অনন্ত জলিল, ভিডিও মুছে ফেললেই কি মানসিকতা বদলে যায়?
১২ অক্টোবর ২০২০ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মঙ্গলবার অধ্যাদেশ জারি হতে যাচ্ছে৷ কিন্তু এর মধ্যেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ রবিবার রাতে রাজধানীতে ঘটেছে আরো একটি গণধর্ষণের ঘটনা৷ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের কিশোরী৷ দেশজুড়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে৷
এর মধ্যে বাংলাদেশের চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল হাজির হলেন ‘ধর্ষণবিরোধী' একটি ভিডিও নিয়ে৷ ভিডিওটি পোস্ট করা হলো তার স্ত্রী বর্ষার ফেসবুক পেজ থেকে৷
অনন্ত জলিলের মূল বক্তব্য ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে, কিন্তু নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শালীন পোশাক পরতে হবে৷ অন্তত জলিল কি আসলেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এই ভিডিওটি প্রচার করেছেন, নাকি সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য? কেননা এই উপমহাদেশে কিছু লোক মনে করেন, ধর্ষণের জন্য ধর্ষণের শিকার নারীই দায়ী৷ হয় তার পোশাক, মানসিকতা, চাল-চলন, শিক্ষা এসব উঠে আসে অভিযোগের তালিকায়৷ সেই নারীর ওপর দোষ চাপানোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার মানুষদের দলে নাম লেখালেন অনন্ত৷
তারপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই বদলে ফেললেন বক্তব্য৷ ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেললেন আগের ভিডিওটি৷ নতুন ভিডিওতে বললেন, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে৷ কিন্তু যে মানসিকতা থেকে তিনি প্রথম ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন, সমালোচনা না হলে কি তার মানসিকতায় বদল ঘটতো? অবশ্য ভিডিও সরিয়ে নিলেও মানসিকতা আদৌ বদলেছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে৷
‘অনন্ত জলিলরা' ভুলে যান, তারা সাধারণ মানুষ নন, তাদের অনুসারী লাখ লাখ৷ সেই লাখ লাখ মানুষ তার প্রথম ভিডিওটার মর্মার্থ মস্তিষ্কে বসিয়ে নিয়েছে, সেটা আর বদল হওয়ার নয়৷ যারা মনে করতেন ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাকই দায়ী, তাদের ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়েছে৷ আর এর দায় আপনাকে নিতে হবে মিস্টার অন্তত জলিল৷
ফেসবুকে আপনার ১৪ লাখ ফলোয়ার৷ আর বর্ষার ১০ লাখেরও বেশি৷ কারখানার শ্রমিকদের কাছে আপনি প্রিয়, অনেক সময় দরিদ্র মানুষকে সহায়তার কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘রিয়েল হিরো' হয়ে উঠেছিলেন৷ কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রমাণ করলো বাংলাদেশের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের কাছেই হিরো হতে চান আপনি৷
আপনি ভুলে গেলেন, ধর্ষক বয়স দেখে না৷ ভুলে গেলেন, গত তিন মাসে যেসব নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তাদের বয়স ৪ মাস থেকে ৭২ বছর পর্যন্ত৷ তাদের বেশিরভাগই অতি সাধারণ পরিবারের মানুষ, যারা আপনার ভাষ্যমতে ‘শালীন' পোশাক পরেই ছিলেন৷ আমার মনে হয়, শুধু ধর্ষণ নয়, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে যে-কোনো অপরাধ থেকেই মানুষ বিরত থাকবে৷ আপনি আপনার সন্তানকে শেখান যেন পুরুষ না হয়ে মানুষ হয়, সে যেন মেয়েদের সম্মান করে৷ দেশের প্রতিটি পরিবারে যদি এই শিক্ষা দেয়া হয়, তাহলে কোনো মেয়েই আর ধর্ষণের শিকার হবে না৷ মেয়েদের ‘শালীন পোশাক' পরতে না বলে ছেলেদেরই বরং ‘চোখের পর্দা' করার শিক্ষা দেয়া উচিত প্রতিটি পরিবারে৷