ত্রিপুরাতেও নাগরিকপঞ্জির জিগির
১১ অক্টোবর ২০১৮অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ চলছে বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরায়৷ যদিও এই কাজ শুরু হয়েছিল সেই কংগ্রেস জমানায়, তবু নাগরিকপঞ্জিকে পুঁজি করতে সক্ষম হয়েছে শাসক দল৷ বিরোধী দলগুলির প্রচার সেই কাজে তাদের সাহায্য করেছে৷
আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ায় তাদের নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে৷ এর চূড়ান্ত ফল যা-ই হোক না কেন, আপাতত জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্বের মতো তাসকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার স্বপ্ন দেখছে ‘গেরুয়া শিবির’৷ সেই লক্ষ্যে আসামের পর এবার বেছে নেওয়া হয়েছে ত্রিপুরাকে৷
প্রচার চলছে হিন্দুত্বের৷ মুসলিমদের ফেরত পাঠানোর৷ প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে আসা মানুষের বেশিরভাগই মুসলিম৷ নাগরিকপঞ্জি হলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তাদেরই বড় অংশ চিহ্নিত হবেন৷ তাই খাড়া করা যাবে জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব৷
অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর দল ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি থেকে এদেশে আসা হিন্দুরা শরণার্থী৷ মুসলিমরা অনুপ্রবেশকারী৷ তাদের যুক্তি, মুলসিম শাসিত দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন হিন্দুরা৷ তাই তাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে৷ আর বিতাড়িত করা হবে মুসলিম ‘অনুপ্রবেশকারী’দের৷
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিজেপি সব সময় একটা ইস্যু নিয়ে চলে, সেটা হলো ভারতীয় মুসলমান ও স্বাধীনতার পর বাইরে থেকে আসা মুসলমানদের পৃথক করা৷
বিজেপি মনে করে, স্বাধীনতার পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে যে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা শরণার্থী৷ আর যে মুসলমানরা এসেছেন তাঁরা অনুপ্রবেশকারী৷’’
দীপ্তেন্দ্রর আরো ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি যতবার মুসলিমদের ফেরত পাঠানোর কথা বলবে, ততবার তারা হিন্দুত্ব কার্ড খেলবে৷ এই কার্ডের ঢাল হিসেবে তারা সামনে আনছে জাতীয়তাবাদকে৷ এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে বিজেপি এগিয়ে থাকবে৷ কারণ, বর্তমান সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে তার বিরোধিতা করা সম্ভব নয়৷’’
তবে এসব দীর্ঘ বিতর্কের বিষয়৷ তা সত্ত্বেও এটাই ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি'র দর্শন৷ তাই তার প্রচার দলের জন্য বাধ্যতামূলক৷ আসামের পর ত্রিপুরায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি নিয়ে শোরগোল তারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আসাম নিয়ে হইচই করে চলেছে৷ এবার তারা ত্রিপুরা নিয়ে গলা চড়াইলেই সুবিধা হবে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের৷
চলতি বছরের ৩০ জুলাই আসামে নাগরকিপঞ্জির দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশ পেয়েছে৷ তারপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরাতেও এনারসি চালু করার আর্জিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ‘ন্যাশনালিস্ট পার্টি অফ তুইপরা’৷ সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস কে কল এবং বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চ৷
এতসবের মধ্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের উক্তি, ‘‘আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সফল হলে ত্রিপুরাতে চালু হবে৷’’
ত্রিপুরার প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বিজেপি-র নিজস্ব দর্শন হলো হিন্দু ও অহিন্দুদের বিভাজন৷ আসামের পর ত্রিপুরায় নাগরিকপঞ্জির জিগির তুলে বস্তুত হিন্দুদের উসকানি দিতে শুরু করেছে ওরা৷ এটা প্রথম ধাপ৷ ফলের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে৷ সুবিধা মতো পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে৷’’ কিন্তু, হিন্দুত্বের এই তাস এবার আর কাজে আসবে না বলে মনে করেন এই কংগ্রেস নেতা৷