অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে বলছেন রোজিনা ইসলাম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১তার বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ নিজের প্রতিবেদন নিয়ে তিনি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছেন বিদেশে৷ পেয়েছেন ইউনেস্কো পুরস্কার (২০১১), কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সসেলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), ডয়চে ভেলের দুর্নীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক পুরস্কার, টিআইবি-র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশ'(২০১৪) সহ অসংখ্য পুরস্কার৷
ডয়চে ভেলে: অনেকের মতে বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেক কমে গেছে৷ আপনিও কী তাই মনে করেন?
রোজিনা ইসলাম: সত্যি বলতে বাংলাদেশে সেল্ফ সেন্সরশিপ এখন অনেক বেড়েছে৷ ওইভাবে কাজ করার পরিবেশও এখন আর নেই৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলতে আমরা যেটা বুঝি বা আপনি যদি বিশ্বের সঙ্গে মেলান সেটা তো বাংলাদেশে হয়ই না৷ একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে একটি টিম দরকার হয়৷ অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, অর্থের প্রয়োজন হয়৷ অনেক সময় কয়েকটা দেশ মিলে করে৷ সেসব রিপোর্ট পুলিৎজার পুরস্কার পায়৷ তেমন বিশাল পরিসরের রিপোর্ট তো বাংলাদেশে হয় না৷ তবে আমাদের বাংলাদেশে দৈনিক ভিত্তিতে যেটা হতো, সেটাও অনেক কমে গেছে৷ আমি নিজেও আগে যে ধরনের কাজ করতাম এখন সেগুলো করতে পারছি না৷ আবার অনেক কাজ করা গেলেও দেখা যায় নানান কারণে সেগুলো দেওয়া যায় না৷ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরই সেল্ফ সেন্সরশিপ করতে হয়৷ সেই জায়গাটা অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে৷ তারপরও আমি বলবো, এই দেশে থেকে, এত হুমকি, এত ভয়ের পরও আমাদের সাংবাদিকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ তারা যে কোনো কাজই করছেন না, বিষয়টা আসলে তেমন না৷
ডয়চে ভেলে: দর্শক-পাঠক এমনকি এখন অনেক সাংবাদিকও বলছেন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই৷ কিন্তু এই নেই নেই রবের মধ্যেও আপনার বেশ কিছু অনুসন্ধানী খবর দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ ওই খবর প্রকাশের পর প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ আপনি কিভাবে সেসব খবর সংগ্রহ করলেন?
আমি সব সময় চলতি ইস্যুর সঙ্গে থাকতে চেষ্টা করি৷ পাশাপাশি একটু স্কুপ নিউজ বা এক্সক্লুসিভ নিউজ তুলে আনতে চাই৷ এটা আমার এক ধরনেরই নেশাই হয়ে গেছে৷ এক্ষেত্রে একটা হচ্ছে, নিউজ বের করে আনা৷ তারপর অফিসে সেটা প্রেজেন্ট করা৷ অফিসে নিউজটার প্রেজেন্টেশনটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার৷ অফিসে আমি যখন একটা আইডিয়া জমা দেই তখন অফিস আমাকে ওই স্টোরিটার জন্য নানান কাজ করতে বলে৷ আবার রিপোর্টের ডিসপ্লেটাও কিন্তু অনেক বড় বিষয়৷ নিউজটা কোন পাতায় ছাপা হলো৷ এসব কিছু মিলিয়েই একটি নিউজ ফোকাস পায়৷ আমি সব সময় চেষ্টা করি ভালো কিছু করার জন্য৷ আমি অনেকদিন ধরে কাজ করি বিধায় আমার অনেক সোর্সও তৈরি হয়েছে৷ সাংবাদিকদের নিউজ সেন্সেরও একটা ব্যাপার থাকে৷ এ ক্ষেত্রে আমরা অফিস থেকেও পূর্ণ সহযোগিতা পাই৷ আমরা কিন্তু ৯০ শতাংশ খবরই ছাপাতে পারি৷ আমাদের সম্পাদক অত্যন্ত সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে খবরগুলো প্রচার করেন৷ অফিস থেকে আমি পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি৷ আমি যেসব রিপোর্ট করি সেগুলো অফিসের সমর্থন ছাড়া করা খুব কঠিন৷ অফিস আমাদের সব সময় উৎসাহ দেয়৷ আমার মনে হয় অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গেলে অফিসের সহযোগিতা ছাড়া সেটা খুবই কঠিন৷ কারণ ওই সব খবর খুব সেনসেটিভ হয়, কারো না কারো বিরুদ্ধে যায়, তারা সাধারণত প্র্রভাবশালী হন৷ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তারা জড়িত থাকেন৷ তখন আমাদের নিরাপত্তার সেই গ্যারান্টিটা থাকতে হয়৷ আমার ক্ষেত্রে আমি নিজে চেষ্টা করি প্রোপার ডকুমেন্ট নিজের কাছে রাখতে৷ কিসের ভিত্তিতে আমি নিউজটা করেছি তার প্রমাণ নিজের কাছে রাখতে৷ আমি কোনো ডকুমেন্টের ভিত্তিতে রিপোর্ট করলে চেষ্টা করি সেটা চার-পাঁচ জায়গা থেকে ভেরিফাই করতে৷ আমি মুখের কথায় রিপোর্ট খুব কম করি৷ ডকুমেন্ট ছাড়া এবং বার বার সেটা চেক করা ছাড়া আমি রিপোর্ট করি না৷
ডয়চে ভেলে: সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নাম নিলেই যে রিপোর্টটার কথা সবার আগে মনে পড়ে সেটা হলো বিদেশি বন্ধুদের মুক্তিযু্দ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টের স্বর্ণ জালিয়াতির খবর৷ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও যেটা আলোড়ন তুলেছিল৷ পেয়েছিলেন ডয়চে ভেলে দুর্নীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক পুরস্কার৷ ওই প্রতিবেদন তৈরির পেছনের গল্পটা যদি বলতেন৷
এটা একটি পুরাতন প্রতিবেদন৷ প্রায় সাত বছর আগের৷ কিন্তু এখনো কোথাও গিয়ে যদি আমার নিজেকে পরিচয় দিতে হয় তখন এই প্রতিবেদনটির কথা বললে সাধারণ মানুষ বা বাইরের মানুষ খুব দ্রুত আমাকে চিনে যান৷ আমার আরেকটা স্টোরি হলো, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য ছয় সচিবের চাকরি চলে যাওয়া৷ প্রশাসনের লোকজন এই প্রতিবেদনের জন্য আমাকে চিনে ফেলেন৷
এই প্রতিবেদন দুটি পেতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল৷ আমি আসলে ছয় সচিবের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছিলাম৷ ওই ছয় সচিব অবসরে যাওয়ার আগে আগে ২০১৩ সালের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছিলেন৷ ওই সময় অফিসার্স ক্লাবে একটি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছিল৷ সেখানে প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দীন৷ একজন আমাকে বললেন, ওনার তো মুক্তিযোদ্ধা সনদ আছে, ওনার তো এরকম নাই৷ নিউজ কিন্তু এভাবেই আসে৷ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ থেকে নিউজ বের হয়৷ তখন আমি বললাম, ওনার যে সনদ নাই আমি এটা কিভাবে প্রমাণ করবো৷ তখন তিনি বললেন, সরকারি দপ্তরে সব কাগজই থাকে৷ সেখানে লেখা থাকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন কিনা৷ এবং আপনি মন্ত্রণালয়েও খোঁজ নিতে পারেন, এটা কিভাবে নিয়েছে৷ সেখান থেকেই আমি প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করলাম৷ এরপর ওই প্রতিবেদন যখন ছাপা হলো এবং দুদকে তদন্ত শুরু হলো এবং দুদকে প্রমাণ হলো; ওই সচিবদের সনদ বাতিল হলো৷ তখন আসলে আমার উপর অনেক সোর্সের আস্থা তৈরি হয়৷ যারা দুর্নীতির খবরগুলো দিতে চান৷ আমাকে তখন নানান জায়গা থেকে নানা রকম তথ্য দেওয়া শুরু হলো৷ আমাকে বলা হলো আপনি এ কাজগুলো করতে পারেন৷ তখন একজন আমাকে ক্রেস্টের কথা বললেন৷ বললেন, এই যে বিদেশি বন্ধুদের ক্রেস্ট দেওয়া হচ্ছে এটা নিয়ে কিন্তু অনেক গোলমাল আছে৷ আপনি খোঁজখবর নেন৷ আমি চেষ্টা করলাম খোঁজ খবর নিতে৷ তো ওই সময় আমি একদিন অফিসে এসে দেখি কেউ একজন আমার নামে একটা চিঠি দিয়ে গেছেন৷ চিঠিটা খুলে দেখি ক্রেস্ট জালিয়াতি নিয়ে বিএসটিআই তে যে পরীক্ষা হয় সে বিষয়ের একটি কাগজ৷ আমি প্রথমে খুব একটা বিশ্বাস করিনি৷ যেকোনো কাগজ কে তো আর বিশ্বাস করতে পারি না৷ কিন্তু বিশ্বাস না করলেও আমি কাগজটি ফেলে দেইনি৷ আমি বিষয়টা নিয়ে অফিসে আলাপ করলাম৷ আমাকে বলা হলো, আপনি এটা নিয়ে কাজ করেন; দেখেন কী পাওয়া যায়৷ তারপর আমি খুঁজতে খুঁজতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে গেলাম৷ সেখান থেকে বিএসটিআইর অফিসে গিয়ে খোঁজ শুরু করলাম৷ যেকোনো অফিসিয়াল চিঠির দুইটি কপি থাকে৷ একটা অফিসে, একটা বাইরে৷ আমি চিঠির সিরিয়াল ধরে স্মারক নম্বরটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম এবং পেয়েও গেলাম৷ দেখলাম স্মারক নম্বরটা সত্যি৷ সেখানেই লেখা ছিল সোনার পরিমাণ যতটা বলা হয়েছে ততটা ছিল না৷ তার ভিত্তিতেই আমি নিউজের হেড করেছিলাম ‘ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে'৷ আমি বার বার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করলাম৷ এই প্রতিবদেনটা তৈরি করতে আমার তিনমাস সময় লেগেছে৷ রিপোর্টটা জমা দেওয়ার পর আমরা আরো একমাস সময় নেই, আরো পরীক্ষা করা হয়৷ রিপোর্টটা রেডি করে যখন আমি জমা দেব তখন দেখা গেলে ২৬ মার্চ এসে গেছে৷ তো তখন অফিস থেকে চিন্তা করা হলো এমন একটা প্রতিবেদন ২৬ মার্চের আগে দেওয়া ঠিক হবে না৷ তাই আমরা আরো কয়েকদিন সময় নিলাম৷ এপ্রিলে রিপোর্টটি প্রকাশ পায়৷
ওই সময়ে খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা আমার মনে আছে৷ একজন অতিরিক্ত সচিব যিনি ক্রেস্ট বিষয়ক কমিটিতে ছিলেন তার সঙ্গে আমি দেখা করতে তার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ আমি তাকে ফোন করে বলি, একটু কথা বলতে চাই৷ উনি বললেন, আমি তো রুমে নাই৷ তখন আমি তার রুমে ঢুকে গিয়ে বলি আপনি তো আছেন, কেন বললেন নাই৷
এ ধরনের ঘটনায় আমি একটা ব্যাপার দেখেছি৷ যারা দোষী তাদের চেহারা দেখলে বা তাদের সঙ্গে কথা বললে স্পষ্ট বোঝা যায় এখানে একটা অনিয়ম হয়েছে৷ তাছাড়া, আমার কাছে তো কাগজ ছিল, তাই আমার শক্তির জায়গা ছিল৷ আর ওই কাগজটা যে ঠিক আমি সেটা নানান ভাবে যাচাই করেছি, প্রমাণ করেছি৷ তো শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদনটি ছাপা হলো৷ যদিও ছাপা হওয়ার সময় আমি বুঝি নাই এটা আসলে কত বড় প্রতিবেদন৷
কিন্তু প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার সাথে সাথে সাড়া পড়ে গেল৷ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত সেটা দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো৷ দুদকের তদন্ত শুরু হলো৷ একইসঙ্গে মন্ত্রী ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি করলেন৷ এটা খতিয়ে দেখার জন্য কমিটিকে খুব কম সময় বেঁধে দেওয়া হলো৷
আমি নিজে পরীক্ষার জন্য ক্রেস্ট হাতে পাইনি৷ কিন্তু কমিটি চার/পাঁচ জায়গায় ক্রেস্ট পরীক্ষা করালো৷ আমার প্রতিবেদনে ছিল কিছু স্বর্ণ আছে৷ কিন্তু তাদের পরীক্ষায় দেখা গেল কোনো স্বর্ণই নাই৷ এই রিপোর্ট আসলে একটা মাইলফলক৷ কিন্তু দুঃখর বিষয় সাত বছর কেটে গেলেও এই ঘটনার পেছনে দায়ী মূল ব্যক্তিদের সাজা হয়নি৷
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে কখনো জীবননাশের হুমকি বা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছেন কিনা?
