অপরাধীরা শনাক্ত হয়নি
১৪ মে ২০১৫মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চারজন মুখোশধারী অনন্তকে হত্যা করেছে৷''
বলা হয়, ‘‘তিনি ব্যাংকে চাকরি করার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন৷ একজন প্রগতিশীল চিন্তাধারার লোক ছিলেন অনন্ত৷ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন৷'' আর এ কারণেই কোনো উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তাঁকে খুন করতে পারে বলে এজাহারে সন্দেহ করা হয়েছে৷
সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি গৌসুল হোসেন ডয়চে ভেলেক জানান, ‘‘আমরা এখনো সন্দেহের মধ্যেই আছি৷ কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারিনি৷ হত্যাকারীরা ছিল মুখোশধারী৷ তাই তাদের কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না৷''
এদিকে অনন্ত দাসের বাসা পরিদর্শন করেছেন মহানগর পুলিশের কমিশনার কামরুল আহসান৷ পরিদর্শনের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মামলা হওয়ার পর আসামি শনাক্ত করার কাজ চলছে৷ এ কাজে যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, তার সবই নেওয়া হয়েছে৷''
সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাষীশ দেবু ডয়চে ভেলেক জানান, ‘‘সিলেট বিমানবন্দর পুলিশ আসলে এই মামলার তদন্তের কিছুই করছে না৷ তারা বলছে, এই মামলার তদন্তের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা দরকার৷ তাই তারা এই মামলার তদন্ত করতে চাইছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি কোনো অপরাধ হলে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অল্প সময়ের মধ্যে ধরে ফেলে৷ কিন্তু এই মামলার ক্ষেত্রে শুরুতেই তাদের অনীহা বিস্ময়কর৷''
দেবাষীশ দেবু জানান, ‘‘অনন্ত হত্যাকাণ্ড পুরো সিলেটবাসী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না৷ পুলিশের ভূমিকায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন৷ আমরা এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে সিলেটে সংহতি সমাবেশ করবো৷''
ওদিকে অনন্ত বিজয় দাসের ভগ্নিপতি সমর বিজয় সি শেখর ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা এখনো অন্ধকারে আছি৷ আমরা সন্দেহ করছি যে, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা অনন্তকে হত্যা করেছে৷ কিন্তু পুলিশ এখনও কাউকে চিহ্নিত বা আটক করতে পারেনি৷''
তিনি জানান, ‘‘গত তিনদিনে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বাসায় এসেছেন৷ কিন্তু তাঁরা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু জানাননি৷ তাঁরা আমাদের শুধুমাত্র শান্তনা আর আশ্বাস দিয়েছেন৷ পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান আমাদের বলেছেন যে, তাঁরা চেষ্টা করছেন অপরাধীদের শনাক্ত এবং আটক করতে৷''
সমর বিজয় সি শেখর বলেন, ‘‘আমরা চাই দ্রুত যেন আসামিরা ধরা পড়ে৷ মামলা যেন হিমঘরে চলে না যায়৷''
সিলেট নগরের সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকায় মঙ্গলবার নিজ বাসার অদূরে ব্লগার অনন্তকে কুপিয়ে হত্যা করে মুখোশধারী চার যুবক৷ মামলার বাদি অনন্ত দাসের ভাই রতেশ্বর দাস বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনন্তের কোনো শত্রু নেই৷ এর আগে ব্লগারদের ওপর যেভাবে আক্রমণ হয়েছে, সেভাবেই অনন্তকে হত্যা করা হয়েছে৷ এ কারণেই আমার সন্দেহ স্বাধীন ও মুক্তমতের চর্চা করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে উগ্রবাদীরা তাঁকে হত্যা করেছে৷''