বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও কাজ করে চলেছে আইএসএস
৩০ মে ২০২২আলেক্সান্ড্রার গেয়ার্স্ট দুই বার মহাকাশে গেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস-এ থেকেছেন তিনি৷ সেখান থেকে তিনি পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে একবার বলেন, ‘‘মানবজাতির তৈরি সবচেয়ে জটিল যন্ত্রের ভেতর থেকে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি৷ তবে শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে এটি মানবজাতির সবচেয়ে মূল্যবান ও অপ্রত্যাশিত সাফল্য৷''
৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রতি ৯০ মিনিটে আইএসএস পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে চলেছে৷ বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারী সেখানে গবেষণা চালান৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির গণ্ডির বাইরে তারা এমন পরীক্ষা করেন, যা পৃথিবীর বুকে অসম্ভব হতো৷ বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সহযোগিতার ফল হিসেবে এই মহাকাশ স্টেশন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ সেই সহযোগিতাকে হুমকির মুখে ফেলছে৷
১৯৯৮ সালে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে এই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল৷ শীতল যুদ্ধের সময় দুই দেশ পরস্পরের শত্রু ছিল৷ তারপর অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এই দুই শক্তি৷ একক সাধারণ এক স্পেস স্টেশন, যেখানে গোটা বিশ্বের মহাকাশচারীরা একসঙ্গে গবেষণা চালাতে পারেন৷ সেই বছরেই রাশিয়ার এক রকেট প্রথম মডিউল কক্ষপথে নিয়ে আসে৷ এর ঠিক পর অ্যামেরিকাও একটি মডিউল পাঠায়৷
সের্গেই ক্রিকালইয়ভ ও ইয়ুরি গিডসেনকো নামের দুই রুশ মহাকাশচারী বিল শেপার্ড নামের মার্কিন মহাকাশচারীর সঙ্গে ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে মহাকাশে পাড়ি দেন৷ তারাই ছিলেন আইএসএস-এর প্রথম আরোহী৷ তাদের নতুন এই স্টেশনে অনেক কিছু ইনস্টল করতে হয়েছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্রিকালইয়ভ বলেন, ‘‘আমাদের স্টেশন খুলে বাতি জ্বালিয়ে টেলিভিশন বসিয়ে প্যানেলের পেছনে সব তার খুঁজে সেগুলি প্রয়োজনমতো যুক্ত করতে হয়৷ স্টেশনটি ছোট ছিল বটে, কিন্তু সেখানে সব রকম প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ছিল৷ তবে সেগুলি নিষ্ক্রিয় থাকায় আমাদের কয়েকটি যুক্ত করে স্টেশনটি সক্রিয় করে তুলতে হয়েছিল৷''
তারপরেও আইএসএস আরো বড় হতে থাকে৷ ১৬টি দেশ একাধিক মডিউল তৈরি করে, যেগুলি একে একে যুক্ত করা হয়৷ ২০১১ সালে নাসা আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসএস নির্মাণের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করে৷
আজ আইএসএস প্রায় এক ফুটবল স্টেডিয়ামের মতো বড় এবং প্রায় ৪২০ টন ভারি হয়ে উঠেছে৷ সাত জন মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে থাকতে এবং কাজ করতে পারে৷ এক ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম থেকে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ এমনকি জিমের সরঞ্জামও সেখানে রয়েছে৷ মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে পেশির মাত্রারিক্ত ক্ষয় এড়াতে মহাকাশচারীদের দিনে দুই ঘণ্টা খেলাধুলা করতে হয়৷
ইতোমধ্যে ২৪০ জনেরও বেশি মহাকাশচারী আইএসএস-এ বাস করে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশের স্বাদ পেয়েছেন৷ সামান্থা ক্রিস্টোফারেটি তাদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ এই নতুন জগতে আসে৷ আমার মনে হয়েছিল, স্পেস স্টেশনে এসে নতুন এক জীবনযাত্রার স্বাদ পাবো৷ মহাকাশে অগ্রসর হবার নতুন এই কায়দা আমাকে রপ্ত করতে হবে, সবকিছু নতুন করে শিখতে হবে৷''
মহাকাশচারীরা ৩,০০০-এরও বেশি পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং মহাকাশে বাস করার বিষয়ে অনেক নতুন জ্ঞান অর্জন করেছেন৷
মিশায়েল হার্টলেপ/এসবি