সৌদি আরব
৬ আগস্ট ২০১২আরব বিশ্বে গত দেড় বছরের বেশি সময় আগে যে বসন্তের শুরু হয়েছে তার জের এখনও চলছে৷ তিউনিশিয়া এবং মিশরে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে, এসেছে গণতান্ত্রিক সরকার৷ লিবিয়াতে কর্নেল গাদ্দাফির পতনের পর সেখানে নির্বাচন হয়েছে৷ সিরিয়াতে এখনও চলছে গৃহযুদ্ধ যার শুরুটা হয়েছিলো আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের উত্তাল বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও এই আরব পুনর্জাগরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ তবে সৌদি আরব যেন একেবারেই ব্যতিক্রম৷
স্বৈরশাসনে সমর্থন
সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল ভিত্তি তাদের খনিজ তেল৷ প্রতিদিন কোটি কোটি ডলারের তেল রপ্তানি করে দেশটি শুধু নিজের অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, বিভিন্ন দেশে তাদের প্রভাবও বিস্তার করেছে৷ এই প্রভাব ধর্মীয়, অর্থনীতি এমনকি রাজনীতিতেও৷ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সামরিক বাহিনীকে আর্থিক সহায়তা দেয় সৌদি সরকার৷ যদিও সেসব দেশে রয়েছে স্বৈরশাসক৷ মিশরে হোসনি মুবারকের সময় সামরিক বাহিনীর অন্যতম বন্ধু ছিলো এই সৌদি রাজপরিবার৷ এই সম্পর্কে জার্মানির রাজনীতি বিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের গবেষক গিডো স্টাইনবের্গ বলেন, ‘‘সৌদি আরব আর্থিক সহায়তা বা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের প্রভাব বিস্তার করে থাকে৷ এই ক্ষেত্রে মিশর খুব ভালো উদাহরণ৷ দেশটিতে বিশেষ করে সামরিক বাহিনীকে সৌদি আরব সাহায্য দিয়ে আসছে৷ আর এর মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্র নীতির একটি বিশেষ দিক স্পষ্ট হয়, তা হলো সেই অঞ্চলে যে শাসন পদ্ধতি চলে আসছে, সেই স্বৈরশাসনকে রক্ষা করা৷''
আরব দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই সৌদি সরকারের এই মনোভাব লক্ষ্য করা যায়৷ একদিকে তারা তিউনিশিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক বেন আলি, ইয়েমেনের পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে৷ অন্যদিকে বাহরাইনে মানুষের বিক্ষোভ দমনে সেদেশে সেনা পর্যন্ত পাঠিয়েছে৷ এমনকি নিজ দেশে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ বিক্ষোভের প্রতিও কঠোর মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে দেশটির রাজপরিবার৷
ধর্মীয় ঢাল
কেবল রাজনীতি নয়, ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের প্রভাব দেখা যায়৷ ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হজ পালনের জন্য প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম দেশটির দুই পবিত্র শহর মক্কা এবং মদিনাতে যায়৷ দেশটির রাজপরিবার নিজেদের এই দুই পবিত্র শহরের রক্ষক বলেও দাবি করে৷ এই ধর্মীয় ঢালকে তারা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে৷ পাশাপাশি উগ্র ধর্মীয় মতবাদ প্রচারেও তারা এই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে৷ তবে আরব বসন্ত তাদের মনে ভয় এনে দিয়েছে বলে মনে করেন জার্মান গবেষক গিডো স্টাইনবের্গ৷ তার ভাষায়, ‘‘এই অঞ্চলের আরও অনেকের মত সৌদি সরকারও স্বৈরশাসক৷ এই সকল শাসন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য একটিই তা হলো তাদের ক্ষমতা রক্ষা করা৷ তবে তাদের মধ্যেও বলতে হবে এই ক্ষমতা হারানোর ভয় ঢুকে গেছে৷''
পশ্চিমা গবেষকদের মতে, সৌদি আরবের এই প্রভাব সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও একটি ভূমিকা রাখছে৷ তাদের ইরান বিরোধী অবস্থানের কারণে তারা সিরিয়ার আসাদ বিরোধীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়া পরিণত হয়েছে সুন্নি সৌদি আরব আর শিয়া ইরানের যুদ্ধক্ষেত্রে৷
প্রতিবেদন: আনে আলমেলিং/আরআই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক