1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসামের নাগরিকপঞ্জি: কার পক্ষে, কার বিপক্ষে?

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৩১শে জুলাই প্রকাশিত হয় আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জি৷ ১৯৫১ সালে প্রকাশিত প্রথম নাগরিকপঞ্জির পর, ২০১৪ সালে শুরু হয় এর হালনাগাদ প্রক্রিয়া৷ আসাম আদমশুমারীর সাবেক অধিকর্তা শ্রী ভাগাইওয়ালার মতে, নাগরিকপঞ্জির নিয়মিত হালনাগাদ দরকার৷

https://p.dw.com/p/35Oqw
Indien Assam Registrierung  National Register of Citizens
ছবি: Reuters/A. Hazarika

শুধু তাই নয়, নাগরিকপঞ্জি প্রাথমিকভাবে গঠিত হয় সদ্য স্বাধীন ভারতবর্ষের অন্তর্গত পরিবারের সংখ্যা নির্ধারণ উদ্দেশ্যে৷কিন্তু ১৯৫১ এবং ২০১৪ সালের নাগরিকপঞ্জির কাঠামোগত এবং ফলগত ফারাক প্রচুর৷

২০১৪ সালে নাগরিকপঞ্জির যে নবায়নপ্রক্রিয়া চালু হয়, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল আসামে বিদেশি শনাক্তকরণ এবং বাস্তবিক ভারতীয় নাগরিকদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা গঠন৷ এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্ব শেষে দেখা যায়, আবেদনকারী ৩ কোটি ২৯ লক্ষ আসামবাসী থেকে তালিকায় বাদ পড়ে যান ৪০ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ৷ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে বাদ পড়ে যাওয়া মানুষের নাগরিকত্ব৷ আসামে বসবাসকারী ‘ভারতীয়' পরিবারের সংখ্যা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না৷ এমন দেখা যায়, কোনো পরিবারের সন্তান তালিকার বাইরে, অথচ মা-বাবা দু'জনই তালিকায় বর্তমান৷ অথবা স্বামীর নাম তালিকায় রয়েছে, কিন্ত তাঁর স্ত্রী বা তাঁদের সন্তান অনুপস্থিত৷ প্রশ্ন ওঠে, কারা এই ৪০ লক্ষ মানুষ, যাঁদের ঠাই মেলেনি নাগরিকপঞ্জির সম্পূর্ণ খসড়ায়? কী-ই বা তাঁদের ভবিষ্যৎ?

নাগরিকপঞ্জি সমণ্বয়কের পক্ষে কোনো স্পষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলেও তালিকা-বহির্ভূত মানুষেরা বেশিরভাগই বাংলাভাষী৷ কিন্তু তালিকার বাইরে থেকে গেছেন এমন অসমীয়া, বোড়ো, পাঞ্জাবী বা ডিমাসাভাষী মানুষেরাও আছেন৷ চোখে পড়ার মতো সংখ্যায় তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন মহিলারা, যারা বিবাহসূত্রে আসাম-নিবাসী৷ এ সবের মূলে রয়েছে নাগরিকপঞ্জির নবীকরণ প্রক্রিয়ায় বিচার্য নথিপথের কেন্দ্রীয় ভূমিকা, যার অভাবে প্রশ্নের মুখে লক্ষাধিক নাগরিকের আগামী জীবন৷ আসামের শিলচরে জন্মগ্রহণ করা বর্তমানে শিলঙে কর্মরত গবেষক রম্যানি চক্রবর্তীর মতে, ‘‘নাগরিকপঞ্জিতে নাম নথিভুক্ত হওয়ার সময়ের খবর অনুযায়ী, বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে নথিপত্র পরীক্ষার কড়াকড়ি অনেকাংশে বেশি ছিল৷ এর মূল কারণ সম্ভবত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী থিওরি, যা আসামের রাজনীতির দীর্ঘদিনের সঙ্গী৷ বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবেন গরিব মানুষেরা৷''

