ইউক্রেনে আটকেপড়া নাবিকরা নিরাপদ স্থানে
৩ মার্চ ২০২২ইউক্রেনে আটকেপড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের নাবিকেরা এখন নিরাপদ স্থানে আছেন। তাদেরকে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকার কূটনীতিকরা কাজ করছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এক ভিডিও বার্তায় বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘‘পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে, আটকেপড়া জাহাজের নাবিকদের জাহাজ থেকে ইউক্রেনে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন নিরাপদে আছেন। তাদেরকে খুব দ্রুত পোল্যান্ডের ওয়ারশ-তে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘ওই জাহাজে রকেট হামলার ঘটনায় নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ারের মরদেহও নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মরদেহটি দেশে আনার চেষ্টা চলছে।’’
এর আগে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন জানায়, সবার নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নাবিকদের জাহাজেই থাকতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেনের একটি টাগ বোট নাবিকদের জাহাজ থেকে স্থলে নিয়ে যাওয়ার জন্য গেলেও তাদের ইউক্রেনে নামতে অনুমতি দেয়নি শিপিং কর্পোরেশন। এদিকে জাহাজে থাকা ২৮ বাংলাদেশি নাবিকের স্বজনেরা তাদের যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। নিহত হাদিসুর রহমানের পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি করেন। জাহাজে অবস্থানরত ২৮ নাবিকের মধ্যে দুইজন নারী। তারা ভিডিও বার্তায় বার বার তাদের উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। এইসব ভিডিও ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকেও পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ জাহাজটির নেভিগেশন ব্রিজের বিধ্বস্ত অবস্থার ফুটেজও পাঠানো হয়েছে। এই নেভিগেশন ব্রিজেই গোলার আঘাতে হাদিসুর রহমান নিহত হন।
বাংলার সম্মৃদ্ধি জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট মো. আশরাফ উদ্দিন শাওন দুই মাস আগে ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন । তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন," সহকর্মীদের সঙ্গে আজ( বৃহস্পতিবার) আমি কথা বলেছি। ওই জাহাজে এখন নিয়মিত পাওয়ার সাপ্লাই নাই। জরুরি পাওয়ার দিয়ে চলছে। হাদিসুর রহমানের মরদেহ খাওয়া দাওয়া রাখার জন্য যে বড় ফ্রিজ আছে সেখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার সাপ্লাই না থাকায় আর রাখা যাবে না। আর পর্যাপ্ত খাবারের মজুদ থাকলেও সেগুলো আর বেশি দিন খাওয়ার উপযোগী থাকবেনা, পঁচে যাবে। কারণ কোল্ড স্টোরেজে পাওয়ার সাপ্লাই এখন নেই।”
তিনি আরো জানান,"হামলার পর ইউক্রেনের একটি টাগ বোট গিয়েছিলো জাহাজ থেকে নাবিকদের ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ইউক্রেনে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।”
শিপিং কর্পোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান জানান,"আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করছি জাহাজে অবস্থানরত নাবিক এবং এক জনের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার। কিন্তু নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া পর্যন্ত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। আর ইউক্রেনকেও আমরা নিরাপদ মনে করছি না। নাবিকদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।”
তিনি জানান, যুদ্ধের শুরুতেই ২৪ ফেব্রুয়ারি জাহাজটিকে পণ্য না নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা সমস্যার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
তার কথা,"জাহাজে পর্যাপ্ত রসদ থাকলে নাবিকরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তারা মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।”
এদিকে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন,"নিহত হাদিসুরের লাশ দেশে ফিরয়ে আনা নির্ভর করছে যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর। আর যে ২৮ জন এখন জাহাজে আছেন তাদের নিরাপত্তাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।''
এদিকে নিহত হাদিসুরের গ্রাম এখন শোকের বাড়ি। ছেলের মৃত্যুর খবরে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার ছোট ভাই মো. তারেক রহমান কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি । তারাও যোগাযোগ করতে পারেনি। বুধবার রাত আটটার দিকে সর্বশেষ তারা তার ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। এরপর সংবাদমাধ্যমে জাহাজে হামলা এবং হাদিসুরের মৃত্যুর খবর পান।
তিনি বলেন," আমরা এখন যত দ্রুত সম্ভব আমার ভাইয়ের লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।” তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছেন।
আর ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান জানান ওই এলাকা আগে যুদ্ধের ঝুঁকিতে ছিল না ফলে। যুদ্ধ ঝুঁকির কোনো বীমা ওই কারণে করা নাই।
জাহাজে যে নাবিকেরা আছেন তাদের স্বজনরা এখন চট্টগ্রামে শিপিং কর্পোরেশন অফিসে ভিড় করছেন। কিন্তু তারা কোনো সুনির্দষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না। আশরাফ উদ্দিন শাওন নিজেও সেখানে গিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তার কথা,"সঠিক তথ্য না পেয়ে স্বজনদের উদ্বেগ আরো বাড়ছে। এখনো কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি।”
এদিকে রাশিয়া এই ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছে।