সমালোচনার মুখে জার্মান গাড়ি শিল্প
৩০ জানুয়ারি ২০১৮ঘটনার শুরু বৃহস্পতিবার সেদিন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক খবরে দশটি বানরের উপর গবেষণা চালানোর খবর প্রকাশিত হয়৷ এতে বলা হয়, একটি গবেষণা সংস্থা বায়ুশূন্য একটি ঘরে দশটি বানর রেখে সেখানে ডিজেলের ধোঁয়া ছেড়েছিল৷ এর মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল কম ক্ষতিকর, এমন একটি ফলাফল পাওয়ার চেষ্টা করা হয়, বলে ঐ প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়৷ কারণ আলোচিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জার্মান ঐ তিন গাড়ি নির্মাতার অর্থায়নে চলত৷ আর গবেষণায় ফল্কসভাগেনের একটি গাড়ি থেকে নিসৃত ডিজেলের ধোঁয়া ব্যবহৃত হয়েছিল৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপ অন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ ইন দ্য ট্রান্সপোর্ট সেক্টর' বা ইইউজিটি৷ গতবছর প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে যায়৷
নিউ ইয়র্ক টাইমসে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর সপ্তাহান্তে এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ফল্কসভাগেন৷ সংস্থার প্রধান লবিয়িস্ট টোমাস স্টেগ ‘বিল্ড' পত্রিকাকে মঙ্গলবার জানান, প্রাণীর উপর আর কখনও পরীক্ষা না চালানোর অঙ্গীকার করছে ফল্কসভাগেন৷
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল, যা পরবর্তীতে ‘ডিজেলগেট' নামে পরিচিতি পেয়েছিল৷ কোম্পানিটি প্রায় ১১ মিলিয়ন গাড়িতে এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করেছিল, যা দূষণের পরিমাণ কম দেখায়৷
ফল্কসভাগেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই থেমে থাকেনি৷ সোমবার স্টুটগার্টার সাইটুং ও স্যুড ডয়চে সাইটুং পত্রিকায় ইইউজিটি নামের ঐ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানুষের উপর পরীক্ষা চালানোর খবর প্রকাশিত হয়৷ এতে বলা হয়, জার্মানির আখেন শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৫ জন স্বাস্থ্যবান মানুষকে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন মাত্রার নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করানো হয়েছে৷ পরে গবেষকরা পরীক্ষার ফলাফলে জানান, এই গ্যাস গ্রহণের ফলে ঐ মানুষদের উপর ‘বিশেষ প্রভাব পড়েনি'৷ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এই গবেষণাটি হয়৷
সোমবার সকালে এমন খবর প্রকাশে জার্মানির ঐ তিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এর কঠোর নিন্দা জানান৷ ‘‘বানর, এমনকি মানুষের উপর এ ধরনের পরীক্ষা নীতিগত বিবেচনায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়,'' বলেন ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সাইবার্ট৷ ভারপ্রাপ্ত পরিবহণমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান শ্মিড্ট জানান, ‘‘এর ফলে গাড়ি শিল্পের উপর বিশ্বাস আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হলো৷'' ঐ তিন প্রতিষ্ঠানকে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
এদিকে, অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠান ডাইমলারের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘গবেষণার বিস্তারিত জেনে আমরা আতঙ্কিত৷'' বিএমডাব্লিউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আলোচিত ঐ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি৷ আর ফল্কসভাগেন বলেছে, আলোচিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইইউজিটি-কে ‘স্বাধীন' প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল৷
অবশ্য বিশ্লেষকদের অভিযোগ, জ্বালানি হিসেবে ডিজেল কম ক্ষতিকর, এই বিষয়টি প্রমাণ করাই ঐ সংস্থার গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)