‘৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জাতি দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেল’
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল হারুন অর রশীদ৷ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন তিনি চাকুরি করেছেন সেনা বাহিনীতে৷ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মুক্তিসেনার৷ একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘একাত্তরের স্মৃতি বলতে গেলে ২৬৬ দিনের স্মৃতি আমাদের মনে জাগ্রত আছে৷ তার মধ্যে বিশেষ একটা স্মৃতির কথা বলি৷ একাত্তরের আগস্ট মাসে আমরা একটা আক্রমণ করেছিলাম আখাউড়ার উত্তর-পূর্ব দিকে একটি চা বাগানে, কলাছড়া চা বাগান৷ সে আক্রমণে পাকিস্তানের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তারা হটে গেলেও অনেক গোলাবারুদ রেখে যায়, আটকও হয় কয়েক সেনা৷''
সেই যুদ্ধে একটি বিষয় বেশ নাড়া দিয়েছিল হারুন অর রশীদকে৷ তাঁর এক সহযোদ্ধার বুকে ও পেটে গুলি লেগেছেল৷ সেই যোদ্ধার শেষ ইচ্ছা ছিল, মৃত্যু হলে যেন বাংলার মাটিতেই কবর দেওয়া হয় তাঁকে৷ জনাব হারুন বলেন, ‘‘তাঁর পেটে এবং বুকে চারটি গুলি লেগেছিল৷ আমরা চেষ্টা করছিলাম, তাঁকে তারাতারি ভারতে পাঠিয়ে দিতে, চিকিৎসার জন্য৷ ছেলেটা বারবার বলছিল, আমাকে পাঠিয়েন না, আমি মারা যাই৷ তবুও আমরা যখন তাঁকে পাঠাচ্ছি, তখন ছেলেটা আমাকে বলল, আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখবেন৷ আমি তখন রাজি হলে, ছেলেটি বলল, আমি জানি আমি কোথাও না কোথাও মারা যাবো৷ আমি মারা গেল যেন বাংলার মাটিতে আমাকে শায়িত করা হয়৷''
হারুন অর রশীদ বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কাজ করছেন৷ সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক তিনি৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর সম্পর্কে জনাব হারুন বলেন, ‘‘১৯৭১ ছিল বাঙালির একাত্বতার বছর৷ তখন সমগ্র জাতি যে একত্র হয়েছিল, এই যে একটা শক্তি, সেই শক্তিটা আমরা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হারিয়ে ফেলেছি৷ বিশেষ করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে যে শক্তিটার উত্থান হলো, সেই শক্তিটা পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতায় আনে এবং যার জন্য জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে৷ দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, সেই ৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জাতি দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেল৷''
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক