সলমান রুশদি
১৮ জুন ২০১২বিখ্যাত মানুষ, অথচ তাকে ঘিরে বিতর্ক নেই – এ যেন অনেকটা ‘সোনার পাথরবাটি'-র মতো অবাস্তব ধারণা৷ কিন্তু একটি উপন্যাস প্রকাশের পর থেকে লেখককে স্বাভাবিক জীবন থেকে কার্যত নির্বাসিত করার ঘটনার তুলনা মেলা ভার৷
সলমান রুশদির ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই ঘটেছিল৷ মঙ্গলবার ১৯শে জুন তিনি ৬৫ বছরে পা দিচ্ছেন৷ এমন এক জন্মদিন উপলক্ষ্যে রুশদির প্রতি গোটা বিশ্বের নজর পড়ছে৷ কেমন আছেন তিনি? কী করছেন? বিতর্ক থেকে কতদূরে রয়েছেন?
১৯৮৮ সালে রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ ইসলাম ধর্মের অবমাননার দায়ে ১৯৮৯ সালে ইরানের তৎকালীন ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন৷ রুশদির মাথার দাম স্থির হয় ১০ লক্ষ ডলার৷ তারপর দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মগোপন করে ছিলেন লেখক৷ ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ফতোয়া প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়৷ তারপর থেকে তাঁর ‘স্বাভাবিক' জীবনযাত্রায় ফিরে আসার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে কি সত্যি ‘স্বাভাবিক' জীবনযাপন করতে পারছেন রুশদি?
ঘটনা হলো, বিতর্ক আজও রুশদির পেছন ছাড়ে নি৷ বলা যেতে পারে, তিনি নিজেও বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন নি৷ এখনো গর্জে ওঠেন৷ কয়েক দিন আগে লন্ডনে এক সাহিত্য উৎসবে তিনি ইরানের ধর্মীয় নেতাদের সম্পর্কে মস্করাও করে বসলেন৷ বললেন, কোনো বই আসলে নির্দিষ্ট এক ধরণের পাঠক সমাজের জন্য লেখা হয়৷ তিনি যেমন ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' উপন্যাসটি মোটেই ইরানের মোল্লাদের জন্য লেখেন নি৷
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজনৈতিক নেতা ইমরান খানের সঙ্গেও সম্প্রতি বেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন রুশদি৷ দিল্লির এক অনুষ্ঠানে দু'জনেই আমন্ত্রিত ছিলেন৷ অতিথিদের তালিকায় রুশদির নাম দেখে ইমরান সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন নি৷ রুশদির তির্যক মন্তব্য ছিল, ‘‘আসলে প্রাক্তন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন আমার বাউন্সার'এর মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন৷''
রুশদি কোটি কোটি মানুষের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করেছেন, না কি লেখক হিসেবে অপ্রিয় হলেও মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার তাঁর আছে, সেই বিতর্ক আজও চলছে৷ কিন্তু ৬৫ বছর বয়সেও ক্লান্তির কোনো ছাপ দেখা যাচ্ছে না রুশদির কাজে-কর্মে বা কথায়৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