কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২‘আল্লাহ মহান', ‘আল্লাহর এবং পবিত্র কোরান শরিফের সম্মান রক্ষা করবো' – এই স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা৷ সবার হাতে ছিল লাঠি বা কাঠের বড় টুকরা৷ আন্দোলনকারীদের সবাই পুরুষ৷ তরুণ, অল্পবয়স্ক, বৃদ্ধ – সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছে এই প্রতিবাদে৷
গত বৃহস্পতিবার জার্মান সেনাদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে আফগানরা৷ বাগলান প্রদেশের তাখারে জার্মান সেনাদের একটি ঘাঁটি রয়েছে৷ ঘাঁটির দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা সিদ্ধান্ত নেন ঘাঁটি খালি করার,সেখান থেকে চলে যাওয়ার৷ প্রায় ৬০ জন সেনা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছ-গাছ করে সেনাবহরে দ্রুত তাখার থেকে কুন্দুসে চলে যায়৷ কেউই সেখানকার পরিস্থিতির জন্য দায়িত্ব নিতে রাজি নয়৷ সবাই চিন্তিত, সবাই আতঙ্কিত৷ কারণ সপ্তাহান্তে ঘটনা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে৷ বিশেষ করে রাজধানী কাবুলে নিরাপত্তা অত্যন্ত কড়াকড়ি করা হয়েছে৷ পুলিশ প্রায় প্রতিটি মানুষকে প্রশ্ন করছে, প্রতিটি গাড়ি থামাচ্ছে৷ প্রতিটি মসজিদের কাছে পাহারা বসানো হয়েছে৷ এরপরও প্রতিবাদ চলছে এবং বেশ ভালভাবেই তা করা হয়েছে৷ কোন প্রতিবাদ মিছিলেই লোকের অভাব হয়নি৷
পুরো বিষয়টি অত্যন্ত অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ বারাক ওবামা ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু তাতেও শান্ত হয়নি ক্ষিপ্ত আফগানরা৷ অ্যামেরিকানদের ওপর আফগানরা এমনিতেই ক্ষিপ্ত৷ এরপর গত চারদিনের আগের ঘটনা আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করেছে৷ একটি সাক্ষাৎকারে দেখানো হয়েছে যে মার্কিন সেনারা বিভিন্ন পুরানো জিনিসপত্র আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি কোরান৷ ময়লা এবং ছাইয়ের স্তূপ থেকে আংশিক পুড়ে যাওয়া কোরান উদ্ধার করা হয়েছে৷ একজন আফগান সেই কোরান তুলে ধরেছেন৷ বিভিন্ন ধরণের জিনিস এবং বইপত্র আফগানিস্তানের একটি কারাগার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৷ সবকিছুই আগুনে পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ কিন্তু কী কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়নি৷ একজন জানালো, ‘‘আমরা মার্কিন সেনাদের বলেছিলাম যে, পবিত্র কোরান আগুন থেকে তুলে আনা হোক৷ তারা যতই ক্ষমতাশীল হোক না কেন – আমাদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা পবিত্র কোরান এবং আল্লাহ-র জন্য লড়ে যাবো৷ আমরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছি – শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে আমরা সবাই রাজি৷ কেউই পিছপা হবে না৷ বরং আমরা সম্মানের সঙ্গে শহীদ হওয়ার পথ বেছে নেব৷''
কথাগুলো যিনি বলেন, তিনিই আগুনের মধ্যে থেকে কোরানের কপিটি বের করে আনেন৷ বাগরামে মার্কিন ঘাঁটিতে কারাবন্দীদের ব্যবহৃত জিনিস পত্র আগুনে পোড়ানো হয়৷ এর মধ্যে কোরানও ছিল৷
আফগানিস্তানের মানুষরা ধর্মভীরু৷ মানুষের জীবনে কোরান সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ গত তিরিশ বছরের যুদ্ধে আফগানদের মধ্যে ধর্ম আরো গভীর স্থান দখল করে নেয়৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, বাগরামের এই ঘটনা আফগানদের বিদেশি বাহিনী থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে৷ বিদেশি সেনাদের প্রতি আফগানদের আস্থা কখনোই পুরোপুরি ছিল না৷ এবার প্রকাশ্যেই তার প্রমাণ দেয়া হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে৷
তালেবান এই ঘটনার সুবিধা নেবে৷ এর কারণে বিদেশিদের হত্যা করা যেতে পারে, সে ঘোষণা তারা দিয়েছে৷ তাই বিদেশি সেনরাও ভয় পাচ্ছে৷ কারণ এই মুহূর্তে তারা কেউই নিরাপদে নয়৷
প্রতিবেদন: সান্ড্রা পেটার্সমান / মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন