1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশা হারিয়ে ফেলছেন আফগান নারীরা

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বিদেশি বাহিনী চলে গেলে, তাঁদের অবস্থা শোচনীয় হবে, মনে করছেন আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মীরা।

https://p.dw.com/p/3pW1U
কাবুলে মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরণ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন। ছবি: Rahman Gul/dpa/AP/picture alliance

সেতারা হাসান হলেন আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মী। তিনি জ্যান টিভি-তে আছেন। এই টিভি চ্যানেলে শুধু নারীরাই কাজ করেন। সেখানে তিনি মেয়েদের দুর্দশার কাহিনি তুলে ধরেন। হাসানের মনে হচ্ছে, আফগানিস্তানে আবার সহিংসতা বাড়ছে। সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনায় বাধা আসছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী কতদিন থাকবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই তাঁর মাথাতে সব চেয়ে খারাপ চিন্তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আফগানিস্তান গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে না তো?

হাসান বলেছেন, ''আমি আশাবাদী হতে চাই। আমি মনে করি, আফগানিস্তানে শান্তি চুক্তি হওয়া দরকার। তা সত্ত্বেও অনেক আফগানের মতো আমি আশা হারিয়ে ফেলেছি। বিশেষ করে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলার সময় সহিংসতা এতটা বেড়ে যাওয়ার ফলে।''

হাসান জানিয়েছেন, তিনি এখন যে প্রোজেক্টে কাজ করছেন, তা সুযোগসুবিধাহীন নারীদের নিয়ে। করোনার পর সরকারি জায়গাগুলি কীভাবে জীবাণুশূন্য রাখা যায় তার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এই নারীদের। তাঁর দাবি, আফগানিস্তানে কোনো নারীই শান্তিতে নেই। বিশেষ করে তাঁরা মনে করছেন, শাসন পরিবর্তন হতে পারে। তা হলে তাঁদের জীবনধারাও বদলে যাবে। মেয়েরা কী করে শিক্ষা পাবে, কেরিয়ার গড়ে তুলবে, দৈনিক কাজ করবে, তা নিয়েই তাঁরা চিন্তিত। তাঁরা চিন্তিত তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও।

'সন্ত্রাসবাদী হামলার ভয়'

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবান ও অ্যামেরিকার মধ্যে চুক্তি হয়। ঠিক হয়, ২০২১ সালের এপ্রিল শেষ হওয়ার আগে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়বে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাহিনীও চলে যাবে। তালেবানও মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে না এবং তারা আলোচনায় বসবে। আন্তর্জাতিক অন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ ছিন্ন করবে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জো বাইডেন এই চুক্তি খতিয়ে দেখছেন এবং আফগানিস্তান নীতি নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানুয়ারির শেষে বলেছেন, তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তাই শান্তি আলোচনায় কতটা ফল হবে তা বলা মুশকিল।

তালেবানের শক্ত ঘাঁটি কান্দাহারে মেয়েদের জিম

বাইডেনকে ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডের নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী পরামর্শ দিয়েছে, তিনি যেন সেনা প্রত্যাহার করার বিষয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু করেন। জোসেফ এর আগে আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর কম্যান্ডার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীও মনে করে, এখন সেনা সরিয়ে নিলে আফগানিস্তান গৃহযুদ্ধের দিকে যাবে। অ্যামেরিকাতেও সন্ত্রাসবাদীরা দেড় থেকে তিন বছরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।

গত সোমবার সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টল্টেনবার্গ বলেছেন, ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত যে, আফগানিস্তান থেকে কখন সেনা সরবে। তাঁর মত হলো, পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেনা সরানো উচিত নয়।

কিন্তু এই ধরনের কথা হাসানকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী যদি এখনই আফগানিস্তান থেকে সরে যায়, তা হলে তালেবান শক্তিশালী হবে। তালেবান ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে। গত শনিবার তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, অ্যামেরিকা যেন চুক্তি মেনে চলে।

হাসান মনে করছেন, পুরো পরিস্থিতি খুবই চিন্তাজনক। আন্তর্জাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে শান্তি যাতে দীর্ঘস্থায়ী হয় তা নিশ্চিত করতে এসেছিল। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়, মানবাধিকার রক্ষা করতে এসেছিল। তারা চলে গেলে কী হবে তা তিনি ভাবতে পারছেন না। তিনি মনে করেন, সরকারের এখনো আন্তর্জাতিক বাহিনীর সাহায্য দরকার। আর তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি অন্তত আগামী দুই মাসের মধ্যে হবে না।

আফগান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

আফগানিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র হলেন রহমতুল্লাহ আন্দার। তিনি সাবেক তালিবান কম্যান্ডার, যিনি শিবির বদল করেছেন। দুই বছর তিনি মার্কিন জেলে ছিলেন। তারপর থেকে তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তিনি অবশ্য নারীদের নিয়ে হাসানের চিন্তা উড়িয়ে দিয়েছেন। মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''আলোচনার সময় আমরা মেয়েদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখছি। আমরা চাই না, মেয়েরা আবার তাঁদের সব অধিকার হারান। আমরা শান্তি চাই। তবে যে কোনো মূল্যে নয়। আমাদের স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে কোনো সমঝোতা করা হবে না।'' তবে তিনি চান, বিদেশি রাষ্ট্রগুলি যেন এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, যাতে পরিস্থিতি খারাপ হয়।

অ্যামেরিকা কী করবে?

প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও বারাক ওবামার সময় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা ছিলেন লুট। তিনি বলেছেন, আফগান সরকারকে সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাদের রাজনৈতিক দায়িত্বও নিতে হবে।

লুট বলেছেন, ''আফগান সরকারের ভূমিকা নিয়ে আগে আমরা খুব বেশি নজর দিইনি। কিন্তু আফগানিস্তানের ভবিষ্যত আফগানদেরই তৈরি করতে হবে। যাঁরা সরকারে আছেন, যাঁরা সরকারের বাইরে আছেন, তাঁরা একজোট হোন এবং পরিবর্তন আনুন। তাঁর মতে, গত ২০ বছর ধরে আমরা আফগানিস্তানকে সাহায্য করছি।''

কিন্তু হাসান মনে করেন, সরকারের আরো সময় দরকার হবে। তাই ন্যাটোর কাছে তাঁর আবেদন, দয়া করে ছেড়ে চলে যাবেন না। আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ও আফগান মানুষের স্বার্থে আফগানিস্তানে থাকুন। এটা যাওয়ার সময় নয়।

টেরি সুলজ/জিএইচ