অক্সফোর্ডের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল হবে ভারতে
২১ জুলাই ২০২০একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসের দুইটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে ভারতে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় করোনার যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে, তার দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হবে ভারতে। একই সঙ্গে দেশের বিজ্ঞানীরা যে টিকা তৈরি করেছেন, তারও ট্রায়াল শুরু হবে কিছু দিনের মধ্যেই। দেশীয় টিকার পরীক্ষা দিল্লির এইমসেও হবে।
ভারতীয় সময় সোমবার রাতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড টিকার বিষয়ে বড়সড় সাফল্য দাবি করে। তাদের বক্তব্য, তাদের তৈরি টিকা এজেডডি ১২২২ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে প্রথম এই টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়। চীন, অ্যামেরিকা সহ বেশ কিছু দেশে এক হাজার ৭৭ জনের উপর এই টিকা পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ের সেই পরীক্ষা সফল হয়েছে। টিকায় সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলে তাঁদের মনে হয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষার আগে তা ঠিক করে নেওয়া হবে। এর মধ্যেই যাঁদের উপর টিকার প্রয়োগ হয়েছে সাধারণ প্যারাসিটামল খেলেই তাঁদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেটে যাবে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিম্পাঞ্জিদের শরীরে সাধারণ ফ্লু হয় যে ভাইরাসের কারণে, সেই ভাইরাসকে ব্যবহার করে জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে করোনার টিকা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অত্যন্ত জটিল এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল টিকার কম্পোজিশনে পৌঁছনো গিয়েছে। এত কম সময়ে এত জটিল পরীক্ষা নজিরবিহীন বলেও মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, এই টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির পাশাপাশি টি সেল তৈরি করছে, যা পরবর্তীকালে করোনার ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা তা নিষ্ক্রিয় করে দেবে।
সোমবার অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল ঘোষণা করার পরেই বড় আকারে এর উৎপাদন কবে থেকে শুরু হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, বরিস জনসনের সরকার ইতিমধ্যেই ১০ কোটি টিকা তৈরির বরাত দিয়ে দিয়েছে। ভারতের যে সংস্থার সঙ্গে অক্সফোর্ড চুক্তিবদ্ধ, সেই সিরাম ইনস্টিটিউটও এপ্রিল মাসে জানিয়েছিল সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকেই যাতে বাজারে টিকা পাওয়া যায় তার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। সোমবার অক্সফোর্ডের ঘোষণার পরে সিরাম ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা আদার পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ''আমরা অত্যন্ত খুশি। ভারতে এই ভ্যাক্সিন পরীক্ষা করার জন্য লাইসেন্সের আবেদন করেছি আমরা। লাইসেন্স পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ে মাস স্কেলে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে। একই সঙ্গে টিকার উৎপাদনও শুরু করে দেওয়া হবে।''
অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদনে না যাওয়াই ভালো। কারণ, শেষ ধাপ পর্যন্ত টিকার কম্পোজিশনে সামান্য হলেও রদবদল প্রয়োজন হতে পারে। উৎপাদন সংস্থাগুলির সে কথা মাথায় রাখা উচিত।
অন্য দিকে বিজ্ঞানের জার্নাল ল্যানসেটে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন তাঁদের তৈরি কোভিড টিকা কোভ্যাক্সিন প্রাথমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। দ্রুত তাঁরা ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করবেন। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়ল শুরু হওয়ার পরে তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ঠিক থাকলে এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের গোড়ায় অক্সফোর্ডের টিকা ভারতীয় বাজারে পৌঁছে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাক্সিনও দ্রুত সাফল্য পাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। ভারতীয় টিকার পরীক্ষা সফল হলে তার দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে থাকবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)