আফ্রিকার উন্নয়ন
১১ জুন ২০১২২০১২ সালে আফ্রিকা মহাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ৷ কিন্তু তারপরেও আফ্রিকা অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ এর মূল কারণ হলো, পড়াশোনা শেষে ইন্টার্নশিপ বা প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা সেখানে নেই৷ জার্মানিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘আফ্রিকা বিজনেস উইক' সম্মেলন৷ সেখানে উপস্থিত প্রতিনিধিরা কথাগুলো জানান৷
আফ্রিকায় কীভাবে ব্যবসা চলে বা কীভাবে ব্যবসা চালাতে হয়, তা বেশ করেই জানেন আরনুল্ফ ক্রিস্টা৷ জার্মান প্রতিষ্ঠান বাউয়ার'এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কাজ করছেন আফ্রিকায়৷ এই প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকার বড় বড় শহরগুলোতে ভবন এবং সেতুর ফাউন্ডেশন বসায়৷ কোম্পানিটি আফ্রিকায় বেশ ভাল করছে, কারণ সেখানে খুব সস্তায় কাজ করার লোক পাওয়া যাচ্ছে৷ এবং বেশ স্বাধীনভাবেই কোম্পানিটি প্রয়োজনীয় শ্রমিক বেছে নিচ্ছে, খুঁজেও পাচ্ছে৷
তবে এটা খুব সহজ কাজ নয়৷ আক্ষেপের সঙ্গে ক্রিস্টা বলেন, কর্মীদের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদের শুরু থেকে সবকিছু শেখাতে হচ্ছে৷ এবং যখনই তারা শিখছে, নিজেরা কাজে কমবেশি দক্ষ হয়ে উঠছে, সঙ্গে সঙ্গেই তারা চলে যাচ্ছে অন্য আরেকটি কোম্পানিতে৷ অনেক বেশি বেতনে তারা যোগ দিচ্ছে অন্যান্য কোম্পানিতে৷ কারণ তখন তাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা৷ আর অন্যান্য কোম্পানিগুলোও তাদের লুফে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে৷
আরনুল্ফ আরো বললেন, ‘‘জার্মানিতেও এক কাজ থেকে অন্য কাজে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে দক্ষ কর্মীদের মধ্যে৷ নতুন চাকরিতে তাদের বেতনও বাড়ে৷ কিন্তু তা কখনোই পাঁচ বা দশ শতাংশের বেশি নয়৷ অথচ আফ্রিকায় বেতন বাড়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ৷''
বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করছেন, যে গত কয়েক বছর ধরেই আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে৷ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আফ্রিকাতে বিনিয়োগ করছে আগের চেয়ে বেশি৷ বিশেষ করে সেই সব দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেসব দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর৷
তবে কথা হচ্ছে, যদি স্থানীয় মানুষদের এই বিনিয়োগ থেকে লাভবান করতে হয়, তাহলে সবার আগে প্রয়োজন পড়বে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার৷ যেসব ট্রেনিং দেয়া হয় তা যথেষ্ট নয়৷ ট্রেনিং-এর মান আরো উন্নত করতে হবে৷
বিদেশি শ্রমিকের মূল্য অনেক বেশি
জার্মান সংস্থা জিআইজেড-এ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আন্দ্রেয়াস ক্যোনিশ৷ তিনি জানান, আফ্রিকায় প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী স্কুল শেষ করছে এবং পড়াশোনার ইতি সেখানেই ঘটছে৷ পড়াশোনায় আর কোন অগ্রগতি তাদের নেই৷ তারা নিজেদের শ্রম বাজারের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারছে না৷ যদিও প্রতিটি দেশের সরকার খুব ভাল করে জানে, যে দক্ষ শ্রমিকের অভাব তার দেশে রয়েছে৷ কিন্তু তারপরেও তারা কোন ধরণের ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করছে না৷ এ ধরণের কোন সেন্টার চোখে পড়বে না৷
‘‘আর একারণেই দক্ষ শ্রমিকদের নিয়ে আসতে হয় বিদেশ থেকে৷ বলা যেতে পারে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রয় করে আনতে হয়৷ তাদের পারিশ্রমিক অত্যন্ত বেশি এবং এর ফলে দেশ বা কোম্পানি কারোরই খুব বেশি লাভ হয় না৷''– কথা গুলো বলেন ক্যোনিশ৷
জেই ডোহার্টি নাইজেরিয়ার একজন ব্যবসায়ী৷ তিনি জানান, নাইজেরিয়ায় বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশি শ্রমিকের চেয়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ দেখায় বেশি৷ সরকার চেষ্টা করছে তা পরিবর্তনের৷ সরকার চাইছে, যে সরকারি প্রতিটি বিজ্ঞপ্তিতে নাইজেরিয়ার কোম্পানিগুলোও এগিয়ে আসুক, তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ কারণ বাস্তবে দেখা যায়, যে বিদেশি কোম্পানিগুলোই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টেন্ডারগুলো জেতে৷ ইদানিং নাইজেরিয়ার সরকার শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি কোম্পানিতে নাইজেরিয়ার শ্রমিক থাকতে হবে৷ এই মনোভাব নতুন বলে জানান ডোহার্টি৷ তবে শুধু নাইজেরিয়া নয়, আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি দেশই তা অনুসরণ করছে৷
ডোহার্টি খুব ভাল করেই জানেন যে, দক্ষ শ্রমিক থাকলে যে কোন কোম্পানিই এসব টেন্ডারে এগিয়ে আসবে৷ যদি সেরকম শিক্ষিত, অভিজ্ঞ এবং দক্ষ শ্রমিক থাকে, তাহলে যে কোন কোম্পানিই প্রথম সারিতে নিজেদের নিয়ে আসতে পারে৷ সবাই ইদানিং স্বীকার করছে, যে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পেছনে সময় এবং অর্থ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন৷ এখানে এসে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে৷ কেউ কেউ বলছে শিক্ষার প্রয়োজন বেশি৷ অনেকেই বলছে প্রশিক্ষণই একজন দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারে৷ তবে একথা ঠিক, একটি কোম্পানি একদল দক্ষ শ্রমিক তৈরি পারে না৷ এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা৷
প্রতিবেদন: আড্রিয়ান ক্রিশ/মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন