আবার মহাজোট সরকার
১৮ অক্টোবর ২০১৩সাধারণ নির্বাচন হয়েছে ২২শে সেপ্টেম্বর৷ কিন্তু নতুন সরকারের দেখা নেই৷ দেশ ঠিকই চলছে৷ আড়ালে আলোচনাও চলছে৷ অবশেষে ভবিষ্যৎ সরকারের রূপরেখা স্পষ্ট হতে শুরু হয়েছে৷ তবে চ্যান্সেলর থাকছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল-ই৷
জোট সরকার চালানো সহজ নয়৷ বিশেষ করে পছন্দের সহযোগীর ভরাডুবি হলে তো নয়ই৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল তাঁর বিপুল ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার বলে নিজের দলকে সাধারণ নির্বাচনে বিশাল সাফল্য এনে দিতে পেরেছেন বটে, কিন্তু ভরাডুবি হয়েছে বহুকালের সহযোগী উদারপন্থি দল এফডিপি-র৷ এমনকি সংসদ থেকেই মুছে গেছে সেই দল৷ আর কয়েকটা বেশি আসন পেলেই তাঁর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী শিবিরই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একাই সরকার গঠন করতে পারতো৷ কিন্তু সেটা যেহেতু সম্ভব হয় নি, তাই প্রয়োজন পড়েছে নতুন সহযোগীর৷
জোট গঠনের অঙ্কে হিসাব বাঁধা রয়েছে৷ এবারের নির্বাচনে মোট চারটি দল সংসদে প্রবেশ করতে পেরেছে৷ ম্যার্কেল-এর সিডিইউ ও বাভেরিয়ার সিএসইউ একটি শিবির, যাদের একটি সংসদীয় দল রয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি৷ তারপর সামান্য ব্যবধানে বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' ও সবুজ দল৷ বামপন্থিরা আপাতত ‘অচ্ছুত' – ফেডারেল স্তরে কেউই তাদের সঙ্গে জোট গড়তে প্রস্তুত নয়৷ অতএব থেকে যাচ্ছে বাকি দুই দল৷
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির দলীয় রাজনীতি জগতে নির্বাচনের পর তাড়াহুড়োর রেওয়াজ নেই৷ ধীরে-সুস্থে নেপথ্যে আলাপ-আলোচনাই স্বাভাবিক ঘটনা৷ ২৪ ঘণ্টা সংবাদের যুগের পরোয়া না করেই নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রবেশ করেন, বেরিয়ে আসেন৷ বড়জোর বলেন, ‘‘পরিবেশ ভালো ছিল, প্রতিপক্ষের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখা গেছে, একে-অপরকে আরও ভালোভাবে চিনতে পেরেছি''৷
এভাবেই ম্যার্কেল-এর শিবির নির্বাচনের পর থেকে একে একে এসপিডি ও সবুজ দলের সঙ্গে দফায় দফায় ‘প্রাথমিক' আলোচনা চালিয়ে এসেছে৷ সবুজ দলের সঙ্গে সরকার গঠন করা হবে না, এটা এখন স্পষ্ট৷ দুই পক্ষই অবশ্য পরস্পরের প্রতি বেশ সৌজন্য দেখিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে এমন জোট গড়া যেতেই পারে৷
অতএব থেকে যাচ্ছে একটিমাত্র পথ৷ ‘গ্র্যান্ড কোয়ালিশন
' বা মহাজোট৷ ম্যার্কেল-এর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী শিবির ও এসপিডি দলের সরকার৷ মানুষও এই অবস্থায় সেটাই চাইছে৷ প্রাথমিক আলোচনার পর এবার দুই পক্ষই এই লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত৷
২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ম্যার্কেল-এর নেতৃত্বেই এমন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় ছিল৷ সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেই সরকার এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে, যা সাধারণ জোটের পক্ষে সহজে সম্ভব হতো না৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সংসদে বিরোধী পক্ষ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়৷ সংসদের আগামী অধিবেশনে বামপন্থি ও সবুজ দলেরও সেই দশা হবে, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এসবি / জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)