ফুটবলে এক স্মরণীয় সন্ধ্যা
২০ নভেম্বর ২০১৩গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার, ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম অথবা মেসুত ওয়েজিলের মতো ‘প্লে মেকার'-কে সঙ্গেই নেননি জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ দলে গোটা আষ্টেক পরিবর্তন করেছিলেন৷ খেলা চলাকালীন ছ'বার বিকল্প খেলোয়াড় নামান, খেলাটা ফ্রেন্ডলি হওয়ার কারণে৷
ব্রিটিশ মিডিয়ায় জার্মান ‘বি'-টিম নামানো নিয়েই যখন কথা উঠেছে, তখন ল্যোভের সেই ‘বি'-টিম প্রমাণ করে দিল, জার্মান জাতীয় ফুটবলের প্রস্তুতির ‘গভীরতা' কতটা৷ বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার মাঠে নেই তো কি হয়েছে? বায়ার্নের টোনি ক্রোস তো আছে৷ সেই সঙ্গে যদি আবার ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েস থাকে...
একক প্লেয়ারদের নাম করে লাভ নেই: গোটা জার্মান দলটা – সেই সঙ্গে ল্যোভ যাদেরই বিকল্প হিসেবে নামিয়েছেন – সকলেই একবার পা মিলিয়ে নেওয়ার পর যেন জয় অভিমুখে কুচকাওয়াজ করেছে৷ অথবা, অন্যভাবে বলতে গেলে, যে যার নিজের ভূমিকা খুঁজে ও বেছে নিয়েছে৷ এক্ষেত্রে ইউলিয়ান ড্রাক্সলারের অপ্রত্যাশিত এবং অনবদ্য ডিফেন্ডিং-এর কথা মনে করা যেতে পারে৷
যে ওয়েম্বলেতে জার্মান দল ১৯৭৫ সাল যাবৎ হারেনি, সেখানে মঙ্গলবারের স্মরণীয় সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন ছিলেন পের মের্টেসাকার: জয়ের গোলটাও তিনিই করেন, কর্নার থেকে বল আসার পর হেড করে৷ মের্টেসাকার বিপক্ষের ক্রিস স্মলিং-কে ছাড়িয়ে আকাশে ওঠেন; এ সম্পর্কে পরে তাঁর উক্তি: ‘‘আমি যে গোলের সামনে এতটা খালি থাকব, ভাবতে পারিনি৷''
অবশ্য সেটাই ছিল এই নতুন-পুরনো মিলিয়ে কিছুটা দিশাহারা ইংলিশ টিমের দুর্বলতা৷ অফেন্সে রুনি-জেরার্ড-কোল কিছু করে উঠতে পারেননি; ওদিকে নতুন প্রজন্মের স্টারিজ-ওয়াকার-লালানা-রাও এখনো তাদের ‘রিদম' খুঁজে পায়নি৷ তবে জার্মান দলের মতোই এই ইংলিশ দলও বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করেছে৷ কাজেই ব্রাজিলে ঠিক এ রকম ওয়াকওভার পাওয়া যাবে মনে করলে ভুল হবে৷
হাই নুন
স্টকহল্মের তথাকথিত ‘স্লাটান' অ্যারেনায় পর্তুগাল-সুইডেন সংঘাত৷ যে কোনো মহাকাব্যের সংঘাতের মতোই সম্মুখসমরটা ছিল সুইডেনের ৩২ বছর বয়সি স্ট্রাইকার-কিংবদন্তি স্লাটান ইব্রাহিমোভিচ – এবং পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে৷ মহাকাব্যের বদলে হলিউডের কোনো ওয়েস্টার্ন ছবির উদাহরণ নিলে বলা যেতে পারে, এ ছিল যেন ফুটবলের দুই টপ গানের মধ্যে ডুয়েল৷
খেলার পাঁচটি গোলের মধ্যে ইব্রাহিমোভিচ করেন দু'টি, রোনাল্ডো তার আগে একটি এবং পরে দু'টি৷ পর্তুগাল বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করে ৩-২ গোলে, অথবা ফার্স্ট লেগ ধরলে অ্যাগ্রেগেটে ৪-২ গোলে৷ পর্তুগালের চারটি গোলই রোনাল্ডোর: ফার্স্ট লেগে হেড করে, ৮২ মিনিটের মাথায়; সেকেন্ড লেগে তিনবার তিনটি চমৎকার পাসে গোল অভিমুখে দৌড় দিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে৷
গোল করার আগে ও পরে রোনাল্ডোর ভাবভঙ্গি অনেকটা পাড়ার মাস্তানদের মতো হলেও, মঙ্গলবারের খেলার পর তিনি কিন্তু গর্ব না করেই বলতে পেরেছেন: ‘‘আমি জানতুম, এই ম্যাচগুলোয় পর্তুগালের আমাকে প্রয়োজন৷ আমি দেখিয়েছি যে, আমি হাজির আছি৷'' খোদ ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন: ‘‘ও পাল্টা-আক্রমণের তিনটি সুযোগ পেলে তিনটি গোল করে৷ এটা ও-ই সবচেয়ে ভালো পারে৷'' আর রোনাল্ডোকে দু'টি অসাধারণ পাস যিনি দিয়েছেন, সেই জোয়াও মুটিনিও বলেছেন: ‘‘আর বলার কি আছে? ও (রোনাল্ডো) হলো বিশ্বের সেরা (খেলোয়াড়)৷''
ফরাসি বিপ্লব
শেষমেষ ফরাসি দলকে অভিনন্দন না জানিয়ে থাকা যাচ্ছে না৷ ফ্রংক রিবেরি ধন্য এই দলটি কিয়েভে গিয়ে ইউক্রেনের কাছে ২-০ গোলে হেরে আসার পর যে রিটার্ন লেগে ৩-০ গোলে জিতে ব্রাজিল যাবার টিকিট করে নিতে পারবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল? কিন্তু কোচ দিদিয়ের দেশঁ দলে কিছু বড় রকমের রদবদল করেন: মামাদু সাখো আর রাফায়েল ভারানেকে সেন্টার ব্যাক হিসেবে আনেন; মাঝমাঠে রাখেন ইওহান কাবাইয়েকে; যোগ করেন উইঙ্গার মাথিউ ভালবুয়েনা এবং স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাকে৷
তা-তেই কাজ হয়ে যায়: বিশেষ করে সাখো একটি গোল করেন এবং খেলার দ্বিতীয় গোলটি ইউক্রেনের তরফে আত্মঘাতী গোল হলেও, বস্তুত সাখোই সেজন্য দায়ি ছিলেন৷ তৃতীয় গোলটি করেন বেনজেমা৷ ফলে একটানা বিশ বছর অংশগ্রহণের পর ফ্রান্সের বিশ্বকাপ থেকে হঠাৎ বাদ পড়ার ফাঁড়া কাটে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)