অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ আসছে
১০ নভেম্বর ২০১৫বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি৷ তাই সরকার এবার তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ এই নিয়ন্ত্রণের তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ আরো বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং অনলাইন অ্যাপস, বিশেষ করে কথা বলার অ্যাপস৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানায়, বাংলাদেশ এর আগে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ঢাকায় অ্যাডমিন প্যানেল বসানোর অনুরোধ করলেও, তারা তা করেনি৷ আবার আপত্তিকর ‘পোস্ট' এবং ‘অ্যাকাউন্ট' বন্ধ করার আবেদনেও সাড়া দেয়নি তারা৷
তাই এবার বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সরকার টু সরকার' বা ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট' (জি টু জি) র্পযায়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই চুক্তি করবে৷ চুক্তি হলে ফেসবুক, টুইটার ও ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি বাংলাদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দু'দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ করছে৷ তবে এর বাইরে হয়রানির পরিমাণও কম নয়৷ বাংলাদেশের জাতীয় দলের দু'জন ক্রিক্রেটারকে ফেসবুকে চরম হেনস্তা করা হয়েছে৷ এছাড়া নারীদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অহরহ৷
অবশ্য এই নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের৷ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু দিন ধরেই অনলাইনের ওপর নানা ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলছে৷ এটা তারা বলছে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের কথা বলে৷ কিন্তু বাস্তবে, এর বাইরে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে পুলিশ বা প্রশাসনের দক্ষতা কতটুকু – তা প্রশ্ন সাপেক্ষ৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের নানা গোয়েন্দা ‘ডিভাইস' আছে অনলাইন নজরদারির জন্য৷ এমনকি তারা ভাইবার কথোপকথন রেকর্ডেও সক্ষম হয়েছে এর আগে৷ আমরা দেখেছি রাজনৈতিক নেতাদের টেলিফোন সংলাপ রেবর্ড করা হয়েছে, হচ্ছে৷ কিন্তু অপরাধীদের টেলিফোন কলের রেকর্ড আমরা পাচ্ছি না৷ নিহত প্রকাশক দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর কল রেকর্ড পায়নি পুলিশ৷''
জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার জানান, ‘‘আমি এত কথা বললাম এ জন্য যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কন্ঠরোধ বা বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ অপরাধ শুধু অনলাইন কেন, নানা মাধ্যমেই হয়৷ তাই বলে সেই মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তার কোনো মানে নেই৷ পুলিশ বা গোয়েন্দারা তাদের তৎপরতার মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে, এটাই আমরা চাই৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তির চরিত্রহনন, যৌন হয়রানি বা নানা ধরণের উসকানির দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু এ সব ঘটনায় জড়িতদের আটক হতে আমরা না দেখলেও, মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে কোনো কথিত আপত্তিকর ‘স্ট্যাটাস' দিলে আমরা সেই স্ট্যাটাস-দাতাদের আটক হতে দেখি৷''
তাঁর মতে, ‘‘নিয়ন্ত্রণের চেয়ে আইন এ সব সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকর হতে পারে৷ কিন্তু সাইবার অপরাধ দমনে যেসব আইন আছে, তা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা যায়, অপরাধীদের ধরা যায় না৷''
প্রসঙ্গ, সরকার অনলাইন সংবাদ-পত্র বা নিউজ পোর্টালকেও নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসছে৷ আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে৷ এরপর তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে নিবন্ধন দেবে৷