দক্ষিণ অ্যামেরিকার বনাঞ্চল
৭ জুলাই ২০১৫কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা-র বোট্যানিক্যাল গার্ডেনের গবেষকরা এমন একটি উদ্ভিদের খোঁজে ছিলেন, যা বিগত ৫০ বছর ধরে দেখা যায়নি৷ গবেষকরা এবার সেই দুষ্প্রাপ্য গাছটি সন্ধান পেয়েছেন৷ গাছগুলি আকাশের মেঘ থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে তা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে৷ এভাবেই আন্ডিস পর্বতমালার আর্দ্র এলাকাগুলি গ্রীষ্মেও ঝর্ণা ও নদীগুলিতে জল থাকার ব্যবস্থা করে৷ অর্থাৎ এই আর্দ্র এলাকাগুলি কলম্বিয়ায় পানীয় জলের সবচেয়ে জরুরি উৎস৷
পার্বত্য এলাকার এই অ্যালপাইন তুন্দ্রা বা নিওট্রপিক্যাল হাইল্যান্ড এলাকাগুলো যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে পড়েছে, এমন নয়৷ সেই সঙ্গে রয়েছে কয়লা ও অপরাপর খনিজ পদার্থের খনি এবং ক্রমবর্ধমান কৃষিকাজ৷ বটানিস্ট মাউরিসিও দিয়াসগ্রানাদোস বোঝালেন, ‘‘এখানকার চাষিরা ‘পারামোস'-এ আগুন ধরিয়ে পরে সেখানে গরু চরানোর ব্যবস্থা করেন৷ পশুপালনের ফলে জমি, গাছপালা, এ সবই বদলে যায়, যার ফল দাঁড়ায় এই যে, পারামোস-গুলো আরো কম পানি ধরে রাখতে পারে, গোটা পরিবেশ প্রণালীটা আর কাজ করে না৷''
অন্নসংস্থান ও পরিবেশ সংরক্ষণ
আন্ডিস পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারা চিরকালই চাষবাস করে খান৷ এখানকার ছোট চাষিরা কলম্বিয়ার দরিদ্রতম মানুষদের অন্যতম৷ বোগোটার বোট্যানিক্যাল গার্ডেনের প্রকল্পটির কর্মীরা এই ছোট চাষিদের নিয়ে কাজ করতে এবং তাদের পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চান৷ বোগোটা-র বোট্যানিকাল গার্ডেন্স-এর কর্মী সল লিনারেস বললেন, ‘‘আমাদের বাস্তবকে মেনে নিতে হবে৷ চাষিরা তাদের চাষবাস ছেড়ে দেবেন না৷ কেননা সেটা তাদের জীবিকা, ওই দিয়ে তাদের অন্নসংস্থান হয়৷ কাজেই আমাদের একটা যৌথ নীতি উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে চাষবাসও থাকে, আবার পানি সম্পদের সুরক্ষা হয়৷''
পাহাড় থেকে আসা পানি দিয়েই রাজধানী বোগোটার মানুষদের প্রয়োজন মেটে৷ বোগোটা-র ৮০ লক্ষ মানুষ পারামোস থেকে আসা পানির উপর নির্ভর করেন৷ অপরদিকে বোগোটার বোট্যানিক্যাল গার্ডেনে শুধু শহরের মাঝখানে একটি সবুজ মরুদ্যানই নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকেন্দ্রও বটে৷ বিজ্ঞানীদের চিন্তা হল পারামোসগুলোর সংরক্ষণ নিয়ে৷
উদ্ভিদবৈচিত্র্য
পাহাড়ি তুন্দ্রাতে পাওয়া যায়, এমন প্রায় এগারো হাজার বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও গাছপালা নথিবদ্ধ করেছেন গবেষকরা৷ প্রতিদিনই নানা নতুন নমুনা আসে ল্যাবোরেটরিতে৷ সেক্ষেত্রে এই এয়ারকন্ডিশন করা কক্ষটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এখানে লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদদের চারা তৈরি করা হয় – কিছুটা গবেষণা, আবার কিছুটা সংরক্ষণের জন্য৷ বেশিরভাগই আসে পারোমোস থেকে৷ বটানিস্ট বেলকিস পেরেস মার্তিনেস জানালেন,‘‘ওষুধ তৈরিতে এ সব গাছপালা কাজে লাগে, আবার খাদ্য হিসেবেও৷আন্ডিস পার্বত্য অঞ্চলে এমন বহু উদ্ভিদ ও গাছপালা পাওয়া যায়, যেগুলো ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে কিনা তা আমাদের জানা না থাকলেও, সেগুলো আমাদের খাদ্যের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''
গাছটিকে বলে ‘ক্রেস্টেড রোজ' বা এস্পেলেশিয়া৷ গবেষণা পরিচালক দিয়াসগ্রানাদোস এগুলোর উপর নজর রাখেন৷ উদ্ভিদটি উচ্চ পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রার ওঠানামা অনায়াসে সামলে নিতে পারে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে অক্ষম৷ দিয়াসগ্রানাদোস বলেন, ‘‘আমরা জানি যে, আগামী কয়েক বছরে আরো কয়েক প্রজাতির গাছপালা লোপ পাবে৷ এই গাছগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে কী ভাবে রক্ষা করা যায়, আমরা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি৷''
গাছপালার বৈচিত্র্যের বিচারে কলম্বিয়া বিশ্বের সমৃদ্ধতম দেশগুলির মধ্যে পড়ে৷ গবেষকরা এখানে প্রায়ই নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন৷ উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের আশা, জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ার ফলে এই মূল্যবান পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব হবে৷ কেননা পারামোস হল কলম্বিয়ার কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনধারা৷