আদিবাসীদের উপর নির্যাতন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪এছাড়া পাঁচজন ত্রিপুরা কন্যাশিশুসহ ১৬ জন আদিবাসী শিশুকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর করা হয়েছে৷
বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে৷ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে মানবাধিকার সংস্থা কাপেং ফাউন্ডেশনের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অক্সফ্যামের সহায়তায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিপাশা চাকমা ও বাবলু চাকমা৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার৷ এ বিষয়ে দলটির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে৷ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় গত বছরই পাহাড়ের ৩১ জনসহ মোট ৪২ আদিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কমপক্ষে আটটি সহিংস হামলায় সমতলের ৭১ এবং পাহাড়ের ২৭৫ পরিবারসহ মোট ৩৪৬টি পরিবারের ঘরবাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়৷ ‘সেটেলার' নামে পরিচিত ও অভিবাসী অ-আদিবাসীদের হামলায় পাহাড়ের ৪০০ পরিবারের প্রায় দুই হাজার মানুষ ভারত সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে' আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে৷
প্রতিবেদনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মেসবাহ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকলেই কেবল এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব৷ আদিবাসীরা নয়, জঙ্গিবাদিরাই দেশের শত্রু৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের নাগরিক হিসেবে আদিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের আন্তরিক হওয়া উচিত৷'' তাঁর মতে, ‘‘দিনদিন আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন বেড়েই চলেছে৷ রাষ্ট্র সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ যার কারণে আদিবাসীদের অবস্থার আবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ এদিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে৷''
মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৩ সালেই আদিবাসী-অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকায় প্রায় তিন হাজার ৭৯২ একর এবং সমতলের ১০৩ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা৷ এ সময়ে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ২৬ আদিবাসী পরিবার৷ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত এক বছরে ৬৭ জন আদিবাসী নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ এদের মধ্যে ৫৪ জন পাহাড়ি এবং ১৩ জন সমতলের বাসিন্দা৷ এদের মধ্যে ১২ জন পাহাড়ি নারীসহ মোট ১৫ আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘অপরাধীরা শাস্তি না পেলে নতুন করে অপরাধ করতে উত্সাহিত হয়৷ শুধু আইন থাকলেই হবে না, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে৷'' গেল বছর দুর্বছর ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক বছর তো দুর্বছর হবে না৷'' তাই ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷ সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের প্রতিবেদন সরকারকে লজ্জায় ফেলে না কিংবা বিব্রত করে না, বরং এসব রিপোর্ট দেশের বর্তমান অবস্থাকে তুলে ধরে৷''