মিউনিখের ‘আরব সপ্তাহ’
৫ অক্টোবর ২০১৩৩৬ বছর বয়সি আহমেদ পেশায় বিমানচালক৷ স্বদেশ সৌদি আরবে ডাক্তাররা তাঁর পায়ের অপারেশন করতে গিয়ে ভুলক্রমে একটি স্নায়ু কেটে ফেলেন৷ আরব মুলুকে জার্মানির ডাক্তারদের খুবই সুনাম৷ তাদের দিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য আহমেদ আসেন মিউনিখে৷ সে বছর দু'য়েক আগের কথা৷ আহমেদের পা এখন সেরে গেছে কিন্তু আহমেদকে পেয়ে বসেছে মিউনিখ৷ মাসের পর মাস হোটেলে ঘর নিয়ে দিব্যি কাটাচ্ছেন আহমেদ: ‘‘আমি যত জায়গায় গেছি, মিউনিখ তাদের মধ্যে সেরা৷ পরিষ্কার, নিরাপদ, মানুষজন ভদ্র, হাসিমুখ৷ আমার এখানে থাকতে দারুণ লাগে৷''
আরব ট্যুরিস্টদের জন্য ব্রিটেনের পরেই জার্মানি হলো ইউরোপে অন্যতম গন্তব্য৷ তাদের অধিকাংশই আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে; তার পরেই আসছে সৌদি আরব ও কুয়েত৷ মিউনিখ এই ক্ষণিকের অতিথিদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে তাদের নিজেদের দেশে যখন বেজায় গরম, তখন উপসাগর থেকে আসেন এই বিশেষ অতিথিরা দক্ষিণ জার্মানির ইসার নদীর তীরে সুদৃশ্য মহানগরীতে৷ এখানে তাঁদের তিনটে কাজ: ঐতিহাসিক ভবন ইত্যাদি দেখা; ডাক্তার-বদ্যি দেখানো; আর শপিং করা৷
দামটা কোনো ব্যাপারই নয়
আরব দেশের ওপরমহলের আমির-ওমরাহ পর্যায়ের লোকেদের বিত্তের অভাব নেই৷ কাজেই তারা খুব আদরের খদ্দের৷ মিউনিখে দিনে গড়ে ৫৫০ ইউরো খরচ করে থাকেন তারা – মাথাপিছু৷ জার্মানিতে তাদের কেনাকাটার অর্ধেকই হয় এই মিউনিখ শহরে৷ দামি জামাকাপড় ছাড়া কেনা হয় গয়নাগাঁটি, কাপ-প্লেট, এছাড়া ওষুধ-পত্র৷ কাজেই মিউনিখের নামি-দামি দোকানপাট আর হোটেলের মালিকরা গ্রীষ্মের এই সময়টাকে ‘‘আরব সপ্তাহ'' নাম দিয়েছেন৷
মহিলাদের হাতব্যাগ হোক আর সুগন্ধ হোক অথবা হিল-তোলা জুতোই হোক: আরবরা কেনেন বিলাসসামগ্রী৷ দাম যত বেশি হয় ততই ভালো৷ দৃশ্যত আরব মহিলাদের পছন্দ ধনি ইউরোপীয় মহিলাদের পছন্দের সঙ্গে অনেকটা মেলে৷ বহু আরব ট্যুরিস্ট ইংরিজি বলতে পারেন৷ তা সত্ত্বেও মিউনিখের সমৃদ্ধ বিপণিগুলি ইতিমধ্যে দোভাষী রাখতে শুরু করেছে৷ তবে মনে রাখতে হবে, আরব মহিলাদের ক্ষেত্রে পুরুষ বিক্রেতা কোনোমতেই চলবে না৷
পাহাড় দেখা, বরফ দেখা
মিউনিখের ভৌগোলিক অবস্থানও আরব অতিথিদের পছন্দ৷ কাছেই অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড কিংবা ইটালি৷ মিউনিখে বাসা বেঁধে বেশ ভালো করে ঘুরে নেওয়া যায়৷ সবচেয়ে বড় কথা: মিউনিখ থেকে আল্পস পর্বতমালা খুব দূরে নয়৷ মরুভূমির মানুষদের কাছে তুষারাবৃত পর্বতের আকর্ষণ কল্পনা করা যেতে পারে৷
জার্মানির সর্বোচ্চ পাহাড় হলো ‘সুগস্পিৎসে'৷ সেখানে বছরে শুধুমাত্র উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে হাজার পঁচিশেক ট্যুরিস্ট আসেন৷ অনেকেই হয়ত জীবনে প্রথমবার বরফ দেখছেন৷ কিন্তু মিউনিখ? মিউনিখে বায়ারিশে হোফ কিংবা কেম্পিন্সকির মতো নামকরা হোটেল হালাল খাবার থেকে শুরু করে নামাজ পড়ার ঘরের ব্যবস্থা রেখেছে৷ এছাড়া কিচেন শুদ্ধু অ্যাপার্টমেন্টও ভাড়া পাওয়া যায়৷ কাজেই আরব দেশ থেকে আগত অতিথিরা এই অতি-জার্মান শহরে মাসের পর মাস কাটাবেন না কেন?