার পিয়ারলেস ও ইস্টবেঙ্গলের দুটি ম্যাচ ছিল৷ পিয়ারলেস সেদিন জর্জ টেলিগ্রাফকে হারিয়ে ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠে যায়৷
ইস্টবেঙ্গলের খেলা ছিল কাস্টমসের সঙ্গে৷ কিন্তু মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে পড়ায় খেলা বাতিল হয়ে যায়৷ তবে, ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে পিয়ারলেসকে টপকে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল৷ শেষ ম্যাচে সাত গোলে জিততে হতো কাস্টমসের বিরুদ্ধে৷ আইএফএ বৃহস্পতিবার বাতিল ম্যাচটি আবার আয়োজন করেছিল৷ কিন্তু, ইস্টবেঙ্গল নির্ধারিত সময়ে মাঠে উপস্থিত হয়নি৷ ফলে কাস্টমস ওয়াকওভার পেয়ে যাওয়ায় ইতিহাস তৈরি করল পিয়ারলেস৷
এতদিন কলকাতা লিগ ছিল যেন তিন প্রধান দল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহামেডানের সম্পত্তি৷ এই তিন দলের মধ্যেই লিগের খেতাব হাতবদল হতো৷ গত ছয় দশক এভাবেই চলেছে৷ ৬১ বছর আগে শেষবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল৷ ১৯৫৮ সালে কলকাতার তিন বড় দলকে ডিঙিয়ে লিগ জিতেছিল ইস্টার্ন রেল৷ সেই ইতিহাসের নায়ক ছিলেন ময়দানের কিংবদন্তি ফুটবলার প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি পিকে নামে বিখ্যাত৷ ইস্টার্ন রেলের হয়ে তিনি ১২টি গোল করেছিলেন৷ একঝাঁক বাঙালি ফুটবলারের হাত ধরে এসেছিল সেই সাফল্য৷
মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল জাতীয় স্তরে আই লিগে খেলার জন্য দল তৈরি করে৷ কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফুটবলারদের দলে নেওয়া হয়৷ এর বিপরীতে ছোট দলগুলির বাজেট সামান্য৷ ফলে ধারে-ভারে এগিয়ে থাকা প্রধান দলগুলি সহজেই কলকাতা লিগে জয় পায়৷ পিয়ারলেস সেই জয়যাত্রা থামিয়ে দিলো৷ দলের এই সাফল্যের নেপথ্যে প্রধান কারিগর পিয়ারলেস স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি পতিতপাবন রায়৷ পিয়ারলেসের এই শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কোনো ম্যাজিকে এই সাফল্য আসেনি৷ আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছি৷ একই দল রেখে দেওয়া হয়েছে৷ সকলের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে৷ এই বন্ধনের ফলে দলের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের এমডি এস কে রায় আমাদের সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন৷'' সম্পর্কের গভীরতা আছে বলেই পিয়ারলেসের নাইজেরীয় তারকা, লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার আনসুমানা ক্রোমা পতিতপাবন রায়কে বাবা বলে ডাকেন৷ প্রবীণ এই কর্তা অন্য ফুটবলারদের কাছেও পিতৃতুল্য৷
সত্যিই ধারাবাবিকভাবে ভালো খেলছে পিয়ারলেস৷ গতবার লিগে তারা দ্বিতীয় স্থানে ছিল৷ ২০১৭ সালে চতুর্থ ও ২০১৬ সালে পঞ্চম স্থানে ছিল দলটি৷ আস্তে আস্তে তারা সাফল্যের শীর্ষে উঠেছে৷ এক্ষেত্রে বাঙালি ফুটবলারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৷ কলকাতার দলগুলিতে এখন বাঙালি ফুটবলারদের জায়গা কমে এসেছে৷ বিদেশি ও ভিনরাজ্যের ফুটবলারদের রমরমা বেড়েছে৷ কিন্তু ইস্টার্ন রেলের মতো অনেক বাঙালি ফুটবলার রয়েছেন পিয়ারলেসে৷ অভিনব বাগ, জিতেন মুর্মু, অরূপ দেবনাথ, মনতোষ চাকলাদারদের অসাধারণ লড়াইয়ে সাফল্য এসেছে৷
এটাকে বাংলার ফুটবলের পক্ষে ইতিবাচক বলে মনে করছেন পিয়ারলেসের কোচ জহর দাস৷ তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি ফুটবলাররা কলকাতা লিগের গুরুত্ব বোঝে৷ তারা মনপ্রাণ দিয়ে খেলেছে৷ পঙ্কজ মওলা, দিব্যেন্দু দুয়ারি, লক্ষ্মী মান্ডি, অনিল কিস্কু, ফুলচাঁদ হেমব্রমের নাম বলতে হবে৷ ক্লাবকর্তারা ভালো দল করেছেন, উপযুক্ত পরিকাঠামো দিয়েছেন৷ আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেননি৷ তার ফলেই সাফল্য এসেছে৷''