পর্বতমালার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ
১৭ অক্টোবর ২০১৩জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরের উপকূল বরাবর পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এলাকা ইউনেস্কো-র চিহ্নিত বিশ্বের ১০টি হেরিটেজ অঞ্চলের অন্যতম৷ এখানকার ‘ইকো-সিস্টেম' কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেবিষয়ে গঠন করা হয়েছিল দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি৷ একটি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মাধব গ্যাডগিল কমিটি, অন্যটি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কে. কস্তুরিরঙ্গন কমিটি৷ তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঐ এলাকাকে পরিবেশগত দিক থেকে অতি স্পর্শকাতর ঘোষণা করার নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে৷
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে কোনো রকম খননকার্য, পাথর কাটা, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ নিষিদ্ধ৷ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিয়মবিধি খুব কঠোর করা হয়েছে৷ এছাড়া, দূষণ ঘটায় এমন বিকাশমূলক প্রকল্প পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর, স্থানীয় গ্রামসভা সবুজ সংকেত দিতে পারে৷ রাস্তাঘাট তৈরি, রেললাইন বসানো, পাহাড় কেটে চাষের জন্য জমি তৈরি, বৃক্ষ নিধন, গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহের মতো মানুষের নানা কাজকর্মের দরুণ মানুষ আর বন্যপ্রাণীর মধ্যে বেধেঁছে সংঘাত৷ এ সবের মধ্যে রাখতে হবে এটা সুষ্ঠু ভারসাম্য৷
দুর্ভাগ্যের বিষয়, দুই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে মিল নেই৷ গ্যাডগিল কমিটির সুপারিশ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ১৬০০ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই স্পর্শকাতর ‘ইকো-জোন' বলে ঘোষণা করা হোক৷ এ জন্য পশ্চিমঘাট ইকোলজিকাল কর্তৃপক্ষ গঠন করা দরকার৷ কমিটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কস্তুরিরঙ্গন কমিটির সুপারিশ মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের পরিপন্থী৷ কারণ তাতে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম চালানোর সুযোগ আছে৷ ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে৷
কস্তুরিরঙ্গন কমিটি ঐ এলাকার ৩৭ শতাংশ এলাকাকে ‘ইকো-জোন'-এর অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে৷ সরকার কস্তুরিরঙ্গন কমিটির সুপারিশ গ্রহণে বেশি আগ্রহী৷ কারণ তাদের মতে, জৈব সুরক্ষার নামে মানুষের জীবিকার প্রশ্ন উপেক্ষা করা যায় না৷ পরিবেশগত দিক থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালাকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ জৈব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এলাকা, বনভূমি এবং মানব বসতি এলাকা৷ সংরক্ষিত এলাকায় ‘উইন্ড মিল' নির্মাণে আপত্তি নেই সরকারের৷ বৈশিষ্ট্যগত নিরিখে ৩৯টি রকমফের আছে পশ্চিমঘাট পার্বত্য এলাকায়৷ যেমন জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনভূমি – যার ২০টি কেরালায়, পাঁচটি তামিলনাড়ুতে, দশটি কর্নাটকে এবং চারটি মহারাষ্ট্রে৷
১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শুরু গুজরাট-মহারাষ্ট্র সীমানায় তাপ্তি নদীর দক্ষিণ দিক থেকে৷ আর সেটা গেছে আরব সাগরের উপকূল বরাবর ছয়টি রাজ্যের মধ্য দিয়ে৷ গুজরাট, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও কেরালা৷ এই পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমিতে আছে পাঁচ হাজার বিরল প্রজাতির গাছপালা, কীট-পতঙ্গ ও বন্যপ্রাণী৷ এর মধ্যে ১৭০০ প্রজাতি বিশ্বের অন্যত্র নেই৷ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য প্রচুর বৃষ্টি হয়৷
আদতে কিন্তু প্রকৃত অর্থে পশ্চিমঘাটকে পর্বতমালা বলা যায় না৷ বলা উচিত পার্বত্য উপত্যকা৷ এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কৃষ্ণা-গোদাবরী নদীর জলে ভালো চাষ হয়৷ ধান, বার্লি, আম, কলা, কাঁঠাল, গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ ইত্যাদি৷