ব্রাজিল বিশ্বকাপের ভ্রমণবিধি
৭ মে ২০১৪পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এবার ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে ব্রাজিলে যাচ্ছেন, দূতাবাস থেকে এমন পরামর্শই তাদের দেয়া হচ্ছে৷ জুনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হচ্ছে ফুটবলের এই বিশ্ব আসর৷
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যতোই এগিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে ছিনতাই-রাহাজানির মতো অপরাধ, সামাজিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবকাঠামো দুর্বলতার নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে৷ এ প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও আর্জেন্টিনার মতো দেশের ফুটবলপ্রেমীদের ব্রাজিলে যাওয়ার বিষয়ে এ ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷
ব্রাজিলে প্রতিদিন যেসব সহিংসতার খবর পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই ঘটে রিও ডি জানেরোর আশেপাশে বিভিন্ন বস্তি এলাকায়৷ স্থানীয় মাদক কারবারি আর বিভিন্ন অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে এসব এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে কথিত ইউপিপি পিস পুলিশ৷
খোদ রিওতেও সাম্প্রতিক সময়ে খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের হার আগের বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ ১৩ জুলাই ফাইনালসহ এবারের বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ এ শহরেই হবে৷
রিও ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে কেবল রিও শহরেই খুনের ঘটনা বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ৷ আর রিও রাজ্যে এই হার ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে৷
সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত ইপানেমাসহ জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ডাকাতির ঘটনা প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ ইংল্যান্ড ফুটবল দল যে হোটেলে থাকবে তার পাশেই রোচিনহা বস্তি৷ গত শুক্রবার সেখানে বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ গত মাসে ব্রাজিলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশনে লাইভ সাক্ষাৎকার দেয়ার সময়ই ছিনতাই হয়েছে এক নারীর সোনার নেকলেস৷
ব্রাজিলের প্রতিমন্ত্রী জোসে মারিয়ানো বেলট্রামি গত শুক্রবার জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি দুই হাজার মিলিটারি পুলিশ নামানো হবে রিওর রাস্তায়৷
বিশ্বকাপের এই এক মাসে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি ফুটবলপ্রেমীর নিরাপত্তা দিতে হবে রিও কর্তৃপক্ষকে, যে শহরের রাস্তায় গত বছর ৩০ হাজার ৪৮৯টি ছিনতাই-ডাকাতি এবং ১২ হাজার ৩৮১টি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে৷
স্থানীয় দৈনিক ‘ও জিয়া'-য় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিশ্বকাপ পর্যটকদের সঙ্গে বড় অংকের টাকা নিয়ে চলাফেরা না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ বাইরে ঘুরতে গেলে দলবেঁধে যাওয়ার পাশাপাশি কেউ দরজার কড়া নাড়লে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তারপর খোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷
ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেকের কাছে রিও শহরকে একটি জঙ্গল বলে মনে হতে পারে, কেননা এখানে একজন পর্যটক যখন তখন দস্যু, অপহরণকারী বা ধর্ষকের হামলার মুখে পড়তে পারেন৷ এ কারণে নিবন্ধটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে, জঙ্গলের ভ্রমণবিধি৷
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা আর জার্মানি থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক এবার বিশ্বকাপ দেখতে ব্রাজিলে সফর করবেন৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখের বেশি বিদেশি ব্রাজিলে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকদের আসার আগেই বলে দেয়া হচ্ছে- ব্রাজিলে হয়তো তারা সব সময় পুলিশি সহায়তা পাবেন না৷ আর জার্মানির দূতাবাস তাদের নাগরিকদের বলে দিয়েছ – পানশালায় গেলে সেখানে গ্লাসে কিছু মেশানো হচ্ছে কি-না, সে দিকে নজর রাখতে হবে৷ বারবনিতার পছন্দ অনুযায়ী হুটহাট কোনো জায়গায় যাওয়া চলবে না৷
ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে ব্রাজিলের মশার বিষয়ে৷ রাতে সবাইকে মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো কোনো রোগ নিয়ে দেশে ফিরতে না হয়৷
জেকে/এএসপি (এএফপি)