অ্যামেরিকায় বিক্ষোভে গুলি, মৃত দুই
২৭ আগস্ট ২০২০কেনোশায় জেকব ব্লেককে পুলিশের গুলির পর যে প্রতিবাদ ও সংহিসতা শুরু হয়েছে, তাতে এ বার গুলি চলল। চালাল ১৭ বছরের এক টিনএজার। তাতে মারা গেছেন দুই বিক্ষোভকারী। একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে। ইলিনয় থেকে টিনএজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে বাস্কেটবল লিগ এনবিএ-তে তিনটি ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। কারণ, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একটি টিম মাঠে নামতে চায়নি।
হুমকি অবশ্য আগেই দেয়া হয়েছিল। মূলত শ্বেতাঙ্গদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী জানিয়েছিল, তারা সম্পত্তি রক্ষা করবে। এই গোষ্ঠীার নাম আর্মড সিটিজেনস টু প্রোটেক্ট লাইভস অ্যান্ড প্রপার্টি। তারা জানিয়েছিল, সরকারি ভবন রক্ষা করা হবে। ভাঙচুর করতে দেয়া হবে না। কোমরে হ্যান্ডগান এহং হাতে এআর ১৫ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সংগঠনের তরফে কেভিন ম্যাথুসন জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে রক্ষা করবেন। তবে বিক্ষোভে গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে এই সংগঠন জড়িত কি না জানা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। তাকে ইলিনয় থেকে উইসকনসিন নিয়ে যাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
নিরস্ত্র জেকবের ওপর পুলিশের দুই কর্মী সাতটি গুলি চালিয়েছিল। জেকব এখন হাসপাতালে। গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। যকৃৎ, অন্ত্রেরও ক্ষতি করেছে। তিনি আর হাঁটতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবারের আইনজীবী। এই ঘটনার পরেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ চলার সময়ই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষ হয়। তখনই ওই টিনএজার তার সেমি অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলি চালায়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সে তারপর রাস্তা পার হয়ে চলে যাচ্ছে, আর তার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে পুলিশের গাড়ি। পরে পাশের রাজ্য ইলিনয় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এনবিএ প্লেয়ারদের বয়কট
ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন বা এনবিএ তিনটি ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হলো। কারণ, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বাস্কেটবল টিম মিলওয়াকি বাকস মাঠে নামতে চায়নি। অরল্যান্ডো ম্যাজিকের বিরুদ্ধে তারা খেলেনি। দলের প্লেয়ার জর্জ হিল বলেছেন, ''আমরা বর্ণবাদী অন্যায় ও হত্যার ঘটনায় ক্লান্ত।'' বাকসের এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের ফলে এনবিএ আপাতত তিনটি ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। দলের সহ সভাপতিও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন।
তবে শুধু তাঁরাই নন, অন্য দলের প্লেয়ার এবং কোচরাও ব্লেকের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলির তীব্র নিন্দা করেছেন। লস এঞ্জেলেস লেকার্সের সুপারস্টার লিব্রন জেমস বলেছেন, ''আমরা বীতশ্রদ্ধ। আমরা পরিবর্তন চাই।'' অ্যামেরিকার মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, অন্য দলগুলিও বাকসের পথ নেওয়ার কথা ভাবছে।
ন্যাশনাল গার্ড ও ফেডারেল বাহিনী
কেনোশাতে ন্যাশনাল গার্ড ও ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে জানিয়েছেন, ''লুটপাট, আগুন, সহিংসতার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। কেনোশায় ন্যাশনাল গার্ড ও ফেডারেল বাহিনী পাঠাচ্ছি। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করবে।''
উইসকনসিনের ডেমোক্র্যাট গভর্নর টনি এভার্স বলেছেন, ''এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর না ঘটে। একইসঙ্গে আমি আবার আবেদন জানাচ্ছি, বিক্ষোভ যেন শান্তিপূর্ণ থাকে। সেই সঙ্গে এটাও বলতে চাই, উইসকনসিনের ন্যাশনাল গার্ড, স্থানীয় আইন রক্ষাকারীদের নিজেদের কাজ করতে দিন।'' এভার্সের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ফেডারেল বাহিনী পাঠানো নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ আছে।
তবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুধুমাত্র কেনোশাতেই নয়, পোর্টল্যান্ড. নিউ ইয়র্ক, ওরেগন, কেনটাকি সহ বিভিন্ন রাজ্যে হচ্ছে। অ্যামেরিকা জুড়ে আবার শোনা যাচ্ছে, 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স' বা 'কালো মানুষেরও জীবনের দাম আছে।'
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)