কথা ছিল ৩০শে আগস্ট থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া থেকে বাদ পড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্তি অথবা ভুল সংশোধনের জন্য পুনরায় আবেদন করতে পারবেন৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি৷ সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে কোনো নির্দিষ্ট তারিখও ঘোষণা করা হয়নি এ বিষয়ে৷ ইতিমধ্যে, তালিকায় স্থান পেয়ে যাওয়া ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের দশ শতাংশের দলিল পুনর্বিবেচিত হবে বলে সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষে জানানো হয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয় যে, নাগরিকপঞ্জির খসড়া আসলেই ত্রুটিমুক্ত৷ সব মিলিয়ে নাগরিকপঞ্জি বিষয়ক ধোঁয়াশা এখনই কাটছে বলে মনে করছেন না অনেকেই৷

সাবেক আসামবাসী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের মতে, ‘‘নাগরিকপঞ্জি অবৈধ না হলেও অন্যায়ে ভরপুর এবং এই সম্পর্কিত ঘটনাবলী আপাতত অত্যন্তজটিল এবং ঘোলাটে৷ পঞ্জির সমণ্বয়ক প্রতীক হাজেলা এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে অমিল থাকায় ‘স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর' নিয়েও যথেষ্ট অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে৷'' কিন্ত ভাষিক-ধর্মগত সংখ্যালঘু, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষ এবং বিবাহিত নারীদের ওপর দিয়েই যে নাগরিকত্ব প্রমাণের ঝড় বইবে, সেই বিষয়ে তিনিও একমত৷

আসামের একটি  দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক বিপ্লব রায়চৌধুরী গুয়াহাটি থেকে জানান, ‘‘অসমের জ্বলন্ত বিদেশি সমস্যার সমাধান করতেই কংগ্রেস আমলে শুরু হয় নাগরিকপঞ্জি উন্নিতকরণের কাজ৷ কিন্তু বিদেশি বিতাড়নের নামে আসল ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে ছেলে-খেলা শুরু করেছে বর্তমান নাগরিকপঞ্জি কর্তৃপক্ষ৷ গত ৩১ জুলাই এনআরসি-র যে সম্পূর্ণ খসড়া প্রকাশ পেয়েছে, এতে ৪০ লক্ষের বেশি লোকের নাম বাদ পড়েছে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ৪০ লক্ষ কারা? এদের ভাষা বা ধর্ম কী? পঞ্জিছুটদের সিংহভাগই যে ভারতীয়, তা হলফ করে বলা যায়৷ এর মধ্যে বাঙালি, হিন্দিভাষী, নেপালি, এমন কি খিলঞ্জীয়া অসমিয়াও রয়েছেন৷ তাছাড়া আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে তাদের নাম না থাকার কোনো কারণই দেখানো যায়নি৷ ‘টেকনিকাল এরর', ‘নো রিজন' ইত্যাদি শব্দবন্ধ খাতায় কলমে উঠে আসছে৷ ফলে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, এর পেছনে একটা চক্রান্ত কাজ করছে৷ হয়ত কিছু উগ্রজাতীয়তাবাদী সংগঠনকে খুশি করতেই কিছু বিশেষ ভারতীয়ের গায়ে বিদেশির তকমা সাঁটা হচ্ছে৷''

সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের শুনানি ছাড়াও, বর্তমানে নাগরিকপঞ্জি বিষয়ে রয়ে যাচ্ছে মূলত তিনটি প্রশ্ন৷ প্রথমত, কবে শুরু হবে সংশোধন প্রক্রিয়া এবং আদৌ কি চলতি বছরের শেষে প্রকাশ পাবে আসামের সম্পূর্ণ নাগরিক তালিকা? দ্বিতীয়ত, এত কাঠখড় পুড়িয়ে সম্পূর্ণ হওয়া নাগরিকপঞ্জির মূল কর্তব্য ঠিক কী? কোন খাতে ব্যবহৃত হবে নাগরিক সম্বন্ধিত তথ্যাবলী? এবং সর্বোপরি, পঞ্জি-বহির্ভূত মানুষদের ভবিষ্যৎ কী? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই যে, ৪০ লক্ষ মানুষ সত্যিই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, তাহলে অপর্যাপ্ত ডিটেনশন ক্যাম্প এবং বাংলাদেশের সাথে কোনো প্রত্যর্পন চুক্তি না থাকায় ৪০ লক্ষ মানুষের আগামী ঠিকানা কি তবে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড'?

শবনম সুরিতা ডানা

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য