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে গেলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি, এটা ঠিক৷ তবে কেউ আমাকে সেই ভাবে এই নিউজ করলে মেরে ফেলব বা এই ধরনের কিছু বলেনি৷ আমি সাধারণত যার বিষয়ে রিপোর্ট করি তার সঙ্গে এত কথা বলি যে তিনি জেনে যান আমি তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করছি৷ তারা বিভিন্নজনকে দিয়ে ফোন করানোর চেষ্টা করেন৷ হয়তো আমাকে সরাসরি করলেন না কিন্তু সম্পাদকের কাছে বা অন্যদের কাছে ফোন করে নানান ভাবে নিউজ বন্ধ করারও চেষ্টা করেন৷
কিন্তু আমি নিজের নীতিতে অটল৷ এটা আমার সোর্সরাও জানে৷ আমি যে রিপোর্টই করি, তারপর যত খাতিরই করুক আমি ওই রিপোর্ট ছাপাবোই৷ আমার সম্পাদকও এটা জানেন৷
তবে কয়েকটি রিপোর্টের ক্ষেত্রে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে৷ যেমন, একবার ডেসটিনির মালিক রফিকুল আমিনকে নিয়ে রিপোর্ট করেছিলাম, তিনি দিনের পর দিন হাসপাতালে থাকেন৷
ওই রিপোর্টটা করার পর ডেসনিটি গ্রুপের মেম্বাররা নানান ভাবে ফেসবুকে আমাকে আক্রমণ করে৷ আমার, আমার সন্তানের ছবি দিয়ে নানা কিছু লিখে পোস্ট ভাইরাল করে দেয়৷ এরকম করার চেষ্টা অনেকেই করে৷ তবে আমার বেশিরভাগ রিপোর্টেরই পজেটিভ রিঅ্যাকশন হয়৷ তবে সমস্যা হয় যেখানে সেটা হলো, মন্ত্রণালয়ের লোকজন তখন খুব সতর্ক হয়ে যান৷ তারা কথা বলতে চান না, ভয় পান, তথ্য দিতে চান না৷ তারা মনে করেন, আমার সঙ্গে কথা বললে তাদের চাকরি চলে যাবে৷ এটাতে আমি খুবই পাজেল হয়ে যাই৷
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কমে গেছে?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার এটা বিষয় তো আছেই৷ কিন্তু সমস্যা হয় কি, মামলা যদি সত্য হয় তাও নেয়া যায়৷ কিন্তু মামলার সঙ্গে তো রঙচঙ মেশানো হয়৷
এমন যদি হয় আমি ভুল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করেছি এবং সেজন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাহলে আমি মাথা পেতে নেব৷ কিন্তু যদি একজনকে হেনেস্তার জন্য বলা হয়, তিনি অপরাধী, অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত তাহলে তো হয় না৷ এই যেমন, একজন খুব সাধারণ ফটোসাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হলো, তাকে আটকে রাখা হলো৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, এই সংখ্যাটা আসলে কম৷ অনেক যে মামলা হচ্ছে, বিষয়টা কিন্তু তা না৷ এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিকদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ আমরা যখন লিখি বা যেকোনো জিনিস ছাপাই তখন যেন তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে কাজ করি৷ আমাদের কাছে একটা তো জায়গা আছে, আদালত৷ আদালতে আমি যখন যাব তখন যেন দেখাতে পারি আমি কিসের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট করেছি বা কে আমাকে বলেছিল৷ যদি আমি ভুল করি তবেই না ডিজিটাল আইনে মামলা হবে৷ অফিসেও যাচাই বাছাই থাকতে হবে৷ যেমনটা আমাদের অফিসে আছে৷ আমরা একটা রিপোর্ট দিলেই কিন্তু ছাপিয়ে ফেলা হয় না৷ আরো যাচাই করার পর সেটা ছাপা হয়৷ যার ফলে আমরা সাংবাদিকেরা নিরাপদে থাকি৷
সবশেষে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে বলি৷ অনেকেই বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে বার বার বলছেন৷ বলছেন, আল জাজিরায় যেমন রিপোর্ট হয়েছে বাংলাদেশে তেমন রিপোর্ট হয় না৷ বাংলাদেশ এমন রিপোর্ট হয় না, বিষয়টা কিন্তু তা না৷
বাংলাদেশেও এমন রিপোর্ট হয়৷ এই জোসেফের বিষয় নিয়েই আমরা অনেক লিখেছি৷ জোসেফের যখন সাজা মওকুফের তোড়জোড় বা সম্রাটকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে৷ এর বাইরে আর কারা আছে বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশে মোটামুটি এমন কেউ নাই, যাদের অনিয়মের খবর আমরা পেয়েছি, কিন্তু লিখিনি৷ এখন হয়েছে কি, অন্য দেশে থেকে তো অনেক বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হয়৷ নিজের দেশে থেকে সেগুলো করা তো আসলে অতটা সহজ নয়৷ যেহেতু আমার পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনেরা আছেন৷
তারপরও আমার মনে হয়, বাংলাদেশে অনেক ভালো সাংবাদিক আছেন৷ যারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন তারা এসব বিষয় একদমই প্রশ্রয় দেন না৷ ভালো রিপোর্ট আসলে সেটা প্রকাশ না করা পর্যন্ত তাদের ঘুম হবে না৷ তারা সব সময় সেটি প্রকাশের চেষ্টা করে যান৷ না হলে আমার যে রিপোর্টগুলো ছাপা হয়েছে, বা অন্য পত্রিকার সাংবাদিকরা যেসব রিপোর্ট করেছেন সেগুলো কিভাবে ছাপা হলো৷