ঘুমের ওষুধের সন্ধানে
২৯ আগস্ট ২০১৩অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া রোগী অ্যানি মেরি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ১৯ বছর আগে এ রোগের শুরু৷ একেবারেই ঘুমাতে পারছিলেন না তিনি৷ তিনি বললেন, যাঁদের এ অসুখ নেই তাঁরা কল্পনা করতে পারবে না এটা কতটা ভয়াবহ৷
মায়ের মৃত্যুর পরই এ অসুখ শুরু হয় মেরির৷ তাঁর মনে হতে থাকে, তিনি তাঁর মায়ের শবদেহ ছুঁয়ে বসে আছেন৷ মানুষের শরীর যে এতটা শীতল হতে পারে, এটা তাঁকে ভয়ঙ্কর আঘাত করেছিল৷ ঘুমের মধ্যে একথাটা ভেবেই একরাতে তার ঘুম ভেঙে যায়৷ সেদিন আর ঘুমাতে পারেননি তিনি৷
এরপর মেরি এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন৷ সেদিন তিনি এতটাই কষ্টে ছিলেন যে চিকিৎসকের সামনেই কেঁদে ফেলেন৷ এখন তাঁর বয়স ৬৮৷ মেরি জানালেন, এ বিষয়ে এত চিকিৎসক আছেন, কিন্তু কেউই তাঁকে সাহায্য করতে পারেননি৷ অনেক বছর পর অ্যানি মেরির পরিবার তাঁর জন্য একটা সমাধান খুঁজে পায়৷ প্রতিরাতে তিনি এখন একটি ঘুমের ওষুধের এক তৃতীয়াংশ গ্রহণ করেন৷ দশ বছর আগে এটা শুরু করেছিলেন৷ তিনি জানালেন, এছাড়া ভিন্ন কোনো পথ ছিল না৷ তাঁর মনে হয়েছিল, হয় এটা তাঁকে খেতে হবে, নয়ত তিনি মারা যাবেন৷
দুশ্চিন্তা: ঘুমের শত্রু
জার্মানির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত রবার্ট কখ ইন্সটিটিউটের মতে, জার্মানদের ২৫ ভাগই অনিদ্রা রোগে ভুগছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ-এর সেন্টার ফর স্লিপ ডিসঅর্ডার্স রিসার্চ-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ ভাগ মার্কিন নাগরিক ক্রনিক ইনসমনিয়ায় ভোগেন৷
ইনসমনিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক সমস্যার কারণে হয় বলে জানালেন মাইৎস শহরের একটি হাসপাতালের ‘স্লিপিং সেন্টার'-এর পরিচালক হান্স-গ্যুন্টার ভেস৷ তিনি জানালেন, রোগীরা ভুলে যান, কিভাবে বিশ্রাম নিতে হবে৷ এর ফলে থাইরয়েডের কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এসব রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া এবং চাকুরি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়৷
ঘুমের জন্য মস্তিষ্ককে জোর
স্বাভাবিকভাবে ঘুমানো যে কারো জন্য খুব ভালো৷ কিন্তু মেরির মতো যাঁরা কোনো সাহায্য ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, তাঁদের জন্য গবেষকরা আদর্শ ঘুমের ওষুধ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন৷ এমংন এক ওষুধ, যার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই৷
১৯৫০ সালে চিকিৎসকরা বুঝলেন, এসব ওষুধ যাঁরা গ্রহণ করছেন, তাঁরা এতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন৷ এরপরই বাজারে এলো বেনজোডায়াসেপাইন৷ ভ্যালিয়াম এমনই একটি ওষুধ, যা এখন বেশ পরিচিত৷ যা মস্তিষ্কের জিএবিএ গ্রাহককে তাদের কাজে সাহায্য করে এবং মানুষকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে৷
এরপরও আরও একটি ওষুধ এসেছে যার নাম জেড ড্রাগস৷ যেমন জলপিডেম এবং জপিক্লোন৷ বেনজোডায়াসেপাইনের চেয়েও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম৷ ইনসমনিয়ার ক্ষেত্রেই এগুলোকেই এখন সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হিসেবে বলা হচ্ছে৷
স্বাভাবিক ঘুম নয়
সব ধরনের ঘুমের ওষুধ, বিশেষজ্ঞরা যাদের হিপনটিক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন, এ সবের একটা সাধারণ দিক আছে, আর সেটা হল রোগীর ঘুমের অবস্থার পরিবর্তন৷
তারা কেবল গভীর ঘুম এবং আরইএম – ঘুমের এই দুটি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকে৷ নতুন ঘুমের ওষুধগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হলেও – কিছু তো অবশ্যই আছে, আর তা হলো ঘুম থেকে উঠে অবসাদগ্রস্ত হওয়া৷ এমনকি ওষুধ খাওয়ার কারণে রোগীরা মধ্যরাতে গাড়িও চালাতে পারে না৷
তবে দুই সপ্তাহের বেশি ব্যবহারের ফলে অনেক সময় এগুলোর উপর আসক্তি বেড়ে যায়, এগুলো ছাড়া আর ঘুম আসে না৷ অথবা এগুলো তেমন কাজ দেয় না৷
নতুন হিপনটিকের আশায়
ভেস অবশ্য বলছেন, ভবিষ্যতে ইনসমনিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ডুয়েল অরেক্সিন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট বা ডিওআরএ৷
গবেষকরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, নিউরোট্রান্সমিটার অরেক্সিন দেহের সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখে৷ দিনের বেলা অরেক্সিনের মাত্রা থাকে বেশি, যাতে সবাই জেগে থাকতে পারে৷ রাতের বেলায় অবশ্য এর মাত্রা কমে যায়, যার কারণে ঘুম আসে৷
ডিওআরএ-র অরেক্সিনের মাত্রা কমিয়ে দিলে মানুষ ঘুমাতে পারবে৷ তাই এ নিয়ে এরইমধ্যে কাজ করা শুরু করেছেন জার্মান গবেষকরা৷